মেয়েরা পারবে না স্মার্টফোন ব্যবহার করতে। বড়জোর ক্যামেরাহীন মোবাইল ব্যবহার করতে পারে। নারী-নিয়ন্ত্রণের নতুন ছক রাজস্থানে।
‘ডিম না মুরগি কে আগে’– এমনতর কূটতর্কের ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ সমাধান বাতলে দিল রাজস্থানের জালোর জেলার চৌধুরী সম্প্রদায় অধ্যুষিত ‘সানধা মাতা পতি পঞ্চায়েত’। তর্কটিকে যদি এমন করে সাজানো হয়– নারীচরিত্র বেজায় জটিল বলেই অত্যাধুনিক মোবাইল ফোন তাদের দেওয়া উচিত নয়, বা ক্যামেরা-সম্পন্ন আধুনিক মোবাইলই যত নষ্টের গোড়া মেয়েদের ভুল পথে চালিত করতে– তবে এই পঞ্চায়েতের সাফ রায় হল– মোবাইল ও মেয়েদের বিচ্ছিন্ন রাখাই শ্রেয়। তবে একবিংশ শতকের প্রথম সিকি ভাগ পেরিয়ে এসে ফোন বস্তুটির যোগাযোগিক ভূমিকাকে তো আর পুরো অস্বীকার করা যায় না, তাই খানিক নমনীয় হয়ে বলা হয়েছে– ফোন রাখতে পারে মেয়েরা, শর্ত হল, সেই ফোনে কোনও ক্যামেরা থাকবে না। অর্থাৎ ফোনটিকে হতে হবে প্রাগাধুনিক।
স্মার্টফোন হলে চলবে না। যেসব মেয়ে লেখাপড়ার কারণে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে বাধ্য হয়, তাদের জন্য নিদান হল, বাড়ির বাইরে কোনওভাবে ফোন নিয়ে যাওয়া যাবে না। যত দোষ স্মার্টফোনের,তত দোষই নারী স্বাধীনতার। চুলা-চৌকা ও সংসারের হাজার কাজ, সন্তানধারণ ও সন্তানপালন, দরকারে পুরুষকে যৌনতা প্রদান করা ব্যতীত আর কি কোনও সদর্থক ভূমিকা আছে না কি মেয়েদের, যে, তাদের হাতে স্মার্টফোন দিতে হবে? কোনও ধরনের সামাজিক জমায়েত, বিয়েবাড়ি হোক বা প্রতিবেশীদের উঠোনে আড্ডা– কোথাও নেওয়া যাবে না স্মার্টফোন।
এই ‘নিষেধাজ্ঞা’ নিয়ে বলার কিছু নেই, আবার বলার অনেক কিছুই আছে। মেয়েদের পোশাক পরা নিয়ে জটিলতা যে-কারণে উদ্ভূত হয়, ঠিক সম-ধেঁায়াশাসম্পন্ন মানসিকতা থেকে ফোন নিয়ে কড়াকড়ি জারি হয়েছে। পুরুষ আধিপত্যের সমাজে পুরুষ বিধান দিয়ে দিচ্ছে মেয়েদের কী করণীয়, বা কী করণীয় নয়। যদি ধরে নেওয়া হয়, স্মার্টফোনের সুবিধা ব্যবহার করে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার যে-চালিয়াতি চলে এখন, তার বিরুদ্ধে গিয়ে ‘স্মার্টফোন’ নিষিদ্ধ করার কথা ভেবেছে এই ‘সান্ধা মাতা পতি পঞ্চায়েত’– তবে বিপরীতে বলার– এর সাজা কেন মেয়েদের দেওয়া হবে? ছল-চাতুরি যদি করে পুরুষেরা, যদি পুরুষের তরফে ইন্ধন থাকে অনৈতিক প্রস্তাবের, তাহলে সেই শাস্তি পুরুষদের প্রাপ্য। পোশাক বিতর্কেও বলা হয়– মেয়েরা খোলামেলা পোশাক পরলে নাকি ছেলেরা উত্তেজিত বোধ করতে পারে! কোন যুক্তিতে এ-কথা সাব্যস্ত হয়, বোঝা মুশকিল।
মেয়েদের ঘরের মধ্যে আটকে রাখলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। সেই সাবেক পরিকল্পনারই অংশ মেয়েদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে না-দেওয়া। কিন্তু যতবার আমরা এটি মেনে নিচ্ছি যে, ঘরের আঙিনায় সীমাবদ্ধ রাখলে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করা সোজা– ততবার কি আমরা পরোক্ষে এও স্বীকার করে নিচ্ছি না যে, মেয়েরা আত্মশক্তিতে অনেক বেশি বলীয়ান। রহস্য ও ভালবাসা, স্নেহ ও সম্প্রীতি, সাংসারিক গুণ ও সামান্যতা নিয়েই মেয়েরা আসামান্য। কোন আগুনবেড়ি তাদের রুখবে?
