সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: গ্রাম থেকে একটু দূরেই হত রথের মেলা। ঘটা করে হত রথযাত্রা। অথচ দেউলগ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের তা দেখার অনুমতি ছিল না। নিচু জাত বলে সইতে হত লাঞ্ছনা। এই লাঞ্ছনার জবাব দিয়েছিল চন্দ্র পরিবারের সদস্যরা। গ্রামেই তৈরি হয়েছিল ১৫ ফুট উচ্চতার ৯ চূড়া বিশিষ্ট রথ। চালু হয়েছিল দেউলগ্রামের বিখ্যাত রথযাত্রা। যা আজ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
বাগনান থানার দেউলগ্রামের এই রথের মেলার কথা এখন দেশ-কালের সীমা ছাড়িয়েছে। এখন যে জায়গাটা ‘দেউলগ্রাম’ নামে পরিচিত, এক সময় সেটাই ‘শ্যামবাজার’ নামে পরিচিত ছিল। গ্রামের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাদার শ্যামাচরণ চন্দ্রের নামানুসারেই গ্রামের এরকম নামকরণ হয়েছিল। জানা গিয়েছে, গ্রামে চন্দ্র পরিবারের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল। সেই পরিবারের সদস্যরা বা গ্রামের অন্যান্য মানুষ বাড়ির ছোটদের আবদার মেনেই যখন ওই রথের মেলায় যেতেন, তখনই কপালে জুটত এই লাঞ্ছনা। নিচু জাত আখ্যা দিয়ে তাঁদের রথের মেলায় প্রবেশ করতে দেওয়া হত না। এই কারণেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের বাড়ির সদস্যরা আর অন্য কোনও রথের মেলায় যাবেন না। গ্রামেই নতুন রথের মেলার আয়োজন করা হবে।
[খয়েরবাড়িতে বিশ্বমানের লেপার্ড সাফারি, শুরু তোড়জোড়]
যেমন কথা তেমন কাজ। চন্দ্র পরিবারের বর্তমান সদস্য ডা. শ্যামল চন্দ্র জানান, আজ থেকে প্রায় ৮৬ বছর আগে শ্যামাচরণ চন্দ্র, তাঁর পুত্র অন্নদা চন্দ্র-সহ পরিবারের কিশোর সদস্য ভোলানাথ চন্দ্র, বিনোদ বিহারী চন্দ্র, বিষ্টু চন্দ্র, আনন্দ চন্দ্র প্রমুখেরা ধুমধাম করে রথের প্রস্তুতি শুরু করে দেন। গড়ে ওঠে ১৫ ফুট উচ্চতার ৯ চূড়া বিশিষ্ট রথ। ১৯৭৮ সালের বন্যায় রথটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছর এই পরিবারের সদস্য শ্যামল চন্দ্র, সুব্রত চন্দ্র, তপন চন্দ্ররা উদ্যোগী হয়ে রথটিকে নবকলেবরে সংস্কার করেন। আগে এই রথে কোনও দেবদেবীর মূর্তি থাকত না। রথের দিন শালগ্রাম বা নারায়ণ শিলা পুজো করেই রথের দড়িতে টান দেওয়া হত। গতবছর রথের উদ্যোক্তারা পুরী থেকে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলভদ্রের মূর্তি এনে রথে প্রতিষ্ঠা করেন। রথের চূড়ায় স্থাপন করা হয় রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি। নির্মিত হয় রথের স্থায়ী ঘর।
বর্তমানে গ্রামে যে দেড় বিঘা জায়গায় বাজার বসে, সেটিও চন্দ্র পরিবারের সম্পত্তি। বাজারের ব্যবসাদারদের দানের টাকাতেই রথের মেলার আয়োজন করা হয় বলে চন্দ্র পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। এখন রথ ও উলটোরথের দিন এই বাজার ও বাজার সংলগ্ন এলাকায় বিশাল মেলা বসে। আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন। কিছু মানুষের অবজ্ঞা, অবহেলা ও অসহিষ্ণুতা থেকে যে আস্ত একটা মহামিলন ক্ষেত্র গড়ে উঠতে পারে চন্দ্র পরিবারের রথ তারই জ্বলন্ত নিদর্শন হয়ে রয়ে গিয়েছে।
[মহিলাকে পায়রার রক্ত খাইয়ে তান্ত্রিকের ঝাড়ফুঁক, মধ্যমগ্রামে শোরগোল]
The post ‘নিচু জাত’ বলে উচ্চবিত্তদের লাঞ্ছনা, হাওড়ায় চন্দ্র পরিবারের রথ যেন প্রতিবাদের নিশান appeared first on Sangbad Pratidin.