shono
Advertisement

উদ্বেগের ইতি? ফ্যাবি ফ্লু ও ডেক্সামিথাজোন ওষুধেই করোনাকে হারাতে তৈরি হচ্ছে ভারত

সাধারণ করোনা আক্রান্ত ও মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ব্যবহার করতে হবে দু'টি আলাদা ওষুধ। The post উদ্বেগের ইতি? ফ্যাবি ফ্লু ও ডেক্সামিথাজোন ওষুধেই করোনাকে হারাতে তৈরি হচ্ছে ভারত appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:33 PM Jun 21, 2020Updated: 05:43 PM Jun 21, 2020

তবে কি শেষ হতে চলেছে দুশ্চিন্তার দিন? বিশ্লেষণে হীরালাল মজুমদার মেমোরিয়াল কলেজ ফর উইমেন-এর অধ্যাপক ঋত্বিক আচার্য

Advertisement

করোনা আবির্ভাবের পর অনেকগুলো মাস কেটে গিয়েছে। এখনও আতঙ্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। গোটা দুনিয়ার দু’শোরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড় আর্থ-সামাজিক সংকট এই বোধহয় প্রথম। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর প্রায় ৮৯ লক্ষ মানুষের শরীরে থাবা বসিয়েছে এই মারণ ভাইরাস। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৪ লক্ষের বেশি মানুষের। উদ্বেগ শুধু সেখানে নয়, সমস্যা হল ভারতের মতো অতি জনবহুল দেশে দ্রুতগতিতে বাড়ছে সংক্রমণ। সংক্রমিত দেশের তালিকায় ক্রমেই উর্ধ্বগামী আমাদের দেশ।

এ কথা কারও অজানা নয় যে এই রোগের ভ্যাকসিন আসতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে। লকডাউন অনির্দিষ্টকাল চালানো অসম্ভব বলে ক্রমান্বয়ে ছন্দে ফেরানো হচ্ছে জনজীবন। আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের হার। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকাই মূলত করোনার (Coronavirus) বিস্তারের জন্য দায়ী। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় Covid-19 প্রতিরোধে সফল ওষুধ আভিফ্যাভিরের অনুরূপ ওষুধ ফ্যাবি ফ্লু (Fabi Flu) আমাদের দেশে আগামী সপ্তাহ থেকে আসতে চলেছে। প্রস্তুতকারক সংস্থা গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস। এটিই সারা বিশ্বে সর্বপ্রথম সরাসরি সবচেয়ে সফল করোনা প্রতিরোধক ওষুধ।

[আরও পড়ুন: আর্টিমিসিয়া গাছের নির্যাস কি করোনার অব্যর্থ দাওয়াই? আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা]

Covid-19-এর উপসর্গ হিসেবে সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে বেশি জ্বর অথবা সর্দি-কাশি নিরাময়ে সফল হবে এই ওষুধ। গুরুতর পরিস্থিতির জন্য রয়েছে আরেক দাওয়াই ডেক্সামিথাজোন। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে আসা এই স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধকেও অব্যর্থ বলে মনে করা হচ্ছে। Fabi Flu বস্তুত অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ ফ্যাভিপিরাভির। ফ্যাভিপিরাভির মৌখিকভাবে অথবা ইন্ট্রামাস্কুলার ইঞ্জেকশন হিসেবে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়। যদিও Fabi Flu ব্র্যান্ডটি আসছে প্রাথমিকভাবে ট্যাবলেট হিসেবেই।

জাপানে এর ব্যবহার সর্বপ্রথম শুরু হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধী হিসেবে। ফুজি ফিল্ম ফার্মাসিউটিক্যালস এই ওষুধ প্রস্তুত করে। ২০১৪ সালে এই ওষুধ ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধী অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটি আবার আভিগান নামে জাপানে অতি পরিচিত। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার (DCGI) তরফে ছাড়পত্র গত ৩০ এপ্রিল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ওষুধের প্রয়োগমূলক গবেষণা শুরু করে গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস। গ্লেনমার্ক প্রাথমিকভাবে নিজস্ব গবেষণায় ওষুধের উপাদানগুলিকে ফ্যাভিপিরাভির নির্ধারণ করে এবং ওষুধ তৈরিতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের ১০টি প্রথম সারির সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের উপর তা প্রয়োগ করা হয় গবেষণার স্বার্থে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ১৫০জন রোগীর উপর চলে পরীক্ষা। ১৪ দিনের চিকিৎসা এবং ২৮ দিনের পর্যবেক্ষণ তাদের সাফল্যকে সুনিশ্চিত করে। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালসের সহ-সভাপতি সুশ্রুত কুলকামী আগেই জানেয়েছিলেন যে ইতিবাচক ফল পেলেই সরকারি অনুমতিক্রমে বাজারে আসবে এই ওষুধ।

এই ওষুধটি RNA পলিমারেজ উৎসেচককে প্রতিহত করে, যা ভাইরাসের প্রতিলিপিকরণের জন্য অতি আবশ্যক। এটি নির্বাচিত RNA ডিপেনডেন্ট RNA পলিমারেজ উৎসেচককে প্রতিরোধ করে। অপর এক মতে, এই ওষুধ ভাইরাসের RNA-এর মারাত্মক ট্রান্সভার্শন মিউটেশন ঘটায়, যার ফলে অতি দুর্বল ফেনোটাইপ বিশিষ্ট ভাইরাস গঠিত হয়। ফ্যাভিপিরাভির আদপে একটি প্রো-ড্রাগ যা দেহজ বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে সক্রিয় ফ্যাভিপিরাভির-রাইবোফিউরানোসিল -৫’-ট্রাইফসফেটে পরিণত হয়। মানুষের দেহে থাকা হাইপোজান্থিন গুয়ানিন ফসফোরিবোসাইলট্রান্সফারেজ (HGPRT) এই সক্রিয়করণে সহায়তা করে বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি এই ওষুধ কোনওভাবেই মানুষের দেহের DNA বা RNA-কে প্রভাবিত করতে পারে না। ফলে মানব শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাবের সম্ভবনা অতি সীমিত। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রায় ৯১% ক্ষেত্রে এই ওষুধ Covid-19 রোগীর চিকিৎসায় ফলপ্রসূ। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফ্যাভিপিরাভির প্রয়োগের পর CT স্ক্যান রিপোর্ট অসম্ভব ইতিবাচক।

ভারতবর্ষে ক্রমশ বাড়তে থাকা সংক্রমিতের সংখ্যার পাশাপাশি রাশিয়াতে এই ওষুধের প্রাথমিকভাবে ব্যাপক সাফল্য ভারতে এই ওষুধের কার্যকারিতার আশাকে ত্বরান্বিত করেছে। রাশিয়াতে এই ওষুধের প্রাথমিক প্রয়োগে ৩০০ জনের বেশি রোগী মাত্র চারদিনে প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (RDIF) প্রধান কিরিল ডিমিট্রিভের মতে, এই আভিফ্যাভিরের প্রয়োগেই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে রাশিয়ার জনজীবন। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই এই ওষুধের প্রায় ৬০ হাজার ডোজ পৌঁছে গিয়েছে রাশিয়ার বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে।

CSIR-এর অধিকর্তা ডঃ শেখর ম্যান্ডে এই ওষুধের বিষয়ে শুরু থেকেই খুব আশাবাদী ছিলেন। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমেই একমাত্র পাওয়া যাবে এই ওষুধ। ১০৩ টাকা দাম হতে চলেছে প্রতিটি ট্যাবলেটের। চিকিৎসার প্রথম দু’দিন ১৮০০ মিলিগ্রাম করে এবং পরবর্তী ১২ দিন দৈনিক ৮০০ মিলিগ্রাম করে এই ওষুধ খেলেই হবে সম্পূর্ণ রোগমুক্তি। মজার কথা হল, এই ওষুধের উপর গবেষণা চলাকালীনই এর নাম ভেবে রেখেছিলেন কর্তৃপক্ষ, আর সেই নামেই বাজারে আসছে এই ওষুধ। ৩ জুন সমস্ত রিপোর্ট জমা হওয়ার পর ছিল শুধুমাত্র ড্রাগ DCGI-এর ছাড়পত্রের অপেক্ষা। অবশেষে ১৯ শে জুন সবুজ সংকেত পেতেই বিষয়টি নিশ্চিত করে গ্লেনমার্ক কর্তৃপক্ষ; সমস্ত প্রতীক্ষার অবসান ঘটে।

কর্টিকো স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ডেক্সামিথাজোন নিয়েও সারা বিশ্বে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। ইতিমধ্যে চ্যাডক্স ভ্যাকসিন নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। তারই মধ্যে আবার ডেক্সামিথাশোন নিয়ে তাঁদের ইতিবাচক ঘোষণা। তাঁদের গবেষণায় প্রকাশিত যে ভেন্টিলেশনে থাকা ৩ ভাগের এক ভাগ রোগীর মৃত্যু আটকাতে সক্ষম এই ওষুধ। আবার অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা আছে এমন ৫-এর এক ভাগ রোগীকে সুস্থ করে তুলছে এই ওষুধ।

[আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফায় COVID-19’এর হানার আশঙ্কা, মনে করাচ্ছে স্প্যানিশ ফ্লু’র ভয়াবহ ইতিহাস]

প্রসঙ্গত, খুব বিপজ্জনক নয়, এমন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় এই ওষুধ কোনও ফল দিচ্ছে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমারজিং ইনফেকসাস ডিজিস ইন নাফিল্ড ডিপার্মেন্ট অফ মেডিসিন শাখার অধ্যাপক পিটার হরবির মতে, ডেক্সামিথাজোন হল Covid-19 বিরোধী প্রথম জীবনদায়ী ওষুধ। মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধের সাফল্যে উৎসাহিত সারা বিশ্ব। ব্রিটেনের মুখ্য বিজ্ঞান উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যালেন্স জানিয়েছেন, যে ডেক্সামিথাজোন হল প্রথম Covid-19-এ মৃত্যুর হার হ্রাসকারী ওষুধ। এবং গবেষকরা যে দ্রুত এর উপযোগিতা আবিষ্কার করেছেন তাতে তিনি উচ্ছ্বসিত। আমাদের ভারতেও অতি সুলভ এই ওষুধ, দামও যৎসামান্য।

The post উদ্বেগের ইতি? ফ্যাবি ফ্লু ও ডেক্সামিথাজোন ওষুধেই করোনাকে হারাতে তৈরি হচ্ছে ভারত appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement