সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলা সিনেমার সুদিন আর দুর্দিন নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। নেটভুবনে মাঝেমধ্যেই লম্বা হ্যাজ নামিয়ে প্রতিবাদী রব ওঠে- বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান! কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, অন্তর্দ্বন্দ্বের ফাঁপড়ে আখেড়ে 'বেচারা' বাংলা সিনেমাকেই ভুগতে হয়। কখনও ভুয়ো বক্স অফিস ফিগারের অভিযোগ, আবার কখনও বা এজেন্সি মারফৎ প্রেক্ষাগৃহ ভরানোর 'দেখনদারি'তে শোরগোল পড়ে যায়। এবার আবার পরিযায়ী পাখির মতো টলিপাড়ার শীতকালীন বক্স অফিসে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে ভুয়ো রেটিং ত্বত্ত্ব! যে ইস্যুতে দিন কয়েক ধরেই নেটভুবনে ইঙ্গিতপূর্ণ বাক্যবাণের ভিড়।
চলতিবারে বড়দিনের উপহার হিসেবে তিন-তিনটে বাংলা সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে এসেছে। যেখানে আবার 'দুই সুপারস্টারের যুযুধানে'র জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল দর্শকমহল। রিলিজের পর সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগুনের স্ফুলিঙ্গ এমনভাবে জ্বলে উঠল যে এই হাড়কাঁপানো শীতেও সরগরম নেটভুবন। অহরহ পোস্টের ভিড়। কীরকম? পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং প্রযোজক রানা সরকারের পোস্ট দেখে একাংশের অনুমান, টলিপাড়ার জনৈক ডাকসাইটে ব্যক্তিত্ব নাকি এজেন্সি মারফৎ ছবির রেটিং কমিয়ে দিচ্ছেন। যদিও নিশানায় যিনি, তার সঙ্গে পরিচালক-প্রযোজকের এযাবৎকাল খুল্লমখুল্লা 'সদ্ভাব'ই দেখা গিয়েছে। একে-অপরের সিনেমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আবার কখনও বা অন্য সিনেমার প্রিমিয়ারে সেই তারকার সিনেমার নামখচিত টি-শার্ট পরে গিয়েছেন। এহেন বন্ধুত্বের সমীকরণে আচমকাই চিড় ধরল কেন? যত্ত দোষে টলিপাড়ার শীতকালীন বক্স অফিস আসলে নন্দ ঘোষে পরিণত হয়েছে! যদিও 'অর্গ্যানিক' বিশ্বাসে মিলায়ে হিসেব, তর্কে বহুদূর, তবে কানাঘুষো, হল না পাওয়ার দুঃখে নাকি রেটিং কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমার। আর সেই জোরজুলুমে উত্তপ্ত বাক্যবাণ ছুটছে মুহুর্মুহু!
যদিও সেই তারকার নামোল্লেখ করেননি কেউই। কতিপয় শব্দে সৃজিত শুধু লিখেছেন, "এই শীতকালে তুমি কী করেছ, তার সবটাই জানি। এমনকী সেই এজেন্সির নামও জানি। চৈতন্য হোক।" অন্যদিকে প্রযোজক রানা সরকারের মন্তব্য, "আমরা জানি, কোন সিনেমার বক্স অফিসের আসল ফিগার কত। মুখ খোলাতে বাধ্য করবেন না। প্যান্ডোরা বক্স খুলে দেব, পালানোর রাস্তা পাবেন না খুঁজে।" এখানেই অবশ্য থামেননি তিনি! আরও একধাপ এগিয়ে বলছেন, "বক্স অফিস ফিগার বাড়িয়ে বলা কোনও নিউ নর্মাল না। এটা হল বক্সঅফিস থেকে কারও ছবি টাকা তুলতে পারছে না, বা টেলিভিশন স্যাটেলাইট রাইট বিক্রি হচ্ছে না, সেটা লুকিয়ে ফেলার একটা চেষ্টা। যা আদতে ব্র্যান্ড বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। সারাদেশে শুধু দক্ষিণ ভারত আর পাঞ্জাব ছাড়া সব ফিল্ম ইন্ডাস্টিতেই হয়। গত দু'বছরে সুপারহিট কতগুলো বাংলা সিনেমা কোনও টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হয়নি, কেন হয়নি? কারণ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে টাকায় সিনেমা কিনবে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে সেই টাকা উঠবে না। ট্যালেন্টদের ব্যর্থতা লুকিয়ে মার্কেট রেট বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করছি, ব্র্যান্ড বিল্ডিং হচ্ছে, তাতে বিনিয়োগের টাকা ফেরত আসছে না, প্রযোজক ডুবে যাচ্ছে। প্রযোজকের টাকায় এই দাদাগিরি বেশিদিন টিকবে না কিন্তু।"
এসবের মাঝেই সোশাল পাড়ায় জ্বলজ্বল করছে প্রযোজকের আরেকটি পোস্ট। যেখানে লেখা- 'শিরায় শিরায় রক্ত/ আমি চৈতন্য দেব-এর ভক্ত।' এরপর 'টুকি-ধাপ্পা' বলার প্রশ্ন আসে না! দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, অভিযোগের তীর কোনদিকে? উল্লেখ্য, যার বিরুদ্ধে রানা অভিযোগ এনেছেন বলে মনে করছে টলিপাড়া, সেই ব্যক্তির হয়েই পুজোর সময়ে একাধিক ব্যক্তিকে আক্রমণ করেছিলেন তিনি। এদিকে খবর, শনিবার বিকেল ৫টায় স্ক্রিনিং কমিটির একটি বৈঠক রয়েছে। সেখানেও নাকি ঝড় উঠবে বলে গুঞ্জন। একটাই কামনা, বক্স অফিস, প্রেক্ষাগৃহে স্লট পাওয়ার রেষারেষি-দ্বন্দ্ব মিটিয়ে বাংলা সিনেমা নির্মাতাদের 'চৈতন্য হোক'! জয়গুরু।
