সুরজিৎ দেব, গঙ্গাসাগর: শেষ হল চলতি বছরের গঙ্গাসাগর মেলার পুণ্যস্নান। আজ বুধবার সকাল ৬টা ৫৮মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্নানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এবার মোক্ষলাভের আশায় গঙ্গাসাগরে এক কোটি ১০লক্ষ পুণ্যার্থী ডুব দিয়েছেন। বুধবার মেলা অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা জানান, রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি জানান, পুণ্যস্নানের সময়সীমা শেষ হলেও এখনও তীর্থযাত্রীরা গঙ্গাসাগরে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মুহূর্তে নজরদারি ও নির্দেশমতো বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। সেজন্যই গঙ্গাসাগরে স্নানপর্ব সুশৃঙ্খল ও নিরাপদে শেষ করা সম্ভব হয়েছে।
মেলায় এসে অসুস্থ হয়ে মোট ছয় তীর্থযাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের মধ্যে চারজনই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। বুধবার মৃত্যু হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ৮৫ বছরের নাথা নামক এক পুণ্যার্থীর। এ পর্যন্ত মোট ৯ জন অসুস্থ তীর্থযাত্রীকে এয়ারলিফটের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এ বছর সাগরদ্বীপের রাস্তায় ১০০টি সৌরবিদ্যুৎচালিত আলোর ব্যবস্থা করা হয়। মেলা প্রাঙ্গণ দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে চারটি প্লাস্টিক বোতল কাটার মেশিনও বসানো হয়। সমুদ্রতট পরিষ্কার রাখতে তিন হাজারেরও বেশি সৈকতপ্রহরী নিযুক্ত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়েছেন, মেলাকে পরিবেশবান্ধব রাখতে শৌচালয় ও ডাস্টবিনগুলিতে প্রায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার লিটার পরিবেশ বান্ধব জীবাণুনাশক হার্বাল স্প্রে করা হয়েছে। ৯ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ থেকে প্রায় ১১২৩ মেট্রিক টন পচনশীল ও অপচনশীল আবর্জনা নিষ্কাশন করা হয়েছে। সাগর মেলায় বিপুল আবর্জনা রাশিকে তিনটি প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে বিনষ্ট করে তটভূমির পরিবেশকে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে।
বিভিন্ন অপরাধমূলক কারণে ৮৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মেলায় এসে হারিয়ে যাওয়া ৬৬২৭ জনকে উদ্ধার করে পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিন রাজ্যের মানুষজনও এখানে এসে সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, "আসলে বিরোধীরা মেলার গৌরব নষ্ট করতে চেষ্টা করছেন।" আগামিকাল বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হবে গঙ্গাসাগরের পার সাফাই অভিযান।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায়, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা, সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া, পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। এছাড়াও ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নীলিমা মিস্ত্রি বিশাল, গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তথা সহ-সভাধিপতি শ্রীমন্ত মালি, মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার, রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য শুভাশিস চক্রবর্তী এবং জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা ও সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও।