সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম জালিয়াতি করে বুথ থেকে টাকা হাতানো চক্রের হদিশ পেলেও, এখনও পুলিশের নাগালের বাইরেই মূল চক্রী৷ ৭ জনের ইউক্রেনীয় দলটির অন্যান্য সদস্যকে গ্রেপ্তার করা করলেও, ভিতালি ক্লিমচাক নামে একজন পলাতক৷ ঢাকা পুলিশের অনুমান, সে-ই মূল চক্রী৷ তাকে নাগালে পেতে ইউক্রেনীয় পাসপোর্টের নম্বর-সহ বিস্তারিত তথ্য বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে দিয়েছেন তদন্তকারীরা৷
[আরও পড়ুন: সীমান্ত সুরক্ষায় জোর, আগামী সপ্তাহে ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের বৈঠক]
রবিবার পর্যন্ত ভিতালির দেশ ছাড়ার তথ্য ছিল না অভিবাসন দপ্তরের কাছে।তাই তদন্তকারীদের ধারণা, স্থানীয় সহযোগীদের আশ্রয়ে লুকিয়ে আছে সে। প্রাথমিকভাবে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের দুটি বুথে জালিয়াতি ধরা পড়লেও পরে জানা গিয়েছে, আরও ৯টি ব্যাংকে এভাবেই টাকা জালিয়াতি হয়েছে৷ তবে ধৃত ৬ ইউক্রেনীয়র থেকে কোনও টাকা উদ্ধার না হওয়ায় পুলিশ নিশ্চিত, চক্রটি আরও বড় এবং মূল চক্রী ভিতালিই৷ এই ঘটনার পর বাংলাদেশে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে ব্যাংক জালিয়াতি। বিদেশ থেকে কলকাঠি নেড়েই এবার বাংলাদেশের এটিএম খালি করে দিচ্ছে জালিয়াতরা। যাতে উদ্বেগ বেড়েছে বাংলাদেশ পুলিশ৷
তদন্তকারী আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, গত জানুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রে এটিএম বুথে ‘জেক পর্টিন সিস্টেম’ নামে নতুন ধরনের এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এর সূত্র ধরে তদন্ত করে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ ‘হিডেন কোবরা’ জড়িত বলে শনাক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি তদন্ত সংস্থা। ‘ফাস্ট ক্যাশ ক্যাম্পেইন’ নামে ওই জালিয়াত সংস্থা আগাম তথ্য বাংলাদেশের পুলিশকেও জানায় মার্কিন সংস্থাটি। গত ৩০ মে বাংলাদেশে আসা সাত ইউক্রেনীয়র ইদের ছুটিতে বুথে রাখা বেশি পরিমাণে টাকা হাতিয়ে ৬ জুন ভারতে চলে যাওয়ার কথা ছিল। দেশীয় সহযোগীদের শনাক্ত করার পাশাপাশি হিডেন কোবরার নেটওয়ার্কও বের করার চেষ্টা করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তদন্তকারীরা। এর জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিচ্ছেন। বিশ্বের ৮০ শতাংশ এটিএম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এনসিআরের সহায়তাও নিচ্ছেন তাঁরা। ইউক্রেনের নাগরিকরা রুশ ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানে না। ফলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দোভাষী রাখতে হচ্ছে৷ গত ৩ জুন ছ’জনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলেও প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য রিমান্ডে নিতে পারেননি গোয়েন্দারা৷
[আরও পড়ুন: ২ বছরে পাঁচলাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মায়ানমার!]
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান রিপন জানান, ‘চতুর আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খোলেনি। তাই আমরা তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছি। দেশীয় লিংকও যাচাই করছি। প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো তদন্ত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও কম্পিউটার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, ‘পলাতক ভিতালিকে ধরতেও অভিযান চলছে। তার ব্যাপারে বন্দরগুলোতে এবং বিভিন্ন ইউনিটে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।