সুকুমার সরকার, ঢাকা: শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় বাংলাদেশের গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুস-সহ চারজনকে ছমাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যদিও জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বলে খবর।
জানা গিয়েছে, সোমবার তিনটের দিকে এই রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা। ইউনুস ছাড়া সাজা পাওয়া অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও মহম্মদ শাহজাহান। দোষীদের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন দপ্তর। ওই মামলায় গত ৬ জুন ড. ইউনুস-সহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করা হয় আদালতে। চার্জশিট গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ইউনুস ও অন্যরা। গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।
[আরও পড়ুন: ফিরদৌসের নির্বাচনী প্রচারে হামলা, দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত অন্তত ১৫]
মামলাটিতে অভিযোগ আনা হয় যে শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরি-সহ বার্ষিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না। মামলায় আরও অভিযোগ জানানো হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।
অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে গত ৯ নভেম্বর ড. ইউনুস-সহ চারজন লিখিতভাবে আদালতকে জানান, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয়।
[আরও পড়ুন: ফের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দাউদাউ আগুন, ভস্মীভূত ৫০টির বেশি ঘর]
বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশে (Bangladesh) গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালু করেন মহম্মদ ইউনুস। গ্রামীণ টেলিকমের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মজবুত করেছেন ইউনুস বলেও মনে করেন অনেকে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু এই দুই প্রতিষ্ঠানেই বিস্তর আর্থিক কেলঙ্কারি হয়েছে বলে অভিযোগ। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বেআইনিভাবে শ্রমিক ও কর্মীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ লোপাট।