সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিন্ময়ী মাকে মৃণ্ময়ী রূপে আমরা আরাধনা করি। কিন্তু পটের দুর্গাও পূজিত হন এই বাংলাতেই। বাঁকুড়া, বীরভূম বা মেদিনীপুরের কেউ কেউ পটের দুর্গাকে পুজো করে থাকেন। যদিও পটদুর্গার এই পুজো এখন অনেক কমে এসেছে। বাংলার এই নিজস্ব প্রাচীন চিত্ররীতি ভবিষ্যতে আদৌ বেঁচে থাকবে কিনা তাও অজানা।
একসময় বাংলাতে সবরকম চিত্রশিল্পীদের 'পটুয়া' বলে উল্লেখ করলেও, পটুয়া সম্প্রদায় ছিল আলাদা এক জাতি। এরা মূলত সেই সময় দেবীর দীঘল পট বা চৌকো পট আঁকতেন। এইসব পটে দেবীর লোকায়ত কাহিনি উঠে আসত। তেমনই এক অঞ্চল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জামবনি থানা। বিজরাবাঁধি গ্রামের পানিগ্রাহী বাড়ির পটদুর্গা আজও নিয়ম মেনে পূজিত হন। ছটি পরিবার সম্মিলিত ভাবে এই পুজো করে থাকেন। প্রায় দুশো বছরেরও পুরনো এই পুজো। জানা যায় দুশো বছর আগে দীনবন্ধু পানিগ্রাহীর সময় থেকে এই পটের পুজোর প্রচলন হয়। যদিও সেসময় ওড়িশার জাজপুরে এই পরিবারের বসতি ছিল।
বর্তমানে যে পটে দেবীকে পুজো করা হয় তা অবশ্য ততটাও প্রাচীন নয়। পার্শ্ববর্তী গ্রাম পড়িহাটির শিল্পী রাখহরি দত্ত প্রায় তিন দশকেরও বেশি আগে এই পট এঁকেছিলেন। আগে মাটির দেওয়ালে ছবি এঁকে পুজো করার আচার ছিল। সেই সময় এলাকার গিরিশ শবর, প্রফুল্ল দাস, হরি সিং প্রমুখ শিল্পীরা আগে দেওয়ালে দুর্গা অঙ্কন করতেন। দীর্ঘদিন তা প্রচলন থাকার পর বর্তমানে পটের মধ্যে দুর্গা আঁকা হয়। প্রায় ৭ ফুট উচ্চতা ও ৫ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট এই পট দেওয়াল থেকে ঝোলানো হয়। রেক্সিনের ওপর তেল রং দিয়ে ছবি আঁকা হয়। কাঠের ফ্রেমে আটকে তা দেওয়ালে ঝোলানোর উপযুক্ত করে তোলা হয়। এরপর এই পট ফুল দিয়ে সাজিয়ে পুজো করা হয়। পটের দুর্গার কিন্তু বিসর্জন হয় না। পুজো হয়ে যাওয়ার পর কাপড় ও কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে তা রেখে দেওয়া হয়। পরের বছর এই পটই আবার পুজোয় ব্যবহার হয়।
[তথ্য ঋণ: বাংলার পটের দুর্গা, দীপঙ্কর ঘোষ, আনন্দ]
