স্টাফ রিপোর্টার: বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা পরীক্ষায় প্রায় পাস৷ বাংলার তুলাইপাঞ্জি ও গোবিন্দভোগ চালও৷ রেজাল্ট বেরনোটাই শুধু বাকি!
কিন্তু ঝুলে রইল ‘বাংলার রসগোল্লা’র ভাগ্য৷
সোমবার চেন্নাই থেকে আসা পরীক্ষক দলের সামনে দিনভর ‘জিআই’ ট্যাগ অর্জনে শুনানির এটাই সংক্ষিপ্তসার৷
বাংলার নিজস্ব পাঁচ উৎপাদনের ‘জিআই’ বা ‘জিওলজিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন’ ট্যাগ পেতে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ প্রথম চারটিকে নিয়ে সমস্যা খুব একটা কখনওই ছিল না৷ গোল বেধেছিল পাঁচ নম্বর অর্থাৎ রসগোল্লাকে নিয়ে৷ গোল বাধার কারণ বাংলার পাশাপাশি ওড়িশারও এই রসগোল্লার পেটেন্ট দাবি! সেই দ্বন্দ্ব মেটাতেই এদিন চেন্নাই থেকে ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি’-র আধিকারিকরা এসেছিলেন কলকাতায়৷ তাঁদের সামনে বাংলার হয়ে সওয়াল করতে রাজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব রিনা ভেঙ্কটরমণের নেতৃত্বে হাজির হয়েছিলেন একঝাঁক বিজ্ঞানী ও আধিকারিক৷ এঁদের মধ্যে ছিলেন দফতরের যুগ্মসচিব অরবিন্দকুমার মিশ্র, নোডাল অফিসার মহুয়া হোমচৌধুরি ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি-সহ একাধিক দফতরের কর্তা৷ বাংলার দাবির পক্ষে একের পর এক তথ্যপ্রমাণ দাখিল করেন তাঁরা৷ সে সময়ই তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, সীতাভোগ, মিহিদানা, গোবিন্দভোগ ও তুলাইপাঞ্জি ‘জিআই’ স্বীকৃতি পাওয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ কিন্তু বাংলার রসগোল্লা নিয়ে এখনও কিছু প্রশ্ন রয়েছে৷ সেই প্রশ্ন মূলত ‘রসের ঘনত্ব’ সংক্রান্ত৷ সেগুলির সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত পেটেন্ট দেওয়া সম্ভব নয়৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই এবিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷
রাজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতর সূত্রে খবর, কোনও বস্তুর পেটেন্ট বা ‘জিআই’ ট্যাগ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ দাখিল করার পর যদি দেখা যায় তা সন্তোষজনক অর্থাৎ সব শর্ত পূরণ করছে, তবে ওই বস্তুর ‘জিআই’ ট্যাগ দেওয়ার প্রসঙ্গটি ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি’-র ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়৷ চার মাসের মধ্যে এ নিয়ে কোনও আপত্তি জমা না পড়লে ওই বস্তু বা সামগ্রীর ‘জিআই’ ট্যাগ মিলে যায়৷ রাজ্য সরকারের হয়ে এদিনের প্রতিনিধি দলের এক সদস্যের দাবি, বাংলার পক্ষ থেকে যে পাঁচটি সামগ্রীকে ‘জিআই’ ট্যাগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে, তার মধ্যে প্রথম চারটির ক্ষেত্রে স্বীকৃতি পাওয়ার সব শর্ত পূরণ হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় পেটেন্ট আধিকারিকরা জানিয়ে দিয়েছেন৷ ফিরে গিয়েই তাঁর এই চারটি সামগ্রীর নাম তাঁদের ওয়েবসাইটে তুলে দেবেন৷ তার পর নিয়ম অনুযায়ী চার মাসের আপেক্ষাপর্ব শেষে চূড়ান্ত স্বীকৃতি৷
“মিহিদানা-সীতাভোগ বা গোবিন্দভোগ-তুলাইপাঞ্জির পেটেন্ট পাওয়া যে সময়ের অপেক্ষা, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ এখন লড়াই শুধু বাংলার রসগোল্লার৷” বলছেন ওই আধিকারিক৷ ‘বাংলার রসগোল্লা’ নিয়ে সমস্যা কী? মূল সমস্যা এই রসগোল্লার মালিকানা দাবি করে ওড়িশার দৌড়ে নামা৷ যদিও তাদের পক্ষ থেকে যে রসগোল্লার পেটেন্ট চাওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে বাংলার বিশ্ববিখ্যাত রসগোল্লার মিলের থেকে অমিল বিস্তর৷ ওড়িশা সরকার যাকে রসগোল্লা বলে দাবি করছে, তার স্থানীয় নাম ‘ক্ষীরমোহন’৷ উপকরণ সুজি, ক্ষীর ও গুড়৷ অন্য দিকে, বাংলার রসগোল্লা মূল উপাদান ছানা ও চিনির রস৷ তার পরও পথের কাঁটা তুলতে কৌশলী চাল চেলে রেখেছে নবান্ন৷ ‘রসগোল্লা’ নামের বদলে পেটেন্ট চাওয়া হয়েছে ‘বাংলার রসগোল্লা’ নামে৷ নবান্ন-সূত্রে খবর, এদিন সল্টলেকে চেন্নাই থেকে আসা প্রতিনিধিরা বাংলার কাছে জানতে চেয়েছেন তাদের রসগোল্লার রসের ‘ভিসকোসিটি’ বা ঘনত্ব ও তার ‘রেঞ্জ’ বা কতদূর পর্যন্ত সেই ঘনত্বের বিস্তৃতি– তা সম্পর্কে৷ রাজ্যের পক্ষ থেকে এদিন তার জবাব দেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি বলা হয়েছে এ বিষয়ে পূর্ণ রিপোর্ট তাঁরা খুব শীঘ্রই পাঠিয়ে দেবেন৷ সেই রিপোর্ট দেখার পরই ‘বাংলার রসগোল্লা’-র পেটেন্ট ভাগ্য নির্ধারিত হবে৷
The post রসগোল্লার পেটেন্ট কার, ঝুলেই রইল বাংলার ভাগ্য appeared first on Sangbad Pratidin.
