সোমা মজুমদার: মেনোপজ মানে ঋতুস্রাব চক্র বন্ধ হয়ে যাওয়া। তার পরে যদি ফের শুরু হয় রক্তপাত? সতর্ক হোন! মেনোপজের পরে অতিরিক্ত রক্তপাতে ক্যানসারেরও আশঙ্কা থাকে। সেই কথায় আসার আগে জেনে নেওয়া যাক মেনোপজ সম্পর্কে দু-চার কথা।
মেনোপজ কী?
মহিলাদের একটি বয়সের পর ঋতুস্রাব চক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়৷ সাধারণত গর্ভাশয় হরমোন গঠন বন্ধ করে দিলেই মেনোপজ শুরু হয়৷ মেনোপজে পৌঁছে গেলে কোনও মহিলা আর অন্তঃসত্ত্বা হতে পারবেন না৷ একটি নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে সাধারণত এক বছর ধরে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকলে ডাক্তারি মতে তাকে মেনোপজ বলে ধরা হয়৷
উপসর্গ:
১) এক বছর ধরে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকা৷
২) সাধারণত ঋতুস্রাব ২৮ দিন অন্তর হওয়া উচিত৷ কিন্তু অনেক সময় ২-৩ মাস বন্ধ থাকার পর আবার ঋতুস্রাব হতে দেখা যায়৷ অর্থাৎ ঋতুচক্র যথাযথ না হলেই তাকে মেনোপজ বলে ধরা ঠিক নয়৷
৩) যোনি শুকিয়ে যাওয়া।
৪) মেনোপজের অন্যান্য লক্ষণ- পিঠে ব্যথা, এনার্জির অভাব, ব্রেস্টে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চামড়া শুকিয়ে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, মূত্র ধরে রাখার অক্ষমতা, হাঁটু ব্যথা, অনিদ্রা, ঘাম হওয়া, শরীর গরম হয়ে যাওয়া৷
উপসর্গ কোন বয়সে শুরু হয়?
স্বাভাবিকভাবে ৪৫ থেকে ৫১ বছরের মধ্যে মেনোপজের উপসর্গ শুরু হয়৷ তবে ৪০ বছরের আগে বা ৪০-৪৫ বছর বয়সেও অনেক সময় মেনোপজ হতে দেখা যায়৷ একে প্রিম্যাচিওর মেনোপজ বলে৷
৪০-এ মেনোপজ হলে সাবধান!
প্রাথমিকভাবে চল্লিশের কোঠায় বা তার আগে মেনোপজ হওয়াকে অস্বাভাবিক মেনোপজ বা প্রিম্যাচিওর মেনোপজ বলা হয়৷ এইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এইচআরটি (হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি) করা জরুরি৷ তাছাড়া তাড়াতাড়ি মেনোপজ হলে মহিলাদের হাঁটুর ব্যথা, হাড়ের সমস্যা, দুর্বলতা, ঘুমের সমস্যা হতে পারে৷ তাই এইচআরটি করার পাশাপাশি সঠিক ডায়েট মেনে খাওয়া-দাওয়া করা অত্যন্ত প্রয়োজন৷ বিশেষ করে প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রনযুক্ত খাবার রোজ মেনুতে থাকা জরুরি৷
ঋতুস্রাব বন্ধের পর অসুখ:
১) মেনোপজের পর অতিরিক্ত ব্লিডিং হলে জরায়ুর ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
২) মূত্র ধরে রাখার অক্ষমতা।
৩) অস্টিওপোরোসিস।
৪) হার্টের অসুখ।
৫) গ্লুকোমা।
৬) কোলন ক্যানসার।
৭) অনিদ্রা।
৮) দুর্বলতা।
বেশি ব্লিডিং হলে কী করবেন?
টানা এক বছর ঋতুস্রাব না হওয়ার পর আবার রক্তক্ষরণ শুরু হলে তা মেনোপজের কারণে অতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে বলে ধরা হয়৷ মেনোপজের পরে যে কোনও প্রকার ব্লিডিং একটি সতর্কতামূলক লক্ষণ যাতে ম্যালিগন্যান্ট রোগের সম্ভাবনা আছে কি না খতিয়ে দেখতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন৷ প্রাথমিকভাবে এই ধরনের কোনও সমস্যা হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান৷ কারণ এর থেকে জরায়ুর ক্যানসার হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে৷ তাই যথাযথ চিকিৎসা করে ব্লিডিংয়ের সঠিক কারণ নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি৷
সবক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে মেনোপজের পর অতিরিক্ত ব্লিডিং-এর মতো সমস্যা এড়ানো সম্ভব নয়৷ সমস্যা কতটা গুরুতর তার উপরেই চিকিৎসা নির্ভর করছে৷ প্রাথমিকভাবে ওষুধ দেওয়া হলেও সার্জারিও করা হতে পারে৷ জরায়ু বাদ দিতে হলে অনেকসময় মাইক্রোসার্জারি করলেও হয়ে যায়৷
মেনোপজের পর লাইফস্টাইল:
১) মেনোপজের পর অত্যধিক ব্লিডিং হওয়া একবার শুরু হয়ে গেলে তখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই৷ তাই এই ধরনের সমস্যার মোকাবিলায় ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই মহিলাদের ওজনের দিকে নজর দেওয়া উচিত৷ ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ব্যায়াম ও ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে৷ পাশাপাশি সঠিক ডায়েট মেনে চলতে হবে৷
২) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা রোগে ভুক্তভোগীদের মেনোপজ ব্লিডিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ তাই নিয়মিত প্রেশার, সুগার মাপা জরুরি৷
৩) ধূমপান, অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে৷
৪) মন ভাল রাখতে কোনও শখ যেমন বই পড়া, গান শোনা ইত্যাদিকে বেছে নিতে হবে৷
৫) প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট সহ প্রতিটি খাদ্যগুণ রোজকার ডায়েটে ব্যালান্স করে খেতে হবে৷
৬) খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার দিকে মেনোপজের পর বিশেষভাবে নজর দিতে হবে৷
রাতে কষ্ট হলে কী করবেন?
এই সময় রাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। বা ঘাম হওয়া, শরীর গরম হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এইচআরটি (হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি) করা যেতে পারে৷
মানসিক অস্থিরতা সামলান:
মেনোপজের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি হরমোনের কারণে বিশেষ করে মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়৷ তাই এই সময়ে অবসর পেলে শখের কাজ করুন৷ মানসিক অস্থিরতা কমানোর জন্য গান শোনা, বই পড়া অথবা নিজের পছন্দের যে কোনও শখের কাজকে বেছে নিন৷ রোজকার জীবনের ব্যস্ততার মাঝে নিজের অবসাদগ্রস্ততা কাটাতে ৪০ বছরের পর থেকে প্রত্যেক মহিলাদের নিজেদেরই উদ্যোগ নিতে হবে৷ প্রয়োজন হলে কাউন্সেলিং করাতে পারেন৷ পরিবারের সকলের পাশাপাশি নিজের শরীর ও মনের যত্নের প্রতি দায়িত্বশীল হন৷
ভ্রান্ত ধারণা:
মেনোপজের সময় পেট ফুলে যায় বলে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে৷ এই পেট ফোলা গ্যাস, অম্বল, লিভার থেকেও হতে পারে৷ এর সঙ্গে সবসময় মেনোপজ বা মেনোপজে অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারণের সম্পর্ক না-ও থাকতে পারে৷ জনন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷ অযথা আতঙ্কিত হবেন না৷
আরও জানতে যোগাযোগ করুন: ডা. সুজাতা দত্ত, কনসালট্যান্ট গাইনোকলজিস্ট, পিয়ারলেস হসপিটাল, 9038755407। অথবা পড়ুন epaper.sangbadpratidin.in
The post মেনোপজের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত! ক্যানসার নয় তো? appeared first on Sangbad Pratidin.