স্টাফ রিপোর্টার: মানুষের জীবনে বিশেষ কিছু জয়, অত্যন্ত আবেগঘন কিছু মুহূর্ত, সময়-সময় ব্যতিক্রমী প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। যার কথা সে আগেভাগে ভেবে রাখে না। আর সেই বিশেষ সন্ধিক্ষণ এলে, সে কী করবে, বুঝেও পায় না। যা মন চায়, তখন সে তা-ই করে। কিন্তু কেন করে, জানে না। জানতেও চায় না।
এই যেমন রোহিত শর্মা। অধিনায়ক হিসাবে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর তিনি যা করে বসলেন, আগাম ভেবে রেখেছিলেন নাকি? মনে তো হয় না। বিশ্বজয়ের পর বার্বাডোজ বাইশ গজের মাটি তুলে যে জিভে ছোঁয়ালেন ভারত অধিনায়ক! একবার, দু’বার, একাধিকবার। উইম্বলডন জিতলে যে কাজটা প্রায়ই করে থাকেন জকোভিচ। সেন্টার কোর্টের দু’-একটা ঘাস ছিঁড়ে খেতে শুরু করে দেন! টেনিস দেখেন যাঁরা, তাঁদের কাছে জকোভিচের সেই উৎসব ভঙ্গিমা অচেনা লাগার কথা নয়।
গত রাত্তিরে অশান্ত উৎসবের মধ্যে রোহিতের এহেন ‘কীর্তি’ কেউ খেয়াল করেননি। কেনসিংটন ওভালের মাঠজুড়ে তখন যা চলছিল! কোথাও অর্শদীপ সিংয়ের সঙ্গে পাগলের মতো ভাংড়া নাচছেন বিরাট কোহলি। কোথাও আবার হার্দিক পাণ্ডিয়া-মহম্মদ সিরাজকে দেখা যাচ্ছে, শিশুর মতো অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়তে। রোহিতকে ঘিরেও কম অনির্বচনীয় দৃশ্যপট সৃষ্টি হয়নি। কান্নাভেজা চোখে বিরাট কোহলিকে তাঁর জড়িয়ে ধরা। দৌড়ে গিয়ে হার্দিক পাণ্ডিয়ার গালে চুম্বন করে আসা (সেই হার্দিক, মাস দু’য়েক আগেও আইপিএল চলাকালীন যাঁর সঙ্গে রোহিতের ‘শৈত্যের’-র খবর নিত্য আসত)। দর্শকদের কাছ থেকে জাতীয় পতাকা চেয়ে নিয়ে মাঠজুড়ে দৌড়তে শুরু করা। এ সবের মধ্যে কেউ খেয়ালই করেনি, কখন বার্বাডোজ পিচের উপর হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছেন ভারত অধিনায়ক। বসে, পিচের মাটি নিয়ে জিভে ঠেকাতে শুরু করেছেন!
লোকে যে বিষয়টা জানতে পারে, রোববার সকালের দিকে। উইম্বলডনের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে ছবিটা পোস্ট করার পর। জকোভিচের ছবির সঙ্গে। ততক্ষণে গোটা পৃথিবী জেনে গিয়েছে, বিরাট কোহলির সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরে চলে গিয়েছেন রোহিতও। হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে দেশে। হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট রজার বিনি বলেও দিয়েছেন, ‘‘বিরাট-রোহিতের শূন্যতা সহজে পূর্ণ হওয়ার নয়। সময় লাগবে।’’
[আরও পড়ুন: ‘বেরিল’-এর তাণ্ডবে ঘরবন্দি রোহিতরা, এখনও অনিশ্চিত বিশ্বজয়ীদের দেশে ফেরা]
তবে বিরাট যেমন পূর্বেই ভেবে রেখেছিলেন যে, বিশ্বকাপ জিতুন না জিতুন, ক্রিকেটের সংক্ষিপ্তততম ফর্ম্যাট থেকে সরে দাঁড়াবেন। রোহিত তেমন ভাবেননি। তাঁর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত। বিশ্বজয় সম্পন্ন করে বাছাই কিছু মিডিয়াকে রোহিত বলেও দেন, ‘‘আমি ভাবিইনি যে, টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে ফেলব। কিন্তু বিশ্বজয় করার পর মনে হল, এটাই সঠিক সময় সরে যাওয়ার। বিশ্বকাপ জিতে বিদায় জানানোর চেয়ে আর ভালো কিছু হতে পারে না।’’ রবিবার আবার বিরাট-রোহিতের পথ ধরলেন ভারতীয় টিমের ‘রকস্টার’ রবীন্দ্র জাদেজাও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে চলে গেলেন তিনিও। অর্থাৎ, তিন-তিনটে ইন্দ্রপতন ঘটে গেল একটা বিশ্বকাপ জয়ের পর।
ক্যারিবিয়ানে ফোন করে শোনা গেল, গতকাল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষের পরও ঘণ্টা তিন-চার মাঠে দাঁড়য়েছিল ভারত। সোনার সব মুহূর্ত সৃষ্টি হচ্ছিল একের পর এক। বিশ্বজয়ের পর পুরো দলকে নিয়ে দ্রাবিড় পিচের উপর চলে যান। সেখানে গিয়ে একপ্রস্থ ‘টিম হাডল’ হয়। দলকে একটা বার্তাও দেন বিদায়ী জাতীয় কোচ। এরপর দ্রাবিড় আলাদা করে ডাকেন রোহিত-বিরাটকে। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই নক্ষত্রের সঙ্গে আলাদা করে ছবি তোলেন। হোটেলে ফেরার পরও উৎসব চলেছে পুরোদমে। বিশ্বজয়ী ক্রিকেটারদের উদ্দেশে একটা ‘প্রাইভেট পার্টি’ দেওয়া হয়। শোনা গেল, হোটেলে ফেরার পর বিশ্বজয়ী ক্রিকেটারদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এ দিন রাজে্যর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লিখে দেন, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার জন্য ভারতীয় দলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।’
[আরও পড়ুন: বাদ বিরাট, ভারতের ৬ জনকে নিয়ে বিশ্বকাপের সেরা একাদশ ঘোষণা আইসিসির]
রবিবার রোহিত-বিরাটদের দেশে ফেরার প্রাথমিক ভাবনা থাকলেও তা হচ্ছে না। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা–দুটো টিমের একটাও শোনা গেল ফিরতে পারছে না। আসলে দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে আজ ক্যারিবিয়ানে। প্রচুর ফ্লাইট যে কারণে বাতিল করা হচ্ছে। ভারতীয় টিম দেশের ফ্লাইট ধরছে সোমবার। এ দিন আবার রোহিতকে স্থানীয় ‘ফিশারি’ বলে একটা জায়গায় বিশ্বকাপ হাতে আইসিসি-র ফোটোশুটে যেতে হল। লিখে দেওয়াই যায়, বিশ্বজয়ীরা ভারতে ফেরার পর আবেগের ঢেউ আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
উৎসবের সবে তো শুরু!