shono
Advertisement
Indigo

বিমানসংস্থাকে আগেই সতর্ক করেনি কেন ডিজিসিএ? ইন্ডিগো-বিপর্যয়ে প্রশ্ন উঠছে

প্রশ্ন উঠছে সরকারের প্রস্তুতি ও নজরদারি নিয়ে।
Published By: Kishore GhoshPosted: 01:50 PM Dec 09, 2025Updated: 01:52 PM Dec 09, 2025

ইন্ডিগো-বিপর্যয় প্রশ্ন তুলে দিল সরকারের প্রস্তুতি ও নজরদারি নিয়ে। ঘটনা ঘটার আগে ‘ডিজিসিএ’-ই বা সংস্থাকে সতর্ক করেনি কেন?

Advertisement

গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া ইন্ডিগো-বিপর্যয় শুধুমাত্র উড়ান বাতিল বা বিলম্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সাধারণ যাত্রীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সময়সূচি, উৎসবের আনন্দ, চিকিৎসার জরুরি যাত্রা, প্রবীণ নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্য–সবকিছুকে তছনছ করেছে। অদ্ভুতভাবে, আন্তর্জাতিক পরিষেবায় বাতিল উড়ানের হার ছিল ১০ শতাংশেরও কম। কারণ, সেক্ষেত্রে রাজস্ব বেশি, নিয়মবিধি কঠোর, দায়বদ্ধতাও বেশি। অথচ দেশের অভ্যন্তরীণ আকাশপথে ইন্ডিগোর ব্যর্থতা যেন নজিরবিহীন। সংস্থার তরফে এই বিশৃঙ্খলার জন‌্য প্রযুক্তিগত সমস্যা, আবহাওয়া, সময়সূচির পরিবর্তন এবং নতুন ক্রু রোস্টারিং নিয়মের কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু আসল কারণটি হল, অসামরিক বিমান চলাচল নিয়ামক সংস্থা ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন’-এর (ডিজিসিএ) দুই ধাপে আনা নতুন ফ্লাইট ‘ডিউটি টাইম লিমিটেশন’ (এফডিটিএল) নীতিকে সংস্থার চূড়ান্তভাবে ভুল বোঝা ও ভুল প্রয়োগ। বিশ্বমানের সুরক্ষা নীতির সঙ্গে ভারতীয় বিমান পরিষেবায় সামঞ্জস্য আনতে ‘ডিজিসিএ’ পাইলটদের সাপ্তাহিক বাধ্যতামূলক বিশ্রাম ৩৬ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টা করেছে, রাতের ল্যান্ডিং সংখ্যা কমিয়েছে, রাতের ফ্লাইটে কাজের সময় বেঁধে দিয়েছে এবং ‘ব্যক্তিগত ছুটি’-কে আর বিশ্রামের অংশ হিসাবে গণ্য করা যাবে না– এমন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন চালু করেছে। ২০২৪ সালের জারি করা নিয়ম প্রয়োগের তারিখ ছিল ১ নভেম্বর ২০২৫। কিন্তু ইন্ডিগো এর জন‌্য কোনও প্রস্তুতি নেয়নি। সংস্থার সময়সূচি বলছে, গরমের মরশুমে যেখানে ১৪,১৫৮ ফ্লাইট চলত, সেখানে শীতে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫,০১৪টি। অথচ ফ্লাইট ডেকে রয়েছে মাত্র ৪,৫৫১ জন পাইলট। এই অসামঞ্জস‌্য শুধু অদূরদর্শিতা নয়, বিপজ্জনক অবহেলা।

এই সংকট আমাদের দেখিয়ে দিল, ভারতের বেসরকারি বিমান বাজার মূলত দু’টি সংস্থার হাতে নিয়ন্ত্রিত এক ‘ডুয়োপলি’। সেই বাজারের উপর কঠোর ও নিরপেক্ষ নজরদারি না-থাকলে, কোনও সংস্থার ভুলই মুহূর্তে দেশজোড়া বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের প্রতিক্রিয়া এসেছে ঘটনা ঘটার পর, যা আরও প্রশ্ন তুলছে সরকারের প্রস্তুতি ও নজরদারি নিয়ে। ঘটনা ঘটার আগে ‘ডিজিসিএ’-ই বা কেন সংস্থাকে সতর্ক করেনি? এমনকী, বিষয়টি সংসদ পর্যন্ত পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত সংকট নিয়ে সংস্থারও তেমন কোনও হেলদোল দেখা যায়নি।

পরে যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে তাও দায়সারা ও অস্পষ্ট। ইন্ডিগোর এই সংকট শুধুমাত্র একটি সংস্থার ব্যর্থতা নয়, এটি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাটিকেই প্রমাণ করেছে। এখন প্রয়োজন কড়া নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছ তদন্ত। এখনই সময় হল নীতি, নজরদারি এবং দায়বদ্ধতার নতুন মানদণ্ড তৈরি করার। ভারতীয় আকাশপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও অধিকার অগ্রাধিকার পাবে, এমন নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে। কারণ, নীতির শিথিলতা সবসময়ই প্রথম আঘাত হানে সুরক্ষায়, আর শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাত্রী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ভারতের বেসরকারি বিমান বাজার মূলত দু’টি সংস্থার হাতে নিয়ন্ত্রিত এক ‘ডুয়োপলি’।
  • পরে যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে তাও দায়সারা ও অস্পষ্ট।
Advertisement