সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনে দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে কয়েক যোজন। একদা যে অধ্যাপিকা তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের রীতিমতো অলিখিত কর্ত্রী ছিলেন, আজ সেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় দলে একেবারেই ব্রাত্য। ঠিক যেমন দলের একনিষ্ঠ সদস্য, ভরসাযোগ্য নেতা, তৃণমূল সুপ্রিমো ও মুখ্যমন্ত্রীর খুব কাছের শোভন চট্টোপাধ্যায় দল থেকে ছিটকে সরে গিয়েছেন বহু দূরে। আর তাঁদের এই ব্যক্তিগত জীবনের সংকটকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। সূত্রের খবর, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আসন্ন লোকসভা ভোটে পদ্মফুল প্রতীক হাতে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব পৌঁছেছে একেবারে দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে। মনে করা হচ্ছে, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্যতা, জনসংযোগে দক্ষতা এবং অবশ্যই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ পরিচিতর কারণে বিজেপি তাঁকে বেছে নিয়েছে নিজেদের শিবিরে।
[চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত এসএসসি প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করলেন শিক্ষামন্ত্রী]
বৈশাখীকে রাজ্যের কোনও একটি কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করতে চাইছে বিজেপি। সূত্রের খবর, দলের হয়ে বৈশাখীর নাম প্রস্তাব করেছেন একদা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ নেতা মুকুল রায়। বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি এবিষয়ে সবুজ সংকেত দেওয়ার পরই অধ্যাপিকাকে ফোনে এই প্রস্তাব দিয়েছেন মুকুল। ঘনিষ্ঠ মহলে এই খবর চাউড় হতেই শোনা যাচ্ছে, ঘর আগলাতে শনিবার সকালেই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন চার তৃণমূল কাউন্সিলর। শোভন এবং বৈশাখী – কেউই যাতে এনিয়ে তড়িঘড়ি কোনও সিদ্ধান্ত না নেন এবং যথেষ্ট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, সে বিষয়ে বোঝানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।এছাড়া ওই চার কাউন্সিলর প্রাক্তন মন্ত্রীকে বারবার অনুরোধ করেছেন, লোকসভার আগে ফের সক্রিয় হয়ে স্থানীয় সংগঠনের হাল ধরতে। মাস পাঁচ আগে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তাঁকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সংগঠনের দায়িত্ব থেকেও সরানো হয়েছিল। এবার ফের সেই কাজেই দলের তাঁকে প্রয়োজন বলে বার্তা দিয়ে এসেছেন কাউন্সিলররা।
[সর্পাঘাতে ব্যক্তির মৃত্যু, জেলাশাসক ও বিডিওকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ আদালতের]
তবে আল আমিন কলেজের অধ্যাপিকা নিজে এনিয়ে কী বলছেন? বিজেপির প্রার্থী হওয়ার জন্য দিল্লির প্রস্তাবে তাঁর সায় আছে কি? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে গেলেও বৈশাখী জানিয়েছেন, তিনি এমন কোনও কাজ করবেন না, যাতে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে কোনও সমস্যার মুখে পড়তে হয়। তাহলে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে এই মুহূর্তে নিরাপদ কোনটি, এই নিয়েই প্রশ্ন উঠতে থাকে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জবাবের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অবশ্য রাজনৈতিক মহল দ্বিধাবিভক্ত। একাংশের মত, নারদাকাণ্ডে বেশ চাপে রয়েছেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর সম্পত্তির হিসেবপত্র অনেকটাই দেখেন বৈশাখী। ফলে তদন্তকারীদের নজরে রয়েছেন তিনিও। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলে প্রায় কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার পর বিজেপি-তে নাম লেখানো তাঁর কাছে অনেক বেশি নিরাপদ। তাই বিজেপির প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব হয়ত শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্বার্থরক্ষায় পুরোপুরি নাকচ করবেন না বৈশাখী। আরেকদলের বিশ্লেষণ, দলের সঙ্গে যতই দূরত্ব হোক না কেন, শোভন চট্টোপাধ্যায় বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা, আনুগত্য পোষণ করে এসেছেন। তাই এই মুহূর্তে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়াই করা মানে পরোক্ষভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরাগভাজন হওয়া। তা করতে বোধহয় বৈশাখী রাজি নন। ফলে তাঁর পরিস্থিতি এখন কিছুটা শাঁখের করাতের মতোই।
The post বিজেপির ‘বৈশাখী’ তাস! শোভন ঘনিষ্ঠকে প্রার্থী করতে চেয়ে ফোন মুকুল রায়ের appeared first on Sangbad Pratidin.