নন্দন দত্ত, সিউড়ি: অনুব্রতর অবর্তমানে বীরভূম জেলায় কি ক্ষোভের আগুন মাথাচাড়া দিচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে? এবার অন্তত তেমনটাই ইঙ্গিত মিলছে বীরভূমের সদ্য প্রাক্তন জেলা যুব সভাপতি দেবব্রত সাহার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে। ১০ মার্চ ব্রিগেডে তৃণমূলের জনসভা। সেই সভার প্রস্তুতিকে সামনে রেখে জেলায় জেলায় জনসভা করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। শনিবার বীরভূমের সিউড়িতে জনসভা তৃণমূলের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষের। তার আগে এক দলীয় বৈঠকে আমন্ত্রণ না পেয়ে দেবব্রত সাহা অভিমানের সুরে লিখলেন, “আমায় দেখতে খারাপ তাই ডাকেনি।” তাঁর এহেন পোস্টে স্বাভাবিকভাবেই শোরগোল শুরু হয়েছে। যদিও এই পোস্টকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বর্তমান জেলা যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “একটি ছোট ভুল বোঝাবুঝি ছিল সেটা মিটে গেছে।”
সিউড়ি কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক দেবব্রত সাহাকে দুবরাজপুর বিধানসভার প্রার্থী করে চমক দিয়েছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল। ছাত্রজীবনে এসএফআইয়ের কলেজের ইউনিট সদস্য দেবব্রতকে তৃণমূল মেনে নিয়েছিল শুধু অনুব্রতর মুখ চেয়ে। কিন্ত গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় একটি মাত্র আসন দুবরাজপুরে তৃণমূল হেরে যায়। তাও বামপন্থী অধ্যাপককে সংগঠনের কাজে লাগাতে তাঁকে জেলা যুব সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও বীরভূমের ‘বোলপুর লবি’ তাঁকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি কোনওকালেই। অনুব্রতর জেলযাত্রার পরে পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়। সূত্রের খবর, দলে সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না দেবব্রত। এর মাঝে মাসদুয়েক আগে দেবব্রতকে সরিয়ে তুলনায় অনভিজ্ঞ রামপুরহাটের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলা যুবর দায়িত্ব দেওয়া হয়। দেবব্রতকে রাজ্য যুবর পদে নিয়ে যাওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: মমতাকে মা দুর্গার সঙ্গে তুলনা! পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের মন্তব্যে তুমুল বিতর্ক]
এসবের মাঝে শনিবার জেলায় সায়নী ঘোষের দুটি সভা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে দলীয় বৈঠকে তাকে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ। ডাক না পেয়ে অভিমানী দেবব্রত সাহা শুক্রবার রাতে ফেসবুকে লেখেন, “আমায় দেখতে খারাপ তাই ডাকেনি৷” পাশাপাশি তিনি আরও লেখেন, “দল জমিদারি হটানোর স্লোগান দিচ্ছে। আর কেউ কেউ দলটাকে জমিদারি ভাবছে। পার্টির একটা কাঠামো রয়েছে। সেটা সকলের মেনে চলা উচিত।” একইসঙ্গে দলে আসন্ন বিপদের আশঙ্কা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ”নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে দলকে বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছে। বিপদ আসন্ন।”
[আরও পড়ুন: চুরি গেল খোদ বিধায়কেরই গাড়ি, চাঞ্চল্য তমলুকে]
গভীর রাতে তাঁর লেখা এই সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টকে সমর্থন করেছেন খয়রাশোলের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সপ্তম গোপ। পাড়শুন্ডির অঞ্চল সভাপতি উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও দু’জনে জানিয়েছেন তারা দেবব্রতকে দেখে লাইক দিয়েছেন। ভিতরের খবর জানেন না। তবে জেলা যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “একটা বৈঠকে ডাকা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। রাতেই সেটা মিটে গিয়েছে। তারপরেও কেন এই পোষ্ট তা কথা বলে দেখে নিতে হবে।” যদিও ওই পোস্টের পর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন ধরেননি দেবব্রতবাবু।