সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সকাল ন’টায় নাকে-মুখে এক তরকারি-ভাত গুজে অফিস ছোটে বাঙালি। আর দিনভর বসের চোখ রাঙানি সহ্য করে বাসে-ট্রেনে বাদুর ঝোলা হয়ে রাত নটায় বাড়ি ফেরা। পেটরোগা বাঙালির ইচ্ছে থাকলেও সময়ের অভাবে গুছিয়ে রান্না করা কিংবা পেটপুজো কোনওটাই হয়ে ওঠে না। ইচ্ছে হলে উইকএন্ডে ডাইন আউট অথবা হোম ডেলিভারি ভরসা। ২১ দিনের লকডাউন সেই পেটরোগা বাঙালির কাছে যেন পড়ে পাওয়াা ১৪ আনা। করোনা আতঙ্কের মাঝেই রান্নার ক্ষেত্রে ষোলো আনা বাঙালিয়ানায় ফিরে গিয়েছে তাঁরা। রোজকার এক তরকারি ভাত ছেড়ে বেশ কয়েক পদ জমিয়ে রাঁধছেন তাঁরা। বাজারও করছেন জমিয়ে। আর তাই লকডাউনকে ফাঁকি দিয়েই শহর-শহরতলির বাজারে বেশ ভিড় চোখে পড়ছে।
কথায় বলে, মাছে ভাতে বাঙালি। অথচ সময়ের অভাবে হোম ডেলিভারির চিনা খাবারেই ভরসা রাখে আজকের জেন ওয়াই। কিন্তু ২১ দিনের লকডাউনে চেনা ছক যেন ওলট পালট হয়ে গিয়েছে। দোকানপাট বন্ধ, রেস্তরাঁর ঝাঁপ পড়েছে। হোম ডেলিভারি মিললেও ভয়ে অনেকেই তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলতঃ বাড়িতেই চলছে রান্না। জরুরি পরিষেবা ছাড়া অফিস কাছারি ছুটি কিংবা ওয়ার্ক ফ্রম হোম। তাই বিশেষ তাড়াহুড়ো নেই। আর তাই জলখাবার থেকে থেকে নৈশভোজ, পাতে থাকছে হরেক পদ।
[আরও পড়ুন: বেশি করে সবজি-মাছ কিনেছেন? ঘরোয়া পদ্ধতিতে এভাবেই রাখুন তরতাজা]
উত্তর কলকাতার শোভাবাজার এলাকার ভট্টাচার্য বাড়ি। নয় নয় করে বাড়ির সদস্য ১৪ জন। কেউ চাকরি করেন, কেউ বা ব্যবসা। একসঙ্গে গুছিয়ে বসে খাওয়ার সময় পান না কেউই। লকডাউনে এখন ঘরবন্দি সকলে, তাই চলছে জমাটি রান্না। বাড়ির এক সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য জানাচ্ছেন, “বাড়িতে এতগুলো লোক। চারবেলা তো খেতে হবে। দোকান বন্ধ, তাই চলজলদি খাবার কিনেও আনা যাচ্ছে না। অগত্যা চারবেলাই নানারকম রান্না করতে হচ্ছে। তবে বেশি বাজার করছি না। যতটা অল্প করে করা যায় তাই করছি।” একই সুর শোনা গেল খড়দহ এলাকার চন্দ পরিবারের গলাতেও। বাড়ির বর্ষীয়ান সদস্য রতন চন্দ বলছেন, “বাড়িতে রয়েছি সবাই। দুটো ছোট-ছোট ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদের তো মুখরোচক খাবার ছাড়া চলে না। তাই বাড়িতেই মুখরোচক খাবার বানাতে হচ্ছে।” চন্দ বাড়ির মেয়ে ঋতুপর্ণা আবার কর্মসূত্রে রয়েছেন গুরগাঁওয়ে। তাঁকে ফোন করে জানা গেল প্রায় ২৫ দিন ধরে সেখানে ঘরবন্দি। একা থাকে তাই বাড়িতেই রান্না করতে হচ্ছে তাঁকে। সময় কাটাতে অল্প উপকরণ দিয়েই ইউটিউব দেখে বিভিন্ন ধরণের পদ বানাচ্ছেন। কখনও আবার ফোন করে মায়ের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছেন নতুন রেসিপি। দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া অঞ্চলে থাকে মেঘাতিথি বন্দ্যোপাধ্যায়। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরতা। আপাতত ওয়ার্ক ফ্রম হোম। তিনি জানাচ্ছেন, “রাস্তা থেকে খাবার খাওয়ার অপশন পুরো বন্ধ। তাই বাড়িতে খুব সাধারণ কয়েকটা পদ রান্না হচ্ছে। তবে একটা কথা বলতেই হবে, লকডাউনের জেরে কয়েকদিন ধরে সম্পূর্ণ বাঙালি রান্না খাচ্ছি।” তবে অন্য কথা শোনা গেল বাগুইআটি এলাকার পৌলমী বসুর গলায়। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরতা পৌলমী বলছে, “অন্যসময়ের চেয়ে অনেক কম পদ রান্না করছি। আগে রোজ দু-তিন রকমে মাছ হত। দু-তিন পিস করে খাওয়া যেত। কিন্তু এখ বুঝে শুনে চলতে হচ্ছে। রোজ বাজার যাচ্ছি না। তিনদিন অন্তর গিয়ে কিনে আনছি। পরিস্থিতি বদল হলে, তখন না হয় খাওয়া যাবে।” একই কথা বললেন আহিরিটোলার বাসিন্দা অরিত্র দত্ত-ও। বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত অরিত্র বলছেন, “এমনিতেই আমাদের বাড়িতে একাধিক পদ রান্না হয়। লকডাউনে আলাদা কিছু হচ্ছে না। তবে এই কয়েকদিন একেবারে বাঙালি খাবার খাচ্ছি।”
লকডাউনের দিনেও বাজারে ভিড় দেখে অনেকেরই চক্ষু চড়কগাছ। করোনা আতঙ্কে দেশবাসী যখন কাবু, কলকাতার বাজারে তখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বাজারে বিকিকিনিও হচ্ছে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। এমনকী তাজা শাক-সবজিরও যোগানও ভালই। তাই এই লম্বা ছুটি হাতছাড়া করতে রাজি নয় বাঙালি। মাছ-ভাতের পঞ্চব্যঞ্জনে জমিয়ে পেটপুজো করছেন তাঁরা। বলছেন, ক্যায়া পাতা কাল হো না হো!
The post লকডাউনে বন্ধ রেস্তরাঁর ঝাঁপ, বাড়িতেই পঞ্চব্যঞ্জনে মজে বাঙালি appeared first on Sangbad Pratidin.