সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সরকারি চাকরি পেয়েছে স্ত্রী। পাছে হাতছাড়া হয়ে যায়। এই আশঙ্কায় তাঁর ডান হাতটিই কেটে দেয় স্বামী। কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামের এই ঘটনাকে ‘অসুস্থ মানসিকতা’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় (Leena Gangopadhyay)। মঙ্গলবার তিনি এবং মহিলা কমিশনের কিছু সদস্য আহত নার্সের সঙ্গে দেখা করছেন। এদিকে নার্সের স্বামীর হদিশ এখনও না পেলেও তাঁর শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার থেকেই তৎপর হয়েছে মহিলা কমিশন। ইতিমধ্যেই সুয়ো মোটো হয়ে গিয়েছে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে ফোনে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, অভিযুক্তকে ধরার ক্লু পাওয়া গিয়েছে বলে তিনি শুনতে পেয়েছেন। সে বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। পাশাপাশি আহত নার্স রেণু খাতুনের সরকারি চাকরিটি যেন থাকে সেই চেষ্টা করবেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গেও কথা বলা হবে।
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “কোনও সুস্থ লোক নিশ্চয়ই এটা করবে না। নিশ্চয়ই এটা আগেও বোঝা গিয়েছিল। মেয়েটির দিক থেকে যেটা বলার ছিল, আগে কেন এটা নোটিস করেনি বা আগে কেন প্রতিবাদ করেনি এটাও একটা প্রশ্ন। দিনের শেষে যাঁর লড়াই তাঁকে তো লড়তে হয়। তাঁরই নোটিস করা উচিত ছিল। এমন নয় যে হঠাৎ আজকেই আমি হাতটা কেটে দিলাম। এটাকে আমি একটা মান্যসিক ব্যাধি বলব। এটা তো সুস্থতা নয় তো এটা নিশ্চয়ই অন্য কোনওভাবে তাঁর নজরে ছিল। তো সেটা কেন নোটিস করেনি বা করে বলতে পারেনি। ভয় পেয়েছে বা কিছু কোনও কারণে আমরা ডিটেল এখনও জানি না। অনুমান করছি যে বলে উঠতে পারেনি।”
[আরও পড়ুন: সভার মাঝে অসুস্থ কিশোরী, বক্তৃতা শেষ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা মমতার, হাত বুলিয়ে দিলেন মাথায়]
এমন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলেই মনে করেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। না হলে মানুষের শিক্ষা হবে না। “আমরা তো বিভিন্ন ফিল্ডে কাজ করি। অনেক মেয়ে রোজ কাজ করতে বের হচ্ছে, সবার ক্ষেত্রে তো এমন ঘটনা ঘটে না। এমন ঘটনা আমাদের লড়াইকে অনেকটা পিছিয়ে দেয়। সেই কারণেই প্রথম কারও এমন অসুস্থতা দেখে সেটাকে নোটিস করলে ভাল। প্রয়োজনে ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।”
উল্লেখ্য, কেতুগ্রামের (Ketugram) কোজলসা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি রেণু খাতুন নামে ওই নার্সের। তাঁর বাপেরবাড়ি কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামে। চিনিসপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হকের পাঁচ মেয়ে ও তিন ছেলে। ছোট মেয়ে রেণু। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কোজলসা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ শেখের একমাত্র ছেলে শের মহম্মদ শেখ ওরফে শরিফুলের সঙ্গে রেণুর বিয়ে হয়। রেণু নিজে নার্সিংয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স পদে চাকরি করছিলেন। এরপর সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা দিয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। কয়েকদিন আগেই চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়ে প্যানেলভুক্ত হয়ে যান। শুধু চাকরিতে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তার আগেই ঘটে বিপত্তি। সরকারি চাকরি পেলে স্ত্রী হাতছাড়া হয়ে যাবে। এই আশঙ্কার তাঁর ডান হাত কেটে দেয় শরিফুল। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত।
শরিফুলে হদিশ না এখনও পেলেও রেণুর শ্বশুর সিরাজ শেখ ও শাশুড়ি মেহেরনিকা বিবিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে চাকতা বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমা আদালতে পাঠানো হয়েছে। যদিও ধৃতদের দাবি শরিফুল ওরফে শের মহম্মদ শেখ যখন এই ঘটনা ঘটায় তখন তাঁরা আলাদা ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। গরমে পাখা চলছিল। তাই ঝগড়া বা চিৎকারের আওয়াজ কানে আসেনি।