শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: বিয়ের পাকা দেখা সারা। উভয়পক্ষের পরিবারের সম্মতিতে দেনাপাওনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল। অথচ রহস্যজনকভাবে বুধবার সাতসকালে সীমান্তের কাঁটাতারের এপাড়ের আমগাছে মিলল প্রেমিক-প্রেমিকার গলায় দড়ি পেঁচানো ঝুলন্ত দেহ। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের সীমান্তবর্তী নওদা পঞ্চায়েতের পিরোজপুর এলাকার ঘটনা। জানাজানি হতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গ্রামবাসী মহলে।
এদিন সকালে হঠাৎ এ হেন অস্বাভাবিক দৃশ্যটি প্রথম নজরে আসে সীমান্তের কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতে আসা কৃষকদের চোখে। ঘটনাস্থলে ক্রমেই ভিড় জমে যায় স্থানীয় লোকজনদের। খবর পেয়ে হেমতাবাদের পুলিশ সেই আমগাছের ডালে দড়িতে ঝুলে থাকা হবু বরকনের মৃতদেহ উদ্ধার করে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত দু’ কিলোমিটার দুরত্বে কিশোরীর বাড়ি। মৃতা নাবালিকা নাম মেহেরা জুন (১৬)। হেমতাবাদের রামপুর এলাকায় বাড়ি এবং মৃত যুবক জসিমউদ্দিন আহমেদ (১৮)। কালিয়াগঞ্জের ভান্ডার পঞ্চায়েতে শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা। বাবা প্রয়াত। বাড়িতে মা ও তিন ভাই। কৃষিকাজ প্রধান জীবিকা।
এদিন মৃত যুবকের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, বিয়েতে প্রথমে দু’পক্ষ রাজি ছিল ঠিকই। সেই অনুযায়ী দানমোহর অনুষ্ঠানও করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে হঠাৎ জানা যায়, মেয়ের ঘাড় বাঁকা। এই অবস্থায় ছেলের পরিবার কার্যত বেঁকে বসেন। যদিও তা সত্বেও ওই নাবালিকাকে বিয়ে করতে অনড় ওই তরুণ।আর তাই হয়ত কিশোরী প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় পাগলের মতো ঘুরেফিরে বেড়াত বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে দাবি।
[আরও পড়ুন: অন্যরূপে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান! স্কুলে রাঁধলেন ভাত-মাংস]
প্রতিবেশী কাশিম মণ্ডল বলেন,”মেয়ের বয়স কম,তার উপরে শারীরিক অসুস্থ। এইজন্যই পরিবার রাজি না হওয়ায় সম্ভবত দু’জনই সারাজীবনের জন্য নিজেদের শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।” মৃতের দাদা মুসলিমুদ্দিন আহমেদ অবশ্য অভিযোগ, “বিয়ে ঠিক করার সময় মেয়ের সম্পর্কে সবকিছু গোপন না করলে হয়ত অকালে এভাবে মরতে হত না।” অন্যদিকে মৃতা কিশোরীর কাকা কিবরিয়া চৌধুরীর দাবি, “গত চার মাসে আগে মেয়ে বাড়ি পালিয়ে যায়। তারপর ছেলের বাড়ি থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর সালিশি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল মেয়ের বয়স আঠারো বছর হলে বিয়ে দেওয়া হবে। সেইসময় দু’পরিবার রাজি হয়ে যায়। সেই অনুযায়ী বিয়ের দান-দেনা পাওনায় হয়ে যায়। কিন্তু তারপর গত দু’ দিন আগের সন্ধ্যায় আচমকা ছেলেমেয়ের হেমতাবাদের বাড়িতে চলে আসে। সেখানেই থাকতে শুরু করে।গত রাতে খাওয়া দাওয়াও সারে দুজনে। তারপর গভীর রাতে হয়তো বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় দু’জনে। তারপর সকালে মৃত্যুর ঘটনা জানতে পারি।”
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, দু’জনেই আত্মহত্যা করে। এদিন বিকালে হেমতাবাদ থানার আইসি অভিজিৎ দত্ত বলেন,”অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে মৃতদের পরিবারের তরফে কোন অভিযোগ জমা পড়লে খতিয়ে দেখা হবে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।”
