বিশেষ সংবাদদাতা: অর্ণব চট্টোপাধ্যায়। মোটে আট বছর বয়সে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়ায় হাতেখড়ি। যদিও সেটা স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ছিল। তবে ২০১৬ সালে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে ইন্ডি-ফিচার ফিল্ম 'আনসেড' বানিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। বছর খানেক আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে এক ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য 'জন্মদিন' নামে আরেকটি সিনেমা তৈরি করেন তিনি। এরপর ফিল্ম স্কুলে পড়াশোনার জন্য লন্ডনে পাড়ি। সেইসময়ে বিশ্বজুড়ে থাবা বসায় কোভিড। তবে কলকাতার ভূমিপুত্রের আক্ষেপ, "অনলাইনে আর কতটা পড়াশোনা হয়! সিনেমা তৈরি হাতেকলমে শেখার কাজ।" তবে থেমে যাননি। অতিমারীতে অবসরকে কাজে লাগিয়ে প্রথম সিনেমার চিত্রনাট্য লিখে ফেলেন অর্ণব চট্টোপাধ্যায়। এবার সেই ছবিই মুক্তির আলো দেখতে চলেছে গোটা দেশজুড়ে।
শুটের ফাঁকে অর্ণব চট্টোপাধ্যায়
সিনেমার নাম 'মার্ডারবাদ'। যে থ্রিলারধর্মী সিনেমায় দেখা যাবে শরীব হাসমি, অমল গুপ্তে, মাসুদ আখতার, নকুল সহদেব, কনিকা কাপুর, সালোনি বাত্রা, মনীশ চৌধুরি-সহ আরও অনেকে। পরিচালনা- প্রযোজনার কাজ অর্ণব চট্টোপাধ্যায় নিজে সামলালেও বঙ্গসন্তানের ডেবিউ বলিউড সিনেমার প্রেজেন্টার রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট। অতিমারী পর্বেই চিত্রনাট্যের কাজ সেরে ফেলেছিলেন অর্ণব। তবে সেই স্ক্রিপ্টকে বড়পর্দায় ছবির আকারে নিয়ে আসতে বেগ পেতে হয় তাঁকে। প্রথমটায় তিনি ধন্দে ছিলেন 'মার্ডারবাদ' ছবিটিকে বাংলা না হিন্দিতে তৈরি করবেন। অর্ণব বলছেন, "মাতৃভাষাতে সিনেমা বানানোর কথাই প্রথমে মাথায় এসেছিল। চিত্রনাট্য হাতে বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথাও হয়। তবে বিষয়টা বেশিদূর এগোয়নি। পরে ভাবলাম, আমার গল্পটা যদি জাতীয়স্তরে তুলে ধরতে পারি, তাহলে আরও বেশি সংখ্যক দর্শকদের কাছে পৌঁছে যেতে পারব। সেই থেকে শুরু হল মুম্বইতে 'মার্ডারবাদ' তৈরির জন্য কসরত। প্রযোজক খোঁজা, ছবির অভিনেতাদের নিজে যোগাযোগ করে গল্প শোনানো থেকে সিনেম্যাটোগ্রাফার নির্বাচন করা, বলতে পারেন একেবারে তৃণমূল স্তর থেকেই 'মার্ডারবাদ' তৈরির কাজ করেছি। তবে কোনও আক্ষেপ নেই, কারণ একজন ডেবিউ পরিচালক হিসেবে এই জার্নিটা আমাকে শিখতে অনেক সাহায্য করেছে।"
'মার্ডারবাদ' ছবির কিছু দৃশ্য
আগামী ১৮ জুলাই 'মার্ডারবাদ' বড়পর্দায় আসছে। সেই স্বপ্নপূরণের গল্প শোনানোর ফাঁকেই অর্ণব জানালেন, "নিত্যদিন বিভিন্ন শহরে প্রচারের জন্য ছুটতে হচ্ছে। তার ফাঁকেই দিনরাত টিমের সঙ্গে দফায় দফায় কথা। এখনও সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাইনি। সেই বিষয়ে একটু চিন্তায় আছি। আসলে বেশ কয়েকটা দৃশ্য এবং সংলাপ ছেঁটে ফেলতে বলা হয়েছে। সেই কাজগুলো নিয়েই ব্যস্ত।" কোন সংলাপের জন্য এহেন সমস্যার সম্মুখীন হতে হল? প্রশ্ন ছুড়তেই ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে অর্ণব বললেন, "আসলে ছবির একটি দৃশ্যে মধ্যবিত্ত, আমজনতার উত্তরণের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে এক চা দোকানির মুখে সংলাপ রেখেছিলাম- কাল যদি আপনি আমার চা দোকান কিনে নিতে পারেন, তাহলে আমিও প্রধানমন্ত্রী হতে পারি...। আর এই সংলাপ দেখেই সেন্সর বোর্ডের মনে হয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। সপক্ষে যুক্তি দিয়েও লাভ হয়নি। তাই অগত্যা অন্য সংলাপ বসাতে হয়েছে পরে ডাবিং করে। আমি অবশ্য আগেই U/A সার্টিফিকেট চেয়েছিলাম। এবার সেটারই অপেক্ষায় রয়েছি।"
কথাপ্রসঙ্গেই 'মার্ডারবাদ' পরিচালক জানালেন, "কলকাতার স্বনামধন্য পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ধরেই চেনাশোনা আমার। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে একটা শর্টফিল্ম তৈরি করেছিলাম। যেখানে উনি কিংবদন্তীর পুত্রের ভূমিকায় ছিলেন। তার পর থেকেই সখ্যতা ওঁর সঙ্গে। আমি সিনেমা বানাতে চাইছি শুনে জয়দীপদা আমাকে বললেন, একা কেন সব কাজ করছিস? পরে উনিই আমাকে কলকাতার ক'জন প্রযোজকদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে বেশ কিছু কারণবশত কাজটা বাংলায় করতে পারলাম না।"
