সৈকত মাইতি, তমলুক: পূর্ব মেদিনীপুরে বিরোধী জোটকে কোণঠাসা করে একের পর এক সমবায় নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখল তৃণমূল। রবিবার তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ত্রিশক্তি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে ৬৮ আসনের সাতটি ছাড়া সবকটিতে জয়ী হলেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। আর তাতে আরও একবার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল ঘাসফুল শিবির। কারণ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় গেরুয়া শিবির সমবায় ক্ষেত্রে তেমন কোনও প্রভাব ফেলতেই পারছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত বিধানসভা নির্বাচনে তমলুকে (Tamluk) হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য জয়ী হয়ে রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেছিলেন সৌমেনকুমার মহাপাত্র। এখন তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হিসাবে দলের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন সৌমেনবাবু। স্বাভাবিক কারণে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রায় জেলাজুড়ে সমবায় সমিতির নির্বাচনগুলি এখন দুই পক্ষের কাছেই সেমিফাইনাল ম্যাচের মতোই গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ, মেদিনীপুরের সমবায় আন্দোলনের ইতিহাস বহু পুরনো। সেগুলির ক্ষমতা পেলে গ্রামের মানুষের ভালমন্দ দেখার পাশাপাশি জনসংযোগে অনেক বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। এখন জেলায় শাসক দলকে পরাজিত করতে বহু ক্ষেত্রেই বিরোধীদের এককাট্টা হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘দিদির উপর ভরসা রাখলেই হত’, এসএসসি আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য নির্মল মাজির]
নন্দকুমারের একটি সমবায়ে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে এককাট্টা লড়াইয়ে বাম বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয় হলেও, এরপর থেকে পাঁশকুড়া, ময়না-সহ একের পর এক সমবায় নির্বাচনে ঝড় তুলেছে তৃণমূল। সেই ধারা অব্যাহত রেখে এদিনও তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে ত্রিশক্তি সমবায় সমিতিতে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। জানা গিয়েছে, এই ব্লকের রঘুনাথপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত এই ত্রিশক্তি সমবায় সমিতি। যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৮০০। দেখা যায়, ৬৮টি আসনের মধ্যে ৬১টি আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। সেই সঙ্গে বিজেপি ২, সিপিএম ৩, কংগ্রেস এবং এসইউসিআই একটি করে আসন পেয়েছে।
ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অপূর্ব জানা বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে না হলেও বিরোধীরা প্রায় এক হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল। কিন্তু তাদের এই গোপন আঁতাঁত নস্যাৎ করে মানুষ আমাদের সমর্থিত প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেছেন।’’ বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা কোনও দলের প্রতীকে ভোট নয়। তাছাড়া এই সমবায় সমিতিতে দীর্ঘ সময় ধরেই শাসক দল ক্ষমতায় রয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই তারা তাদের মতো করে সদস্য মনোনীত করে রেখেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ এই নির্বাচনে আমাদের সমর্থিত প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করে সাফল্য পেয়েছে।’’ সিপিএমের পক্ষ থেকে চিত্ত খান জানিয়েছেন, ‘‘কোনও গোপন আঁতাঁত হয়নি। তাছাড়া সমবায় নির্বাচনের ফলাফল কোনওভাবেই পঞ্চায়েতে তার প্রভাব ফেলতে পারবে না।’’