ধীমান রায়, কাটোয়া: সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে বধূকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল ভাসুরপোর পরিবারের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে নৃশংস এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের কুরুম্বা গ্রামে। দগ্ধ বধূ বীথিকা গড়াইকে (৪৩) আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। এই ঘটনায় বধূর ভাসুরপো আশুতোষ গড়াই ও আশুতোষের ছেলে পূর্নচন্দ্র গড়াইকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনা ঘিরে এলাকায় ব্যপক উত্তেজনা ছড়ায়। মঙ্গলকোট থানার আইসি পিন্টু মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে চলে আসে।
দগ্ধ বধূর খুড়তুতো দাদা সুবীর গড়াই জানিয়েছেন, শনিবার সকালে তিনি প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন। তখন তাঁর খুড়তুতো বোন বীথিকাদেবীর বাড়ির কাছে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ পান। তারপর ঘটনাস্থলের কাছে চলে আসেন। বীথিকাদেবীদের বাড়ির উলটোদিকে আশুতোষ গড়াইদের বাড়ি। সুবীর গড়াই পুলিশকে জানান, ঘটনাস্থলে আসার পর তিনি দেখতে পান আশুতোষ গড়াইদের বাড়িতে দগ্ধ অবস্থায় কাতরাচ্ছেন বীথিকা। মুখ, হাত, পা বাঁধা অবস্থায় বীথিকাদেবী পড়ে রয়েছেন। পাশে কেরোসিন তেলের পাত্র। চারিদিকে কেরোসিনের গন্ধ।
[আরও পড়ুন: অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত মঙ্গলাহাটে নওশাদ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আরজি ISF বিধায়কের]
সুবীরবাবু পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, ওইসময় স্থানীয়দের সহায়তায় বীথিকাদেবীকে উদ্ধার করা হয়। তখনও জ্ঞান ছিল বীথিকাদেবীর। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বীথিকাদেবী জানান তিনি সকালে বাড়ির সামনে যখন ঝাঁট দিচ্ছিলেন তখন আশুতোষ গড়াই ও তার ছেলে তাকে তুলে নিয়ে যায় নিজেদের বাড়িতে। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে হাত, পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রতিবেশীরা আশুতোষের বাড়ি থেকেই বীথিকাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বীথিকা ও আশুতোষদের বাড়ি সামনাসামনি। বীথিকাদেবীর স্বামী নবকুমারবাবু একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। বাইরে থাকেন। ঘটনার সময় ঘুমাচ্ছিলেন বীথিকাদেবীর একমাত্র ছেলে সুরজ। জানা যায় বীথিকাদেবীদের বাড়ির পশ্চিমদিকে একটি পুকুর রয়েছে। ওই পুকুরপাড়ের কিছুটা জায়গা নিয়ে আশুতোষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছিল।
জায়গা নিয়ে বিবাদের কারণে বীথিকাদেবীদের বাড়ির দেওয়ালের কিছুটা অংশে প্লাস্টার এখনও হয়নি। জায়গা নিয়ে বিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরিবার সূত্রে জানা যায়, রবিবার বীথিকাদেবীদের দেওয়াল প্লাসটার করার কথা ছিল। সুবীর গড়াই বলেন,”আমাদের মনে হয় বোন বাড়ির প্লাস্টারের কাজ করাতে চলেছে এটা কোনোভাবে জেনে যায় আশুতোষরা। আর সেজন্যই পরিকল্পনামাফিক তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে খুন করার চেষ্টা করেছে।” মঙ্গলকোট থানার আইসি পিন্টু মুখোপাধ্যায় জানান, পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। দু’জনকে আটক করা হয়েছে।
