সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: হাতে না আছে পঞ্জিকা, না আছে ১৪২৭-এর বাংলা ক্যালেন্ডার। লকডাউনে পাঁজি আর ক্যালেন্ডার ছাড়াই নববর্ষ কাটালেন পুরুলিয়ার বাঙালিরা। তবে এই ইন্টারনেটের যুগে পিডিএফ ফর্মের বাংলা ক্যালেন্ডার ঘুরছে মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপে। সেখানেই দেখে নিচ্ছেন বারো মাসের তেরো পার্বণের সূচি।
কিন্তু তাতে কি আর মন ভরে? নববর্ষের সকালে মিষ্টি কিনতে গেলেই মেলে একটা বাংলা ক্যালেন্ডার। বৈশাখের আগমনে সেই বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে যেন পরিবারে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কিন্তু এবার এই জেলায় যেমন পাঁজি মিলছে না তেমনই হাতে পাওয়া যাচ্ছে না নতুন বাংলা বছরের ক্যালেন্ডার। সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা স্নাতকোত্তরের ছাত্রী তথা ছৌ শিল্পী মৌসুমি চৌধুরি বলেন, “আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডারটা ভীষণই প্রয়োজন। কারণ এই জেলায় গ্রামীণ মেলায় ছৌ নাচের অনুষ্ঠান থাকে। আর ওই মেলাগুলো সব বাংলা মাসের তারিখকে সামনে রেখে হয়। ফলে হাতে ক্যালেন্ডার না পেলে খুব সমস্যা হয়ে যাবে।” আসলে মোবাইলে পিডিএফ ফর্মে যতই বাংলা ক্যালেন্ডার ঘুরুক না কেন নতুন বাংলা বছরের পয়লা দিনে ওই ক্যালেন্ডারের ঘ্রাণই যেন মনে করিয়ে দেয়, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’।
[ আরও পড়ুন: কাঁটাতারের ওপারে ঝরছে ধান, জমিতে না যেতে পেরে ক্ষোভে রাস্তা অবরোধ কৃষকদের ]
এই ক্যালেন্ডার ও পাঁজি বেচে এই সময় বাড়তি আয় করতেন পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের হুটমুড়া ও কুষ্ঠুকা গ্রামের বাসিন্দা যথাক্রমে শেখ জাহিদ ও শেখ আহমেদ। তাদের কথায়, “বাসস্ট্যান্ড, স্টেশনে ঘুরে ঘুরে প্রচুর বাংলা ক্যালেন্ডার ও পঞ্জিকা বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন সব বন্ধ।” বিক্রি করবে কোথায়? পাঁজি বা বাংলা ক্যালেন্ডার যে পুরুলিয়ায় আসেইনি। শহর পুরুলিয়ার অন্যতম বড় পুস্তক বিক্রেতা অসীম কর বলেন, “বহু মানুষ ফোন করে করে পঞ্জিকা খুঁজছেন। কিন্তু পাব কোথায়? একটা পাঁজিও কলকাতা থেকে আসেনি।” সাধারণভাবে এই প্রান্তিক জেলায় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঁজি আসতে শুরু করে। কিন্তু করোনার সংক্রমণে লকডাউনে সব বন্ধ। ঝালদা পুর শহরের বাসিন্দা পুরোহিত শঙ্কু চক্রবর্তী বলেন, “নববর্ষে হাতে পাঁজি নেই। ভাবতেই পারছি না। একেমন পয়লা বৈশাখ!” ‘এ যে একলা বৈশাখ।’ বলছেন সোশাল ডিসট্যান্সিং মানা পুরুলিয়ার বাঙালি।
ছবি- সুনীতা সিং
[ আরও পড়ুন: কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি, হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরলেন কালিম্পংয়ের ৯ বাসিন্দা ]
The post লকডাউনের জেরে বাজারে অমিল বাংলা ক্যালেন্ডার, নির্ঘণ্ট দেখতে মোবাইলেই ভরসা বাঙালির appeared first on Sangbad Pratidin.
