কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজের কর্মসূচি থেকে ‘মহাত্মা’ শব্দ, যা বিশ্বকবির দেওয়া, উঠিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপে বিজেপির রবীন্দ্রবিদ্বেষ স্পষ্ট।
দেশের বৃহত্তম সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ১০০ দিনের কাজের কর্মসূচির নাম আচমকা বদল করল কেন্দ্র। এতদিন প্রকল্পটিকে বলা হত ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন’ তথা ‘এমজিএনআরইজিএ’। এবার নাম বদলে করা হল ‘পুজ্য বাপু গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি’। অর্থাৎ, গান্ধীর নামে প্রকল্পটি থাকলেও বাদ পড়ল ‘মহাত্মা’ শব্দটি।
গান্ধীজিকে ‘বাপু’ নামে দেশ চিনলেও রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘মহাত্মা’। ১০০ দিনের কাজ তথা ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন’ প্রকল্পের নাম থেকে ‘মহাত্মা’ শব্দটি বাদ দেওয়া এক অর্থে রবীন্দ্রনাথকে অপমান করা বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন প্রকল্পের নাম বদলের প্রয়োজন হল সুষ্পষ্ট করে জানায়নি কেন্দ্র। প্রকল্পের নাম থেকে ‘মহাত্মা’ শব্দটি কেন বাদ পড়ল, তারও কোনও ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে মেলেনি।
সরকারি স্তরে ব্যাখ্যা না এলেও বিরোধীরা চুপ করে নেই। বিশেষভাবে সরব তৃণমূল কংগ্রেস। সম্প্রতি কর্নাটকের এক বিজেপি সাংসদ জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন।
উক্ত সাংসদ ‘জনগণমন’ নিয়ে রবীন্দ্রবিরোধীদের কুৎসাটি ফের সামনে এনেছিলেন। গানটি যে তিনি ব্রিটিশরাজকে স্বাগত জানিয়ে লেখেননি– তা রবীন্দ্রনাথের নিজভাষ্যেই রয়েছে। এই বিষয়টিকে হঠাৎ খুঁচিয়ে তোলার পিছনে যে কেন্দ্রের শাসক দলের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে– তা সংশয়াতীত। এরপর বিজেপির উদে্যাগে বঙ্কিমচন্দ্রর ‘বন্দেমাতরম্’কে যেভাবে মহিমান্বিত করা শুরু হল তাতেও স্পষ্ট রবীন্দ্রবিদ্বেষ। জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে ‘বন্দেমাতরম্’ পুরোটা গাওয়ার বিষয়ে যে আপত্তি উঠেছিল তাকে নতুন করে সামনে আনার পিছনে শুধু নেহরু বা কংগ্রেসকে নিশানা নয়, রবীন্দ্রনাথকে টেনে আনার বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য।
সংসদে ‘বন্দেমাতরম্’ নিয়ে যে বিতর্ক হল সেখানে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন বাংলার ভোটকে সামনে রেখেই বিজেপি এইসব করছে। বাংলার ভোটে ১০০ দিনের কাজ তথা কেন্দ্রের গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প একটি বড় ইস্যু। এই প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা টাকা বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্র। তা নিয়ে অনেকদিন ধরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। এ বার এই প্রকল্পের নাম থেকে রবীন্দ্রনাথের স্পর্শ বাদ দিয়ে গোটা বিতর্কটিকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে গেল তারা।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নানাভাবে বিদ্ধ করে কি বাংলায় বিজেপির পক্ষে কোনও রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করা সম্ভব? বাংলার ভোটে মেরুকরণের রাজনীতি করতে গিয়ে জাতীয় গান ‘বন্দেমাতরম্’কে ব্যবহার করতে চায় বিজেপি – এই অাখ্যানটির মানে বোঝা যায়। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির কাছে সম্প্রীতির প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ উগ্র জাতীয়তাবাদ বিরোধী। রবীন্দ্রনাথকে আক্রমণ করা মানে বাঙালির উদার মানবতাবাদী ভাবধারার প্রতীককে বিদ্ধ করা। বিজেপি কি ধারাবাহিকভাবে সেই কাজ-ই করতে চাইছে?
