স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: অত্যন্ত স্মার্ট হওয়াই যেন কাল হল নিবেদিতার! সুদূর দেরাদুনে ‘ঘরের মেয়ে’ নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ অন্ডালের ছোড়া হাসপাতাল সংলগ্ন ইসিএলের আবাসন এলাকা। ছোট মেয়েকে হারিয়ে বাকহীন পরিবারও। কান্নাভেজা গলায় প্রিয়জনেরা বলছেন, মেয়েটা এত স্মার্ট না হলেই পারত। তাহলে হয়তো অকালে প্রাণ হারাতে হত না ওঁকে।
নিবেদিতার বাবা হলধর মুখোপাধ্যায় ইসিএলের কেন্দা এরিয়ার ছোড়া ৭,৯ পিটের কর্মী। মা মণিমালা সাধারণ গৃহবধূ। তাঁদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে অন্তরা আর ছোট নিবেদিতা। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নিবেদিতা স্থানীয় বহুলা শশী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। পড়াশোনায় মাঝারি মানের হলেও সামাজিক কাজে ভীষণ রকমের ঝোঁক ছিল তাঁর। বছর চারেক আগে স্থানীয় ও বন্ধুদের নিয়ে খুলে ফেলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সমব্যথী’। তার পর থেকেই শুরু অন্য এক জীবন।
[আরও পড়ুন: বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানোর শাস্তি! ধুপগুড়িতে গলা ও যৌনাঙ্গ কেটে যুবককে খুন]
প্রত্যন্ত খনি এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিবেদিতা। রেল স্টেশনে গরিবদের শীতবস্ত্র প্রদান, সুন্দরবনে ত্রাণ কিংবা কোভিড কালে কমিউনিটি কিচেন সব ক্ষেত্রেই সক্রিয় অংশগ্রহণ করতেন তিনি। তার পর রাজ্যের বাইরে পাড়ি দেওয়া। তবে পরিবারের জন্যে মন খারাপ হলেই মাঝে মধ্যেই দিল্লি থেকে বহুলা চলে আসতেন নিবেদিতা। দিল্লি যাওয়ার আগে পর্যন্ত এলাকায় সমাজসেবামূলক কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।
নিবেদিতার প্রতিবেশী ও ‘সমব্যথী’র সদস্য অয়ন দাস জানান, “ও খুব প্রাণোচ্ছ্বল মেয়ে ছিল। খনি এলাকার মেয়ে হলেও সমাজ সেবামূলক কাজে দাপিয়ে বেড়াত প্রায় জেলা জুড়ে। ওর এই মৃত্যুর খবরে আমরা বিস্মিত। মন খারাপ থাকলে ও-ই আমাদের উৎসাহ দিত। এখন এই মন খারাপের সময়ে ও-ই নেই।” ঘটনায় হতবাক বহুলা পঞ্চায়েতের প্রধান বীরবাহাদুর সিংয়ও। তিনি বলেন, “ভাবতেই পারছি না। কাজে-অকাজে আমার সঙ্গে দেখা হত। এলাকায় সমস্যা থাকলে আমার সঙ্গে ঝগড়াও করত।” মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত গোটা পরিবার। বাঁকুড়ার সোনামুখিতে আদি বাড়ি হলেও বর্তমানে নিবেদিতার মামাবাড়ি বাঁকুড়ার মেজিয়া থানার দুর্লভপুরে রয়েছেন তারা। সেখান থেকেই ফোনে নিবেদিতার দিদি অন্তরা মুখোপাধ্যায় জানান, “পড়াশোনায় ততটা মেধাবী না হলেও বোন অত্যন্ত স্মার্ট ছিল। বোনের খুনিদের চরম শাস্তি চাই।”