shono
Advertisement
Bengali

বাংলায় কথা বললেই কি বাঙালি? কাকে বলে বাঙালি অস্মিতা?

‘ওপার’ বাংলার অচলাবস্থা।
Published By: Kishore GhoshPosted: 09:49 PM Dec 22, 2025Updated: 09:49 PM Dec 22, 2025

‘ওপার’ বাংলার অচলাবস্থা আমাদের বাঙালিয়ানা নির্ধারণের কঠিন ব্রতে উন্মুখ করছে। বাংলায় কথা বললেই কি বাঙালি? আর যুক্তিবাদ? 

Advertisement

‘৪১ নং গেছোবাজার, কাগেয়াপটি’-র বাসিন্দা শ্রীকাক্কেশ্বর কুচকুচে যে হ্যান্ডবিলের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, তা ভোলা অসম্ভব। ‘হিসাবী ও বেহিসাবী খুচরা ও পাইকারী সকল প্রকার গণনার কার্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন’ করতে সিদ্ধহস্ত শ্রীকাক্কেশ্বর কুচকুচে সেই বিজ্ঞাপনী ঘোষণার মাধ্যমে আসলে আমাদের ‘সাবধান’ করতে চেয়েছিল। ‘সাবধান! সাবধান!! সাবধান!!!’ কেন? শ্রীকাক্কেশ্বর তখন আপন ঠিকুজিকোষ্ঠী খুলে বসে। দাবি করে, সে হচ্ছে সনাতন বায়স বংশীয় দাঁড়ি কুলীন, অর্থাৎ দাঁড়কাক। কিন্তু হালফিলে অর্থের লোভে পাতিকাক, হেড়েকাক, রামকাক ‘প্রভৃতি নীচ শ্রেণীর কাকেরাও’ নানা ধরনের ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। কাজেই সতর্ক না হলে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে উপভোক্তাদের জন্য।

আপাতত আমরা এমনই একজন সৎ ও সুবুদ্ধিপরায়ণ ‘শ্রীকাক্কেশ্বর কুচকুচে’-র সন্ধানে উদ্‌গ্রীব– যে যুক্তির আতশকাচ বিস্তার করে আমাদের বলে দিতে পারবে, বাঙালিত্বর লক্ষণ– আরও সহজে বললে– কে ‘বাঙালি’ এবং কে বাঙালি নয়। বা, কে ‘কম’ বাঙালি ও কে ‘বেশি’ বাঙালি। বা, কারা ‘ভালো’ বাঙালি ও কারা ভালো বাঙালি নয়। এমন বিভাজনমুখী সার্চলাইট প্রক্ষেপণের প্রেক্ষাপটটি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।

মাঝে সতিনের মতো কাঁটাতার চলে গিয়েছে। নইলে ‘এপার’ এবং ‘ওপার’ বাংলার তফাতটি কী? আলো বলো, জল বলো, বাতাস বলো; ভাষা বলো, সাহিত্য বলো, সংগীত বলো– কীসে মিল নেই? ‘ওপার’ ফেলে আসার বেদনাকে তুলসী মঞ্চের প্রদীপ করে রেখে দিয়েছে ‘এপারে’-র বাঙালি। কিন্তু যখন তারা ‘ওপারে’ যায়, যে আতিথেয়তার ঢেউ ওঠে, তত বড় জলকল্লোল হয়তো পদ্মার বুকেও নেই। বেসুরো কিছু উপাদান সব কালে থাকে। বেখাপ্পা কিছু মানুষ সর্বত্র ধুনো দেয়। ‘এপার’ এবং ‘ওপার’ বাংলা এসব নিয়ে ভাবত, কিন্তু শুকিয়ে যেত না।
কিন্তু ওসমান হাদি-র মৃত্যুর পরে যে-বাংলাদেশের চালচিত্র খবরে ভেসে আসছে, সেই বঙ্গ-মানসকে কি এপার বাংলা চেনে, জানে? আমাদের মনে প্রশ্ন উঠছে– বাংলায় কথা বললেই কি ‘বাঙালি’ হওয়া যায়? রবীন্দ্রনাথ দুই বাংলাতেও বটবৃক্ষ হয়ে রয়েছেন। নজরুলও দুই বাংলার সম্পদ। কিন্তু কীভাবে তাঁদের পরশ মাথায় বুলিয়ে নিচ্ছি, তা বাঙালিয়ানা নির্ধারণের অলঙ্ঘনীয় মানদণ্ড।

সেটি না মেনে শুধু মাছ-ভাত খেলেই কি আর বাঙালি কোটায় জায়গা মিলবে? ‘ওপার’ বাংলায় যারা করুণ অচলাবস্থা ঘনিয়ে তুলেছে, তারা বাংলায় কথা বলে, কিন্তু তাদের ভাষা আমাদের অচেনা ঠেকছে কেন! মৌলবাদের যে-জবান তারা বলছে, তা কি আপামর বাঙালির ভাষা ছিল কোনও দিন, না হবে কোনও দিন? তফাতটি শৃঙ্খলা ও অনুশাসনের, তফাতটি গণতন্ত্রের। এমন নয়, এপার বাংলায় সমস্যা নেই। অব্যবস্থা এখানেও সাইক্লোনের মতো হানা দেয়। তবে এপারের বাঙালি-মনন ভাবনায় ও প্রকাশে, প্রতিবাদে ও জাগরণে বহুমুখীন। বহুকৌণিক যুক্তির চর্চায় তাই ঝোড়ো পর্ব কাটিয়ে ওঠে। এই তো ‘প্রকৃত’ বাঙালি অস্মিতা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মাঝে সতিনের মতো কাঁটাতার চলে গিয়েছে।
  • সেটি না মেনে শুধু মাছ-ভাত খেলেই কি আর বাঙালি কোটায় জায়গা মিলবে?
Advertisement