দেব গোস্বামী, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা উদ্বোধনের আগেই বড়সড় অস্বস্তিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শান্তিনিকেতনের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে জাতীয় পরিবেশ আদালতের চূড়ান্ত ভর্ৎসনার মুখে পড়ল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার কর্মসচিব ও বীরভূমের জেলাশাসককে ২০২৬ সালের ২১ জানুয়ারি সশরীরে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার, শুনানিতে আদালত বীরভূম জেলা প্রশাসন ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও জরিমানার অর্থ পরে জানানো হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। নির্ধারিত দিনে রিপোর্ট সহ সশরীরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দুই কর্তৃপক্ষকে। এ বিষয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, “কঠিন ও তরল বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন সংক্রান্ত ব্যবস্থা সম্পর্কে আদালত রিপোর্ট চেয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়নি। এর ফলেই আদালত কড়া অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে।"
শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার দূষণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ২০১৬ ও ২০১৮ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে দুটি মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। ওই মামলাগুলিতে ২০১৭ ও ২০২০ সালে আদালত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থায়ী ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিল। অভিযোগ, সেই নির্দেশ আজও কার্যকর হয়নি। পরবর্তীতে পরিবেশবিধি না-মানার অভিযোগে জাতীয় পরিবেশ আদালত বিশ্বভারতী ও রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে। গত ২২ অক্টোবর আদালত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকারকে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা জমা পড়েনি। উল্লেখযোগ্যভাবে, শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাস ও বাইরে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা নিয়েই নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত।
এই প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, “আদালতের নির্দেশ হাতে এলে তা যথাযথভাবে মান্যতা দিয়ে পালন করা হবে।” বোলপুর শান্তিনিকেতনের স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুধু পৌষমেলার সময় নয়, সারা বছরই বিশ্বভারতী সংলগ্ন এলাকায় কঠিন ও তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থাই নেই। ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।"এই পরিস্থিতিতেই ক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও বীরভূম জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে কড়া অবস্থান নিতে চলেছে। আদালতের তলব নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি বীরভূমের জেলাশাসক ধবল জৈন।
