shono
Advertisement

গবেষণা করার ইচ্ছে? প্রথমেই মেনে নিতে হবে ব্যর্থতা, কেন?

টিপস দিলেন আইআইটি পাটনার গবেষক ছাত্র।
Posted: 05:54 PM Jan 04, 2024Updated: 05:54 PM Jan 04, 2024

বিজ্ঞানী হতে চাও? ব‌্যর্থতা মেনে নিতে শেখো। প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিও জরুরি। জুনিয়রদের টিপস আইআইটি পাটনার গবেষক ছাত্র জয়দেব সাহার।

Advertisement

বছর তেরোর বাচ্চা মেয়ে পূর্বাশা বইমেলায় গিয়েছে মায়ের হাত ধরে। মঞ্চে কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান হচ্ছে। স্থানীয় কলেজের অধ্যাপক নবীনবাবু পূর্বাশার সঙ্গে বেশ ভাব জমিয়েছেন। কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বড় হয়ে কী হতে চাও?’ উত্তর এল, ‘বিজ্ঞানী হব। অনেক গবেষণা করব।’ অধ্যাপক মহাশয় প্রশ্ন করলেন, ‘ক্লাসে ফেল করেছ কখনও?’ বাচ্চা মেয়েটা সটান জবাব দিল, ‘কোনওদিনই না।’

শিক্ষাব্যবস্থা পূর্বাশাদের ফেল করতে শেখায় না। এর পর তাদের ঠেলে দেবে গবেষণা করতে। আর যারা ফেল করেছে কখনও তারা আগেই রওনা দেয় অন্য কোনও জগতের পথে। স্বপ্ন দেখা আর স্বপ্ন ভাঙার মাঝের সামঞ্জস্যটাই ওদের শেখানো হয় না। অথচ আমরা চাই ছেলেমেয়েরা সত্যেন্দ্রনাথের মতো বিজ্ঞানী হবে। তা হলে পূর্বাশাদের সবচেয়ে প্রথমে কী শিখতে হবে? আর কোন পথেই বা শেখা যাবে সেসব? পরীক্ষার দৌড়ে ভালো নম্বর তো একটা বড় অংশের ছেলেমেয়েই পায়। কিন্তু অনেক পূর্বাশাই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নগুলো ভুলে যায় কেন? স্কুলের পড়ুয়াদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিও বড্ড বেশি প্রয়োজন আজকের দিনে দাঁড়িয়ে।

[আরও পড়ুন: দেশজুড়ে সরকারি স্কুলগুলোতে ফাঁকা লক্ষ লক্ষ পদ, তথ্য দিল কেন্দ্র]

কী শিখতে হবে
ব্যর্থতা। হ্যাঁ, খুব সাধারণভাবে বলতে হলে সবচেয়ে প্রথমে ব্যর্থতাকে মেনে নিতে শিখতে হবে যা স্কুল বা বাড়িতে শেখানো হবে না। বরং এর উল্টোটাই শেখানো হয় ওখানে। অঙ্কে ১০ নম্বর কম পেয়েছ, জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষা ভালো হয়নি, অথবা মাধ্যমিকে প্রথম দশে আসতে চেয়েছিলে কিন্তু হয়ে ওঠেনি, অথচ তুমি তো এনটিএসই-তে রাজ্যে ভালো র‌্যাঙ্ক করেছিলে! এই সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিখতে হবে। ব্যর্থ হওয়া মানে সবসময় এটা নয় যে, তুমি পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় পাশ মার্কসের কম পেয়েছ। আপেক্ষিকভাবে ব্যর্থ হওয়া মানে তো এটাও যে, তুমি তোমার আশানুরূপ সাফল্য পাওনি। তুমি হয়তো মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। সত্যি কথা এটাই যে, কেউ তোমার পাশে দাঁড়াবে না, বরং দোষারোপই করবে। কিন্তু পূর্বাশারা তো গবেষক হতে চায়, ওদের ব্যর্থ হতে বলা হচ্ছে কেন? কারণ, ১৮ বছরের শিক্ষাব্যবস্থা অতিক্রম করে গবেষণার জগতে যেদিন প্রথম তুমি ব্যর্থ হবে, অভ‌্যাস না থাকলে তুমি সেদিন মেনে নিয়ে এগোবে কী করে? তখন ভেঙে পড়ে থেমে গেলে তো হবে না।

ব্যর্থতা মানতে শেখো
ভুল করার স্বাধীনতা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কোথাও নেই। অথচ আমাদের ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে প্রথমে এটাই রপ্ত করতে হবে। তা হলে উপায়? প্রথমে তো এটা বুঝতে হবে যে, ব্যর্থতা বলে কিছু হয় না। মানে? এতক্ষণ যে এই নিয়ে এত কথা বলা হল? জয়-পরাজয় নয়, জয়-জয় বিষয়টা মাথার মধ্যে ঢোকাতে হবে যাকে ইংরেজিতে বলে উইন-উইন কনসেপ্ট। তুমি চাও আইআইটি অথবা নামী বড় কলেজে পড়াশোনা করতে। অথচ স্কুলের বন্ধুর সঙ্গে ৫ নম্বরের জন্য প্রতিযোগিতা করছ। বিশ্বাস করো, তুমি যে কলেজের স্বপ্ন দেখো, ওখানে পৌঁছে তুমি নম্বরের প্রতিযোগিতা দেখতেই পাবে না। নম্বরের প্রতিযোগিতা না করে, তোমার যেটা ভালো লাগে, সেটা নিয়েই অনেক বেশি পড়াশোনা করো। পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার জন্য না। সেটা তো এমনিও তুমি পেয়ে যাবে। হয়তো ৫ নম্বর বেশি পাবে অথবা ৫ নম্বর কম। জীবনের এত বড় আঙিনায় তোমার ৫ নম্বর কোথায় তলিয়ে যাবে, খুঁজেও পাবে না।

কীভাবে এগোবে?
স্কুলের ওই বাচ্চা মেয়ে পূর্বাশা তা হলে কী করবে? উত্তর একটাই। যেটা ইচ্ছে, সেটাই করবে। কীভাবে পড়াশোনা করলে ডাক্তার হওয়া যায়, কতক্ষণ পড়াশোনা করলে আইআইটি, আইআইএম-এর মতো বড় প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাওয়া যাবে? দিনে কতক্ষণ লেখাপড়া করলে তবে দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার সুযোগ হবে? এসব প্রশ্ন নিয়ে অনেক উত্তরই পাওয়া যায়। কিন্ত সত্যি হল, লেখাপড়ার জন্য সেরকম কোনও নিয়ম হয় না। নিজের আগ্রহ তৈরি করাটাই প্রথম উদ্দেশ্য। পড়াশোনা করতে হবে নিয়মিতভাবে। কত নম্বর পাবে ভেবে পড়তে বসো না। বরং এটা ভাবো যে, তুমি ওই বিষয়ে ঠিক কতটা দক্ষ আর কতটা যোগ্য হয়ে উঠতে পারছ?

গবেষণার সুযোগ
স্কুল পড়ুয়াদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে যে, আমাদের দেশে গবেষণার জন্য কী কী সুযোগ রয়েছে? আইআইটি, এইমস, নাইজার, আইসার-সহ জেএনইউ, জেইউ-এর মতো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চের ভালো পরিবেশ আর সুযোগ রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের পাশাপাশি সোশাল সায়েন্সেও গবেষণার প্রচুর সুযোগ রয়েছে আইআইটি, আইআইপিএস-এর মতো প্রতিষ্ঠানে। গবেষণার সাথে সাথে খুব ভালো ফেলোশিপও পাওয়া যায়। রেগুলার ফেলোশিপের পাশাপাশি আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানে রয়েছে প্রাইম মিনিস্টার’স রিসার্চ ফেলোশিপ (পিএমআরএফ)। এই সব ফেলোশিপ পাওয়ার জন্য অবশ্যই প্রথমে এইসব প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি করার সুযোগ পেতে হবে। ভালো মানের রিসার্চ প্রোপোজালের ভিত্তিতে এই সব ফেলোশিপ দেওয়া হবে কি না তা ঠিক করা হয়। আসল কথা হল, গবেষণার সুযোগ প্রচুর হয়েছে, শুধুমাত্র দক্ষ আর যোগ্য মানুষটা হয়ে উঠতে হবে।

সবশেষে, এটা মাথায় রাখতে হবে গবেষণার জগতে সাফল্যর থেকে বেশি ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয়। তা মেনে নিয়ে এগিয়ে চলার মানসিক বলও প্রয়োজন। মনে রেখো, ব্যর্থ হওয়া অপরাধ নয়। কেন না জয়-পরাজয় বলে কিছু হয় না। পরাজয় আসলে একটা মিথ্যা আর সাময়িক আবরণ মাত্র। সুতরাং স্কুলের বন্ধু নোট চাইলে দিয়ে দিও। তাতে তোমার দক্ষতা কমে যাবে না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement