সুমিত বিশ্বাস: এক একটা করে ১০৮ টা। আর ১০৮টা করে সারা রাজ্যে মহাঅষ্টমীতে পদ্মের চাহিদা এক কোটিরও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক পদ্মের চাহিদায় ভিলেন এখন বৃষ্টি, অতিবর্ষন! যার জেরে এরাজ্যের দ্বিফলক পদ্মে বেশ টান পড়েছে। তাই দাম কার্যত আকাশছোঁয়া। ফলে মহাঅষ্টমীতে দশভুজাকে ১০৮ টা পদ্মে ‘কমলকামিনী’র রূপ দিতে এখন ভরসা ওড়িশার পদ্ম।
[আরও পড়ুন: ঘরে ফিরল জওয়ানের কফিনবন্দি দেহ, শোকস্তব্ধ পরিবারের পাশে স্থানীয় বিধায়ক]
শুক্রবার দুপুর থেকেই ওড়িশার সম্বলপুরের এই এক ফলক পদ্ম রাজ্যের বাজারে ঢুকছে। এদিনই এক একটির দাম ছয় থেকে সাত টাকা ছুঁয়ে ফেলেছে। কলকাতা মল্লিকঘাট ফুলবাজার থেকে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের বাজারে গেলে দাম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, এ রাজ্যের দ্বি–ফলক পদ্ম মহাষষ্ঠীতেই দশ টাকা ছুঁয়েছে। ফলে ওড়িশার পদ্মের দিকেই ঝুঁকছেন উদ্যোক্তারা। তাই এদিন সকাল থেকেই
পদ্ম সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন পুজো কমিটিগুলি।
সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, “এবার প্রকৃতির খামখেয়ালিপনাতেই রাজ্যের পদ্মের উৎপাদন কম। প্রথমে খরার মত অবস্থা। তারপর অতিবর্ষণ। ফলে মহাঅষ্টমী যত এগিয়ে আসছে, দাম
ততই বাড়ছে। তবে ওড়িশার সম্বলপুরের পদ্ম বাজরে ঢুকছে। ওই পদ্মই চাহিদা মিটিয়ে দেবে।” পদ্মের মত ঝুরো ফুলের দামও বেশ চড়া। সপ্তমী থেকে দাম আরও বাড়বে। শুক্রবারই জুঁই ফুলের দাম কেজি প্রতি চারশ টাকা ছুঁয়েছে, বেলির দামও তিনশ টাকা কেজি, রজনীগন্ধা কেজি প্রতি দুশো, অপরাজিতা কেজি প্রতি আশি, দোপাটি পঞ্চাশ, গাঁদা কেজি প্রতি তিরিশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের একেবারে গোড়া থেকে টানা বর্ষণে জলাশয়ে থাকা পদ্ম নুইয়ে পড়েছে। এমনকি জলে ভেসে পচেও গিয়েছে। ফলে হিমঘরে সেভাবে সংগ্রহ করে রাখা যায়নি। এ রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় ফুল রাখার যে একমাত্র
হিমঘর রয়েছে, সেখানে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রক যন্ত্র নেই। তাই পদ্ম রাখা যায় না। ফলে পুজোর জন্য প্রায় এক মাস আগে থেকে সংগ্রহ করা পদ্ম বহুমুখী হিমঘরে আলু, সবজির সঙ্গে থাকায় এবার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাংলার পদ্ম এরাজ্য-সহ ঝাড়খণ্ড এমনকী বিদেশের কয়েকটি পুজোর চাহিদা মেটায়।
[আরও পড়ুন: মহানন্দায় নৌকোডুবিতে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, এখনও নিখোঁজ বহু]
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের পদ্ম চাষি মুকুন্দ নায়ক, অজিত মণ্ডল বলেন, “পুজোর জন্য ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে কুড়ি–পঁচিশ দিন আগে থেকে পদ্ম কিনতে শুরু করেন। না হলে এত বিপুল সংখ্যক পদ্মের চাহিদা মেটানো ভীষণই মুশকিল হয়ে যায়।
সেইসময় আমরা এই পদ্মের দাম পায় এক একটি দু’থেকে তিন টাকা। কিন্তু এবার আমরা বৃষ্টিতে আগের মত পদ্ম তুলে রাখতে পারিনি। বৃষ্টিতে বহু পদ্ম নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” এ রাজ্যে হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া এমনকী পুরুলিয়াতেও এখন পদ্ম চাষ হচ্ছে। চাষ হচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাতেও। তা সত্ত্বেও অকালবর্ষণে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে। যার জেরে দুর্গাষ্টমীতে পদ্মের জোগানে টান পড়েছে।
ছবি: অমিত সিং দেও।
The post অতিবৃষ্টিতে বঙ্গে আকাল পদ্মের, চাহিদা মেটাতে ওড়িশা থেকে ফুল আমদানি appeared first on Sangbad Pratidin.
