তারেক রহমানের ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান’-এ যদি বাংলাদেশের ধর্মান্ধতা-বিরোধী লড়াইয়ের উল্লেখ না থাকে তাহলে তা স্রেফ সাজানো চিত্রনাট্য।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের ঢাকায় ফেরা বেশ নাটকীয় হল। এখন রাজনৈতিক নেতাদের কর্মসূচির পিছনে অনেক সময় পেশাদারি সংস্থার তৈরি চিত্রনাট্য থাকে। এক্ষেত্রেও সেরকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ঢাকার মাটিতে পা দেওয়ার পর তারেক যেভাবে জুতো খুলে মাটি স্পর্শ করেছেন, হাতে ‘দেশের মাটি’ তুলে নিয়েছেন এবং সংবর্ধনা সভায় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের কায়দায় ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান’ বলেছেন, তাতে এমনটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
মার্টিন লুথার বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম।’ বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার পর মার্টিন লুথারের স্বপ্ন অনেকটাই পূর্ণ সফলতার দিকে গিয়েছে বলে বলা যায়। গত শতকের সেই ছয়ের দশকেই মার্টিন লুথারের বার্তা স্পষ্ট ছিল। তিনি বর্ণবৈষম্য মুক্ত মার্কিন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন। মার্টিন লুথার চলে যাওয়ার পরে গত প্রায় ৬০ বছরে বর্ণবৈষমে্যর বিরুদ্ধে লড়াই বিশ্বজুড়েই অনেক এগিয়েছে। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাফ্রো-অামেরিকান প্রেসিডেন্ট ওবামার অধীনে অাট বছর অতিবাহিত করার পরেও কিছুদিন অাগে মার্টিন লুথারের ছবি নিয়ে অামেরিকার রাস্তায় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ অান্দোলন দেখা গিয়েছে। এখনও বিশ্বজুড়ে যে কোনও শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নাগরিক অধিকার রক্ষার অান্দোলনের একটি প্রতীক মার্টিন লুথারের সংশ্লিষ্ট ভাষণ। তারেক তঁার অনুকরণে ‘অাই হ্যাভ অা প্ল্যান’ ভাষণে কী বার্তা দিতে চাইলেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু হয়েছে।
অাবার তঁার উদ্ধৃতি নিয়ে একাংশের মধে্য সমালোচনাও শুরু হয়েছে। কারণ যে ধর্মান্ধতার শক্তি এখন বাংলাদেশকে কুরে কুরে খাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জোরালো ভাবে মুখ না খুলে কেন তারেক মার্টিন লুথারকে টানলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারেক যে-দলের নেতা, সেই বিএনপি-কে বাংলাদেশ শাসন করতে অতীতে দেখা গিয়েছে। তখনও তারা জামায়াতের মতো ধর্মীয় শক্তির সঙ্গে গঁাটছড়া বেঁধেই চলত। এবার বাংলাদেশের তথাকথিত ‘জুলাই বিপ্লব’-এর পরেও দেখা যাচ্ছে যে বিএনপি দেশের ধর্মান্ধ শক্তির সঙ্গেই অাপস করে চলছে।
অাগামী ১২ ফেব্রুয়ারি হতে চলা বাংলাদেশের ভোটে লড়তে দেওয়া হচ্ছে না অাওয়ামি লিগকে। লিগের ভোটকে কবজা করতে তারেক মরিয়া। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক মানুষের বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরেই লিগের সমর্থক বলে পরিচিত। যেহেতু লিগ ভোটে নেই, তাই এই অংশের ভোটের দিকে তাকিয়ে তারেক ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছেন কি না, সেই প্রশ্ন অনেকে তুলছে। তারেকের তাই স্পষ্ট করে জানানো উচিত তঁার এই পরিকল্পনার মধে্য বাংলাদেশের ধর্মান্ধ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়টি রয়েছে কি না। যদি না থাকে তাহলে এই ‘অাই হ্যাভ অা প্ল্যান’ পেশাদারি সংস্থার সাজানো চিত্রনাটে্যর একটি চমক ছাড়া কিছু নয়। সেক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা নিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার চর্চারও কোনও অর্থ নেই।
