ধীমান রায়, কাটোয়া: চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কষ্টটা যে কী, তা ভাল করেই জানেন কাটোয়ার গৌতম দাস। জাল টেনে সংসার চালাতেন বাবা। তারমধ্যেই চলত তিন সন্তানের পড়াশোনা। আজ কলম আছে তো কাল খাতা নেই। অভাবের এই ছবি এখনও চোখে ভাসে গৌতমবাবুর। সেই অভাব কাটিয়ে আজ শিক্ষকতাকে পেশা করতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু ফেলে আসা অভাবের ছবিকে ভুলতে পারেননি। তাই অতীতের দারিদ্র্যের কথা মাথায় রেখে দুঃস্থ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ঠিক হয়েছে, বছরের অন্তত দু’মাসের বেতন তিনি দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য ব্যয় করবেন।
বছর আটত্রিশের গৌতম দাসের বাড়ি কাটোয়ার পাঁচঘড়া গ্রামে। স্থানীয় ন’পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। পড়াশোনা শেষ করে ছোটখাটো ব্যবসা করছিলেন। সম্প্রতি শিক্ষকতার চাকরিটি পেয়েছেন। বাড়ির বড় ছেলে গৌতম দাস। দায়িত্বও বেশি। স্ত্রী, দুই সন্তান ছাড়াও বাবা-মা, দু’ভাই নিয়ে বেশ বড় সংসার। মেজোভাই সম্পদ দাস কলেজের অশিক্ষক কর্মী। ছোটভাই উত্তমও পড়াশোনা করছেন। গৌতমবাবুর বড় ছেলে সাহিত্য অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট আদিত্য চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। পারিবারিক সূত্রে, গৌতমবাবুদের কোনও জমিজমা নেই। বাবা নবকুমার দাস জনমজুরি করে ও পুকুরে জাল টেনেই সংসার চালিয়ে এসেছেন। এখন দু’ভাইয়ের কাঁধে সংসারের দায়িত্ব। বাবা বাড়িতেই থাকেন। কিন্তু ফেলে আসা দিনগুলিতে যে অভাবের টানাপোড়েন তাঁদের সংসারে ছিল, তা তিনি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি। তাইতো নিজে থেকেই দুস্থ ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বলেছেন, ‘বাবা জাল টানার কাজ করে আমাদের বড় করেছেন। আমরা অভাবের মর্ম বুঝি। অভাবি পড়ুয়াদের জন্য যদি এটুকু করি তাতে আমার সংসারে টান পড়বে না।’ গৌতমবাবুর স্ত্রী পিয়ালীদেবী বলেন, ‘আমার স্বামীর এই সিদ্ধান্তে পরিবারের সবার সমর্থন রয়েছে।’ স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তা অসিতবরণ দত্ত বলেন, ‘গৌতম ছোট থেকেই পরোপকারি। উনি আমাদের গর্ব।’
[দু’দিন ধরে দাউ দাউ জ্বলছে জামুরিয়ার কয়লা খনি, আতঙ্কে বাসিন্দারা]
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাটোয়ার রবীন্দ্রভবনে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। আয়োজক ছিল স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠন। ওই সংগঠনের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই যুক্ত রয়েছেন গৌতমবাবু। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন কাটোয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সন্দীপ চৌধুরি, কাটোয়ার মহকুমা শাসক সৌমেন পাল-সহ অন্যন্যরা। সেখানেই গৌতমবাবু দুস্থ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। একমাসের বেতন দিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ১৯ জন দুস্থ পড়ুয়ার হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন। পাশাপাশি সংগঠনের কাছেও একমাসের বেতন জমা দেন। প্রতিবছর এভাবেই তিনি সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে দুস্থ পড়ুয়াদের সাহায্য করে যাবেন। এই অঙ্গীকারও করেন।
[ঘরে আরও পাঁচ সন্তান, সদ্যোজাত কন্যাকে ঝোঁপে ফেলে চম্পট মা-বাবা]
The post অভাবের স্মৃতি টাটকা, দুঃস্থ পড়ুয়াদের দু’মাসের বেতন দান শিক্ষকের appeared first on Sangbad Pratidin.
