অর্ণব আইচ: কেন ‘থার্ড পার্টি’ হিসাবে একসঙ্গে প্রায় ৬০টি পুরসভায় নিয়োগের দায়িত্ব পেয়েছিল অয়ন শীলের (Ayan Sil) সংস্থা ‘এবিএস ইনফোজোন’? এর পিছনে রয়েছে কাদের মদত? অয়নকে মদত জুগিয়েছিলেন কতজন পুরকর্তা?
পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে চায় সিবিআই (CBI)। হাই কোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে এবার সিবিআই পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে। এই ব্যাপারে সিবিআই মামলাও দায়ের করতে চলেছে বলে খবর। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে পুর নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রমাণ পায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enforcement Directorate)। ইডির কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করছে সিবিআই। তদন্তের প্রয়োজনে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির মূল অভিযুক্ত অয়ন শীলকে সিবিআই নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে। একই সঙ্গে পুরকর্তারাও রয়েছেন সিবিআইয়ের নজরে। এই ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কোনও মন্তব্য করেননি। একটি সূত্রের খবর, সোমবার পুর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে শুনানিতে কোনও রায় দান করতে পারেন হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির কী রায় দেন, তা জানতে উদগ্রীব ওয়াকিবহাল মহল।
[আরও পড়ুন: ইদের উৎসবেও শামিল হতে পারবেন না মহিলারা! আফগানিস্তানে জারি তালিবানি ফতোয়া]
গত মাসেই অয়ন শীলের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে পুর নিয়োগ সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পায় ইডি। জানা যায়, রাজ্যের অন্তত ৬০টি পুরসভায় নিয়োগের বরাত পায় অয়ন শীলের সংস্থা ‘এবিএস ইনফোজেন।’ এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ ও উত্তর দমদম, বরানগর, কামারহাটি, পানিহাটি, হালিশহর, টাকি, হুগলির বিভিন্ন পুরসভা। ওই পুরসভাগুলির ‘মজদুর’, ‘পিওন’, ‘হেল্পার’, গাড়ির চালক, খালাসি, সাফাইকর্মী-সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষার আসল ওএমআর শিট উদ্ধার হয় অয়ন শীলের অফিস থেকে। তাতেই ধরা পড়ে দুর্নীতি।
প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, একেকটি পদের জন্য ৮ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা করে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। গোয়েন্দাদের মতে, পুর দুর্নীতির মোট পরিমাণ ৩০০ কোটি ছাড়াতে পারে। পুরসভায় নিয়োগের বরাত পাওয়ার সুবাদে ওএমআর শিট তৈরি থেকে শুরু করে আবেদনপত্র গ্রহণ, পরীক্ষার ফল বের করার যাবতীয় দায়িত্ব ছিল অয়ন শীলের সংস্থার। ওএমআর শিট যেভাবে বিকৃত করা হয়েছে, সেই পদ্ধতিও জানতে পারেন গোয়েন্দারা। অভিযোগ ওঠে, যে অযোগ্য প্রার্থীরা টাকা দিয়েছিলেন, অয়ন রীতিমতো লোক নিয়োগ করে সেই প্রার্থীদের ওএমআর শিট পূরণ করেন। যোগ্য পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিট সরিয়ে ফেলা হয়। নিজের হাতে সবকিছু থাকার ফলে ওমএআর শিটে কারচুপি করা সহজ হয় অয়ন শীলের। সাধারণভাবে নিয়োগের জন্য যে ‘থার্ড পার্টি’ বরাত পায় টেন্ডারের মাধ্যমে। সেখানে এতগুলি পুরসভার বরাত অয়ন শীল একাই কীভাবে পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেখানে আদৌ টেন্ডার কোনও কাজ করেছিল, না কি প্রভাবশালীদের মদতেই নিয়োগের বরাত পান, তা নিয়েই শুরু হয়েছে তদন্ত।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের কোনও কর্তা না কি পুরসভার কর্তাদের মদতে অয়ন বরাত পান, সেই তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে। ইডির কাছ থেকে সিবিআই জেনেছে যে, অয়ন শীলের ছেলে অভিষেকের বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাবা পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের কর্তা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে যে অয়ন শীলের ঘনিষ্ঠতা ছিল, তার প্রমাণ মিলেছে। সেই সূত্র ধরে অয়নের সংস্থা পুর নিয়োগের বরাত পায় কি না, সেই তথ্য জানতে ওই ব্যক্তিকেও জেরা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সিবিআই।