shono
Advertisement

তীব্র তাপপ্রবাহে উত্তরবঙ্গে নদীতে মাছের ‘মড়ক’, মাথায় হাত মৎস্যজীবীদের

পুুকুর থেকে দ্রুত মাছ তুলে বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে মৎস্য দপ্তর।
Posted: 08:10 PM Jun 06, 2023Updated: 08:10 PM Jun 06, 2023

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: তীব্র তাপদহে উত্তরবঙ্গে (North Bengal) নদী ও পুকুরের জল মাত্রাতিরিক্ত উষ্ণ হয়ে উঠেছে। আর সেখানকার মাছগুলির মৃত্যু হচ্ছে। এবার জলাশয়ে উপরিতলে সেসব মরা মাছ (Fish) ভাসতে শুরু করেছে। গত তিন, চারদিন ধরে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং জেলা এবং শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে ওই দৃশ্য চোখে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম দশা লক্ষাধিক মৎস্যচাষি ও গবেষক মহলের। পোনা মাছ তৈরির হ্যাচারিগুলো বন্ধের পথে। শ্যালো দিয়ে পুকুরে ঠান্ডা জল ঢেলেও মাছ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

Advertisement

মৎস্যজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের নদীগুলির (River) পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। সেখানে জল শুকিয়ে গরম হয়ে মাছের পাশাপাশি জলজ উদ্ভিদ এবং অন্য প্রাণীও মরছে। মৎস্য গবেষক ও চাষিদের আশঙ্কা, তাপমাত্রা (Temparature rise) এভাবে বেড়ে চললে মাছ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। মাছ চাষিদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে যে সমস্ত পুকুরের মাছ এখনও টিকে আছে, সেগুলি তুলে বিক্রি করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকরা।

[আরও পড়ুন: বুধবার থেকে ফের চলবে অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস, দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু সিবিআইয়ের]

পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জলপাইগুড়ি কৃষি ও মৎস্য গবেষণাকেন্দ্রের গবেষক ইন্দ্রনীল ঘোষ বলেন, “উত্তরবঙ্গে এতো বেশি তাপমাত্রা! কল্পনা করতে পারি না। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি হয়েছে। তীব্র গরমে জল শুকিয়ে পুকুর ও নদীর মাছ ভাসছে। মৎস্যজীবীদের বলেছি, দ্রুত পুকুরের মাছ তুলে বাজারে পাঠাতে। যেভাবে ক্রমশ তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।” আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার থেকে উত্তরে তাপমাত্রার পারদ চড়ছে। ইতিমধ্যে তাপমাত্রার পারদ ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌছেছে। শুক্রবারও কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি জেলা এবং শিলিগুড়ি মহকুমায় ওই পরিস্থিতি ছিল। সকাল সাতটা থেকেই প্রখর রোদের সঙ্গে চলছে তাপপ্রবাহের দাপট। কয়েকদিনেই মাঠঘাট যেমন শুকিয়েছে একইভাবে নদী ও পুকুরের জলস্তর দ্রুত নেমে গরম হতে শুরু করেছে। পরিণতিতে মাছ ভেসে উঠতে শুরু করেছে। মৎস্যচাষিদের একাংশ পাম্প মেশিনে জল তুলে পুকুরে ফেলে মাছ রক্ষার চেষ্টা করলেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না।

রাজ্য সরকারের পুরস্কারপ্রাপ্ত কোচবিহারের মৎস্যচাষি লক্ষ্মীকান্ত বর্মন জানান, পুকুরে ঠান্ডা জল ঢেলে দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে পরিস্থিতি একই দাঁড়াচ্ছে। রুই, কাতলা, মৃগেলের চারাপোনা ভেসে উঠছে। ওই পরিস্তিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছের ডিম ফুটিয়ে চারা তৈরির হ্যাচারিগুলো। লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, “আমার নিজের ১২ টি পুকুর। জেলায় পাঁচ শতাধিক পুকুরে মাছ চাষ হয়ে থাকে। এখান থেকে রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল মাছ উত্তরের বিভিন্ন বাজারে যায়। এবার দুই দফায় তাপদহে মাছ মরে জলে ভাসছে। ওই পরিস্থিতিতে উৎপাদন বন্ধের পথে।”

[আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে ভিজল কলকাতা-সহ একাধিক জেলা, কমবে তাপমাত্রা? কী জানাল হাওয়া অফিস?]

মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি জেলা এবং শিলিগুড়ি মহকুমায় শতাধিক মাছের পোনা তৈরির হ্যাচারি রয়েছে। জল গরম হয়ে যাওয়ায় সেখানে চাষিরা কাজ করতে পারছে না। কালিম্পং জেলা মৎস্য অধিকর্তা পার্থসারথী দাস বলেন, “তীব্র তাপপ্রবাহে সমতলের তিস্তা-সহ প্রতিটি নদীর উৎস এলাকা শুকিয়ে কাঠ হয়েছে। যতটুকু জল রয়েছে রোদে ফুটছে। এর ফলে নদীর মাছ তো বটেই। জলজ উদ্ভিদ, অন্য প্রাণী নষ্ট হতে বসেছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। এর ফলে নদীগুলিতে বাস্তুতন্ত্রের সমস্যা বাড়বে। প্রচুর মৎস্যজীবী বিপাকে পড়বেন।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement