ধীমান রায়, কাটোয়া: তিনি নিজে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। সারাদিন তাঁত বুনেই সময় কেটে যায়। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার কাছে আদর্শ এক ব্যক্তিত্ব।তার মতে মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পগুলি রাজ্যবাসীর সুদিন এনে দিয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পগুলিকেই ডিজাইন হিসাবে বেছে নিয়েছেন কাটোয়ার ঘোড়ানাশ গ্রামের তাঁত শিল্পী জগবন্ধু দালাল। তাঁর নিখুঁত হাতের কাজে মসলিন কাপড়ের ওপর ফুটে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিকৃতি। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা রাজ্যের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পগুলি।
মুখ্যমন্ত্রীর নিজের অত্যন্ত প্রিয় বাংলার তাঁতের শাড়ি। তাকে সাদা শাড়িতেই আজীবন দেখে আসছেন আপামর দেশবাসী। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পড়নে সাদা তাঁতের শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চটি, চোখে চশমা, নমস্কারের ভঙ্গিমায় দাড়িয়ে রয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পুর্ণাবয়ব প্রতিকৃতি নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন জগবন্ধুবাবু। পাশাপাশি সুতো দিয়েই শাড়ির উপর লেখা হয়েছে তাঁর বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য প্রকল্প গুলির নামও। যেমন ‘লক্ষীর ভাণ্ডার’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘সবুজ সাথী’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘খাদ্যসাথী’ ইত্যাদি।
জগবন্ধু দালালের কথায়, “আমি রাজনীতি করি না। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আমার ভীষন ভালো লাগে। তিনি মানুষের জন্য অনেক কিছু করছেন। এখনও করে চলেছেন। তাই তাই প্রতি অনুরাগ থেকেই এই শাড়ি আমি বুনেছি। যদি সুযোগ পাই তাহলে নিজের হাতে দিদির হাতে এই শাড়ি তুলে দিতে চাই।” জগবন্ধুবাবু জানান, দৈনিক গড়ে ১২ – ১৩ ঘন্টা করে তিনি তাঁতের কাজ করেন। আর এই শাড়িটি বুনতে তার সময় লেগেছে ৩২ দিন।
[আরও পড়ুন: ‘না নিজেরা করবে, না অন্যদের করতে দেবে’, রেলের অনুষ্ঠান থেকে বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ মোদির]
ঘোরানাশ গ্রামের বাসিন্দা তরুণ তাঁতশিল্পী জগবন্ধু দালাল(৩০)। বাবা গণপতি দালালও একজন তাঁতশিল্পী। বাবার কাছেই সেই ১৫ বছর বয়স থেকে তাঁতের কাজের শিক্ষা জগবন্ধুর। তাঁত বুনেই তাঁদের সংসার চলে। বাড়িতে রয়েছেন বাবা, মা, স্ত্রী। স্ত্রী প্রতিমাদেবীও তাকে তাঁতের কাজে সাহায্য করেন। দামি একটি মসলিন কাপড়ের উপর তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবয়ব ফুটিয়ে তোলার এই কাজ তিনি মাসখানেক আগে শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার শাড়ি বোনা শেষ করেছেন জগবন্ধুবাবু। তিনি জানান, যে শাড়ির উপর নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, এমনিতে সাধারণ তাঁতের কাজে ওই শাড়ি বুনতে দিন দুই-তিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ও প্রকল্পগুলির নাম লেখা এই শাড়ি বুনতে সময় লেগেছে একমাস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রতিকৃতিতে নীল পাড় সাদা শাড়ি, হাওয়াই চটি, হাতে ঘড়ি, চোখে চশমা সবই সূক্ষভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
জগবন্ধুবাবু বলেন, “আমার একটাই তাঁতযন্ত্র। তাই একটা কাজ শেষ না করলে অপর একটা শুরু করা সম্ভব নয়। তাই এই একটিই শাড়ির কাজ টানা ৩২ দিন ধরে করে যেতে হয়েছে। তারপর শেষ হয়েছে। যদিও এই শাড়ি আমার বিক্রি করার ইচ্ছা নেই। তবে বিক্রি করলে অন্তত ২২ হাজার টাকা দাম হওয়া উচিত। যদি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে সরাসরি এই শাড়ি তুলে দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাকে এই শাড়ি আমি উপহার দিতে চাই। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে আসব যেন তিনি আমাদের মতো তাঁতশিল্পীদের জন্য আরও কিছু করেন।”
দেখুন ভিডিও:
