দেবব্রত মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সমুদ্রের নোনা জলে মিশে যায় চোখের জল। প্রতীক্ষা শেষ হয় না ষাটোর্ধ্ব এক মহিলার। অশক্ত শরীরে দুই হাতে দুটি ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়ান তিনি। মাত্র একমাসের ব্যবধানে সমুদ্র কেড়ে নিয়েছে স্বামী ও সন্তানকে! তাঁরা কি আর বেঁচে আছেন? উত্তর মেলে না।
[লাগাতার বৃষ্টিতে দিঘায় ভাঙল বিশ্ববাংলার লোগো]
ভরাবর্ষায় বাজার ছেয়ে গিয়েছে ইলিশে। বাড়তি রোজগারে মৎস্যজীবীদের ঘরে আনন্দের হাট। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের যোগমায়া দাসের জীবনে তখন শুধুই অন্ধকার। তাঁকে দেখে মুখে কাপড় গুঁজে সরে পড়ছেন অন্যরা। স্বামী ও সন্তান হারানো মহিলার সামনে দাঁড়ানোর সাহস নেই কারও। যাঁরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যান, তাঁরা সবাই ফিরে আসেন না। এটাই প্রকৃতির অলিখিত নিয়ম। গত ১৩ জুন কাকদ্বীপ থেকে এম ভি কন্যামাতা ট্রলারে চেপে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা। কেঁদো দ্বীপের কাছে ডুবে যায় ট্রলারটি। উত্তাল সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিলেন ১০ জন মৎস্যজীবী। পরে মৃতদেহ পাওয়া যায় তিনজনের। বাকিদের এখনও কোনও খবর নেই। নিখোঁজ যোগমায়াদেবীর স্বামী মদন দাসও। বাবার আর ফিরবে না, মেনে নিয়েছেন তিন ছেলে। পারলৌকিক কাজও করেছেন ফেলেছেন। কিন্তু, সমুদ্রে যে যেতেই হবে! তুলে আনতে হবে সোনালি ফসল! না হলে পেট চলবে কী করে! পেটের টানে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন যোগমায়া দাসের তিন ছেলে। স্রোতের ঘূর্ণিপাকে আবার সব ওলটপালট। দুই ছেলে ফিরলেও ছোটটি নিখোঁজ। গত সোমবার তিন ট্রলার ডুবে যায় বঙ্গোপসাগরে। একটিতে ছিলেন পানু দাস। যোগমায়া দাসের ছোট ছেলে।
কাকদ্বীপের অক্ষয়নগরে বাড়ি যোগমায়াদেবীর। তাঁর ছোট মেয়ে মামনি দাস বলেন, ‘বাবার পারলৌকিক কাজ হয়েছে এক মাস। দাদা এখনও নিখোঁজ। ওই ট্রলারের যে কয়েকজন বেঁচে ফিরেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়ার সময় ইঞ্জিন রুমেই আটকে যান দাদা। বাবা ও দাদার শোকে পাগলের মতো অবস্থা মায়ের।’ বেঁচে ফেরা পানু দাসের ভাই সুবলবাবু আর সমুদ্রে যেতে চান না। বলছেন, ‘বাবা ও ভাই গেল। সমুদ্রের দিকে তাকালেই দু’জনের ছবি ভেসে আসে।’
[ পোস্ট-ডক্টরেট করতে বিদেশে পাড়ি দরজি দম্পতির ছেলের]
The post স্বামীর পর সমুদ্রের গ্রাসে ছেলেও, তীরে বসে শুধুই অপেক্ষা কাকদ্বীপের যোগমায়া দাসের appeared first on Sangbad Pratidin.
