রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: উপনির্বাচনে শাসকদলের কাছে হারের কারণ খুঁজতে তিন বিধানসভা কেন্দ্রে একেবারে তৃণমূলস্তরে যাবে বিজেপি। জেলায় দলের নেতা–কর্মীদের রিপোর্টের উপর শুধু ভরসা না করে একেবারে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জনমত যাচাই করবে বিজেপির টিম। লোকসভা ভোটে যে ভোটাররা উজাড় করে পদ্মে বোতাম টিপেছিলেন তাঁদের একটা অংশ কেন উপনির্বাচনে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, তার প্রকৃত কারণটা বের করতে চায় গেরুয়া শিবির। সে কারণেই শুধু দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা নয়, সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই দলের খামতি কোথায় ছিল সেটা জানতে চায় রাজ্য নেতৃত্ব।
হারের ময়নাতদন্তে কালিয়াগঞ্জ, করিমপুর ও খড়গপুর-এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রে রাজ্যস্তরের তিন নেতাকে পাঠাচ্ছে দল। তিন নেতাই রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। খড়গপুরে যাচ্ছেন সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন কালিয়াগঞ্জে আর করিমপুরে যাবেন সঞ্জয় সিং। একেবারে বুথস্তর থেকেও রিপোর্ট নেবেন তাঁরা। হারের সম্ভাব্য একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছে বঙ্গ বিজেপি। এক, কোনওরকম অন্তর্ঘাত। দুই, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল। তিন, এনআরসি ইস্যু। চার, দলের কর্মীদের ঢিলেঢালা মনোভাব বা অতিরিক্ত আত্মসন্তুষ্টি। পাঁচ দলীয় প্রচারকে মানুষের কাছে ঠিকমতো না নিয়ে যাওয়া। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলব। কোথায় আমাদের খামতি ও দোষত্রুটি ছিল তা জানতে চেষ্টা করব।”
[আরও পড়ুন: “জিডিপি রামায়ণ-মহাভারত নয়, কোনও কাজে লাগবে না”, মন্তব্য বিজেপি সাংসদের]
লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কালিয়াগঞ্জের মতো আসনে ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকায় এই আসন জেতা নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না বিজেপির। কিন্তু সেখানে তৃণমূল ৫৭ হাজার ভোট ‘কভার’ করে ২,৩০৪ ভোটের ব্যবধানে বিজেপিকে হারিয়ে দিয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, কালিয়াগঞ্জে হারের পিছনে এনআরসি ইস্যু কাজ করেছে। আবার খড়গপুরের মতো নিশ্চিত আসনেও পরাজয় হওয়ায় স্তম্ভিত বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষনেতা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সেখানে দলীয় প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। খড়গপুরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও ভোটের ফলে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছে দলের একাংশ। কালিয়াগঞ্জ, করিমপুরে যেমন এনআরসি ইস্যুকে বিজেপির বিরুদ্ধে পুরোপুরি কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল। গেরুয়া শিবিরের বড় অংশের মত, এনআরসি ইস্যু অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে উপনির্বাচনে। ভোট কমেছে বিজেপির। এছাড়া, বুথস্তরে সাংগঠনিক দুর্বলতাও ছিল। নিচুস্তরে তৃণমূলের ভোট কৌশলের সঙ্গে টক্কর দিতে ব্যর্থ হওয়া। লোকসভা ভোটে দুর্দান্ত ফলাফলের পর একটা আত্মসন্তুষ্টিও কাজ করছিল দলের একটা বড় অংশের মধ্যে। সেটাও বুমেরাং হয়েছে উপনির্বাচনে। হারের সঠিক কারণগুলি শনাক্ত করে তার বিস্তারিত রিপোর্ট রাজ্য কমিটিতে জমা পড়বে। তারপর সেই রিপোর্ট পাঠানো হবে দিল্লিতে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে।
The post উপনির্বাচনে হারের ময়নাতদন্ত, তৃণমূলস্তরে যাচ্ছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা appeared first on Sangbad Pratidin.
