shono
Advertisement

নিহত স্বামীর চটি এখনও বুথে, গত পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার চিহ্ন দেখে কাতর স্ত্রী

জয়পুরের ঘাঘরা হাইস্কুলের বুথে ভোট দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন নিহতের স্ত্রী৷ The post নিহত স্বামীর চটি এখনও বুথে, গত পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার চিহ্ন দেখে কাতর স্ত্রী appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:10 PM May 12, 2019Updated: 08:10 PM May 12, 2019

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আট মাস পর এই স্কুলে পা রেখেই চোখে পড়ল নিহত স্বামীর নীল রঙের হাওয়াই চটিটা। এখনও ঝোপে পড়ে ওই হাওয়াই চটির একটা অংশ। রবিবার ওই স্কুলে ভোট দিতে গিয়েই তা সামনে পড়ে যাওয়ায়, চোখে জল চলে আসে তাঁর৷ একসঙ্গে ভোট দিতে যাওয়া পড়শিকে বলেন, ‘এখান থেকে আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চল। এখানেই তো আমার জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে।’

Advertisement

২০১৮র আগস্টের একটি ঘটনা৷ তাতেই বৈশাখিদেবীর জীবন একেবারে ওলটপালট হয়ে গিয়েছে৷ তাই আর ওই স্কুলমুখো হতে চান না তিনি। রবিবার দুপুরে ভোটটা কোনওক্রমে দিয়েই নিজেকে কার্যত ঘরবন্দি করে নেন বৈশাখি গোপ৷ ২৭ আগস্ট, পুরুলিয়ার জয়পুরের ঘাঘরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময় অশান্তি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায় পুলিশ৷ নিহত হন ঘাঘরা গ্রামের ট্রাক্টর চালক বছর ছাব্বিশের নিরঞ্জন গোপ৷ মৃত্যু হয় ঘাঘরা লাগোয়া ছটকা গ্রামের বৃদ্ধ দামোদর মণ্ডলেরও। ঘটনাস্থল ছিল এই স্কুল৷ সেই ঘটনা ঘিরে দীর্ঘ রাজনীতি চলে৷ তদন্তপ্রক্রিয়া  বিডিও-র অধীন থেকে পুলিশে বদলি হয়। কিন্তু এখনও বিচার পায়নি দুই নিহতের পরিবার।

[আরও পড়ুন: ভোটের ফলাফল কী হবে? ভবিষ্যদ্বাণী করল পঞ্জিকা]

তারই মধ্যে নিয়ম করে ভোটপার্বণ এসেছে। এবারের লোকসভায় ভোট দিলেন নিহত নিরঞ্জনের স্ত্রী বৈশাখি। কিন্তু ওই একই স্কুলে ভোট দিতে গিয়ে আট মাসের আগের সেই কালো দিন যেন আবার ভেসে উঠল তাঁদের চোখের সামনে। বুথে পৌঁছে বৈশাখি দেবী চোখ ঢেকে ফেলেন শাড়ির আঁচলে৷ আলগোছে মুছে নেন জল৷ কী এমন হয়েছিল সেদিন? বৈশাখি বলেন, ‘নিরীহ মানুষটাকে ওরা গুলি করে মেরে দিয়েছিল। কী দোষ ছিল ওর? ও তো আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন দেখতে গিয়েছিল। তারপর হঠাৎই প্রধান পদ নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়ে যাওয়ায় ও স্কুলের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। তখন পুলিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের দিক থেকে গুলি চালাতে শুরু করে৷ ওর শরীরে গুলি লেগে স্কুলের মাঠে লুটিয়ে পড়ে। পায়ে থাকা নীল রঙের হাওয়াই চটিটা এদিক-সেদিক হয়ে যায়।’ স্কুলের ঝোপে পড়ে থাকা হাওয়াই চটি দেখে স্মৃতিভারে ঝাপসা হয়ে ওঠে বৈশাখির চোখ৷ বলেন, ‘যে নীল রঙের হাওয়াই চটি পড়ে ও সেদিন বোর্ড গঠন দেখতে এসেছিল, ঘটনার কিছু দিন আগে ওই চটিটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। আমি নীল রঙের ফিতে এনে লাগিয়ে দিই।’ কথা আটকে আসে তাঁর৷ পরম স্নেহে পুত্রবধূর পাশে দাঁড়ান  শ্বশুরমশাই৷ বলে ওঠেন,‘থাক ওসব কথা। বউমা, তুমি ঘরে যাও।’ বাবাকে হারিয়ে এখনও যেন চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ নিহত নিরঞ্জনের ছেলে-মেয়ের। তিন বছরের মেয়েটা কিছু না বুঝে মায়ের কোলে মুখ লুকায়।

[আরও পড়ুন: ব্রাত্য পুরুষ, দেওয়াল লিখন থেকে বুথ এজেন্টের দায়িত্বে তৃণমূলের নারী ব্রিগেড]

আট মাস আগের ওই ঘটনার কথা এদিন জেনে যায় ভোটের কাজ করতে পুরুলিয়ার যাওয়া বুথের বিএসএফ জওয়ানরাও। তাই এদিন ঘাঘরা হাইস্কুলের বুথে একেবারে আঁটসাঁট নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়৷ যদিও এই স্কুলের এই দুটি বুথই নির্বাচন কমিশনের খাতায় ‘হাইপার ক্রিটিক্যাল’৷ তাই এক সেকশন অর্থাৎ ৮জন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

The post নিহত স্বামীর চটি এখনও বুথে, গত পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার চিহ্ন দেখে কাতর স্ত্রী appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement