শচীন রমেশ তেণ্ডুলকর। ভারতীয় ক্রিকেটে শুধু একটা নাম নয়, একটা আবেগ, একটা অনুভূতি। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ৫১ বছর বয়সেও তিনি মাস্টার্স লিগে ঝড় তোলেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার এক দশক পরেও তিনি সমান জনপ্রিয়। মাস্টার্স লিগের ফাইনালে তাঁকে দেখতে উপচে পড়েছিল স্টেডিয়াম। বোরিয়া মজুমদারকে নানান অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন কিংবদন্তি শচীন তেণ্ডুলকর।

প্রশ্ন: রবিবার সন্ধ্যায় ৬০ হাজার দর্শকে রায়পুরের স্টেডিয়াম ভরে উঠেছিল। ৫১ বছর বয়সি একজনকে দেখার জন্য মানুষের উন্মাদনা ছিল দেখার মতো। প্রতি বলেই তাঁরা উল্লসিত ছিলেন। কেমন মনে হয়েছিল?
শচীন: অবিশ্বাস্য অনুভূতি। একে আশীর্বাদ বলে মনে করি। সবসময় বলে এসেছি, ঈশ্বর আমাকে ২৪ বছর ধরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছেন। মাস্টার্স লিগে খেলা সুন্দর সেই যাত্রারই ব্যাপ্তি। এর প্রত্যেকটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। সকল সমর্থককে অনেক ধন্যবাদ। যাঁরা শুভকামনা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। ভারতীয় ক্রিকেট দলকে যাঁরা সমর্থন করেছেন, তাঁদের প্রতিও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
প্রশ্ন: এখনও সেই চেনা আপারকাট, কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ! এখনও কীভাবে সম্ভব সেগুলো?
শচীন: তার জন্য এখনও অনুশীলন করতে হয়। কোনও কাজ তো নিজে থেকে হয় না। বয়সটা ৫০ বছর হয়ে গেলে, সেটা আরও কঠিন হয়ে যায়। তবে মাঠে থাকার মুহূর্তটা স্মরণীয় ছিল। ব্যাট বলের সংযোগের শব্দ এমন একটা জিনিস, যা আমরা বহুদিন ধরে শুনতে চাই। বল যখন নিখুঁতভাবে ব্যাটে লাগে, তাকে আমি আত্মবিশ্বাস বলি। তবে ব্যাটের মাঝখানে বল না লাগলে, আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কিছুই তো আর সহজে আসে না। বল যখন ব্যাটের মাঝখানে লাগে, তৃপ্তি পাই।
প্রশ্ন: এখনও স্টেডিয়ামজুড়ে ‘শচীন, শচীন’ বন্দনা! এখনও গ্যালারিতে সমানভাবে ঢেউ ওঠে। কেমন লাগে সেই অনুভূতি।
শচীন: সবসময় বলেছি, এটা একটা আশীর্বাদ। সমর্থকরা আমার নাম ধরে স্লোগান দিলে সেটা শুনতে ভালো লাগে। ভালোবাসা পেতে তো সবসময়ই ভালো লাগে। অনেকে আমাকে মাঝেমাঝে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি ধৈর্য হারান? আপনি কি রেগে যান?’ তাঁদের বলি, না, আমি রেগে যাই না। একে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া খুবই বিশেষ ঘটনা বলে মনে করি। এটা খুব মূল্যবানও। এখনও আমাকে তা অবাক করে দেয়। যখন এমন ঘটে, নিজেকে প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাই না। গোটা স্টেডিয়াম যখন এমন ধ্বনিতে উদ্বেলিত হয়, তার মাঝখানে থাকতে অসাধারণ লাগে।
প্রশ্ন: বাউন্ডারি লাইনে যুবরাজ সিং তো একেবারে অসাধারণ! এই ব্যাপারে কিছু বলুন?
শচীন: প্রথম ম্যাচেই যুবরাজ লং-অনে একটি দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছিল। অবিশ্বাস্য ক্যাচ। যুবরাজ সবসময়ই একজন দুর্দান্ত অ্যাথলিট। প্রতিভাবান একজন ফিল্ডার। যে এক সময় ভালো ফিল্ডার ছিল, সে চিরদিনই ভালো ফিল্ডার থাকে। যখনই প্রয়োজন পড়ে, যুবরাজ তার সেরাটা দেয়।
প্রশ্ন: এক্স হ্যান্ডলে ইরফান পাঠানের একটি পোস্ট নিয়ে কথা বলব। ও বলে, 'শচীন তেণ্ডুলকর হল ক্রিকেটের বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা তার ছাত্র।' তারপর সে দলের একটি ছবি পোস্ট করে। এটা নিয়ে কিছু বলবেন?
শচীন: ফাইনালের পর আমরা একসঙ্গে ছিলাম। ইরফান সেখানেও একই কথা বলেছিল। ওকে বলি, এভাবে বলো না। আমরা প্রত্যেকেই খেলার ছাত্র। প্রতিটি খেলাই একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা সেখানে যাই এবং শিখি। জীবনের যে পর্যায়েই হোক, আমাদের কেরিয়ার যে পর্যায়েই থাকুক, আমরা শিখতে থাকি।
প্রশ্ন: শচীন, আরেকটা প্রশ্ন করব ভাবছি যুবরাজ সিং সম্পর্কে। ওর সম্পর্কেও কিছু বলুন?
শচীন: যুবি অসাধারণ। ও আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমরা একে অপরকে অনেক দিন ধরে চিনি। প্রায় ২৫ বছর ধরে। আমাদের সম্পর্ক খুবই গভীর। মনে আছে সেমিফাইনালের ঠিক আগে ও নেটে ব্যাট করছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলা ছিল। যুবিকে বলেছিলাম, তোমার ব্যাটের সুইং কিন্তু অসাধারণ। যা দেখতে ভালো লাগছিল। ও এত প্রতিভাবান ক্রিকেটার যে, বয়স যাই হোক না কেন, আমার মনে হয় না ও কখনই বড় ছক্কা মারা বন্ধ করবে। এমনকী ৬৫ বছর বয়সেও ১০০ মিটার ছক্কা মারবে। যুবি হাত খুলে মারলেই বল মাঠের বাইরে চলে যায়। এটা ওর জন্মগত প্রতিভা। যা দেখতে খুবই ভালো লাগে।
প্রশ্ন: ইউসুফ পাঠান, গুরকিরাত এবং রায়ডু সম্পর্কে কিছু বলবেন?
শচীন: ইউসুফ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যাট করতে নেমে অবলীলায় ৩-৪টি ছক্কা হাঁকিয়েছিল। ও খুবই প্রতিভাবান। বল জোরে মারতে পছন্দ করে। পাঁচ বা ছয় নম্বরে ও ব্যাট করার জন্য আদর্শ। অন্যদিকে, গুরকিরাত এবং রায়ডু দুজনেই বেশ কয়েকবার অনবদ্য ইনিংস খেলেছে। রায়ডু তো ফাইনালে দারুণ শুরু করে ৫০ করেছিল। যুবি বা ইউসুফের মতো গুরকিরাতও এতটা শক্তিশালী না হলেও ছয় মারতে পারে। ওর টাইমিং এবং প্লেসমেন্ট সত্যিই চমৎকার।
প্রশ্ন: শচীন, আপনার ওই বিখ্যাত কাটটা আমি অন্তত ১০০ বার দেখেছি। যতবার দেখি, ততবার যেন অতীতে ফিরে যাই। এখনও এটা কীভাবে সম্ভব করেন?
শচীন: এরকম শট মারার আগে ভাবনাচিন্তা করার খুব বেশি সময় হাতে থাকে না। কখনও কখনও আশা করাই যায়, বোলার নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বল করবে। কারণ আগের ডেলিভারিগুলো নির্দিষ্ট একটা ছক ধরে করেছে। ফলে আগে থেকে প্রস্তুত হওয়া যায়। এটা কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত। এবার বল দেখো আর সেই অনুযায়ী খেলো।
BWB সম্পর্কে কিছু কথা:
রেভস্পোর্টজে 'ব্যাকস্টেজ উইথ বোরিয়া' ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় আলাপচারিতার অনুষ্ঠান। নীরজ চোপড়া, পিভি সিন্ধু, মীরবাই চানু, রোহিত শর্মা, হার্দিক পাণ্ডিয়া, পুল্লেলা গোঁপীচাঁদ, রণবীর সিং, শচীন তেণ্ডুলকর-সহ দেশের সেরা তারকাদের সঙ্গে গত তিন বছর আলাপচারিতা চলেছে। ২০২২-২৩ সালে এই অনুষ্ঠান ENBA-র বিচারে সেরা ডিজিটাল টক শো হিসেবে সম্মানিত হয়।