বিদেশে নতুন গোলাপের পেটেন্ট থেকে কোটি টাকার ব্যবসা হলেও ভারতে আইন না-থাকায় রোজ-ব্রিডাররা অর্থ দুরস্ত, স্বীকৃতিও পান না।
শীত ক্রমশ জমে উঠছে বাংলায়। শীত মানেই বাংলার গোলাপ। সংবাদে প্রকাশ, 'বেঙ্গল রোজ সোসাইটি'-র আয়োজন ও উদ্যোগে এ-বছর 'অল ইন্ডিয়া রোজ শ্যে' প্রদর্শনীর হোস্ট সিটি হতে চলেছে কলকাতা। এবং সোসাইটি জানিয়েছে, এই গোলাপ-প্রদর্শনীতে ২৫০০-র বেশি বিশেষভাবে সংরক্ষিত 'কাট-রোজ' থাকবে। প্রদর্শনীতে টব-সহ গোলাপ গাছ আনার সমস্যা। তাই কাট রোজের প্রদর্শনী। এবং যে ২.৫০০ গোলাপের প্রদর্শনী হবে, তার মধ্যে 'বেঙ্গল ব্রিড' বা বাংলায় তৈরি গোলাপের সংখ্যাই বেশি। এসব নতুন প্রজন্মের গোলাপের মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ 'বীরেন্দ্রকৃষ্ণ গোলাপ', 'বহুরূপী গোলাপ', 'রয়্যাল বেঙ্গল গোলাপ', 'লতাদিদি গোলাপ' ইত্যাদি। বাংলায় তৈরি এসব গোলাপ বিশ্বজুড়ে কদর পাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইউরোপ-আমেরিকায় যাঁরা নতুন নতুন গোলাপ তৈরি করে তাঁরা সেসব নতুন গোলাপের পেটেন্ট থেকে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে। কিন্তু ভারতে এই বিষয়ে কোনও আইন না-থাকায় এখানকার রোজ-ব্রিডারর নতুন প্রজাতির গোলাপের জন্ম দিয়েও অর্থ দূরের কথা, স্বীকৃতিও পান না।
গোলাপের জন্ম দিয়ে স্বীকৃতি না পাওয়ার এই কাহিনি আমাদের মনে নিয়ে আসে অস্কার ওয়াইল্ডের এক বিখ্যাত গল্প। এক সাধারণ যুবক এক অতীব সুন্দরীর জন্মদিনে তাকে একটি গোলাপ কুঁড়ি উপহার দিয়ে তার হৃদয় জয় করতে চায়। তখন শীতের বরফে ঢেকে আছে ইংল্যান্ড---যুবকের গোলাপ বাগানে গোলাপের কোনও চিহ্ন নেই। একটি গোলাপ গাছ তাকে বলে, তার ডালে বসে কোনও নাইটিঙ্গেল পাখি তাকে সারা রাত গান শোনায়, তবে হয়তো একটি লাল গোলাপ ফুটতেও পারে। একটি ছোট্ট নাইটিঙ্গেল রাজি হয় তুষারপাতের মধ্যে গোলাপ ডালে বসে সারা রাত গান গাইতে। সেই পাখি গোলাপের কাঁটা বুকে ফুটিয়ে তার সমস্ত রক্ত গোলাপ গাছে ঢেলে দিয়ে ভোরের আলোয় একটি লাল গোলাপ ফুটিয়ে তুলে নিজে মরে যায়। গোলাপে নিয়ে যুবক ছুটে যায় যুবতীর কাছে। কিন্তু ততক্ষণে সেই যুবতী পেয়ে গিয়েছে এক ধনী যুবকের উপহার হীরের নেকলেস। সে ছুড়ে ফেলে দেয় সেই রক্তগোলাপ। গোলাপ কুঁড়ি হেরে যায় আর্থিক মূল্যে প্রবল উপহারের কাছে।
তবু এখনও ইউরোপের বহু সভ্য দেশে একটি গোলাপ কুঁড়ির গ্রহণ করার অর্থ, তোমার প্রেম গ্রহণ করলাম। হালে শিশিরভেজা গোলাপ কুঁড়ির রোম্যান্টিক আবেদন ক্রমশ নিভে আসছে। কারও কারও মনে পড়তে পারে 'হ্যারি ব্ল্যাক অ্যান্ড দ্য টাইগার' সিনেমার অরণ্যবাসী নিঃসঙ্গ শিকারি স্টুয়ার্ট গ্র্যাজারকে। অরণ্যকুটিরে একা থাকে। কয়েকটা পুরনো বই তার তাঁবুতে। একটি বইয়ের মধ্যে একটি শুকনো গোলাপ কুঁড়ি। তার ভেঙে যাওয়া প্রেমের স্মৃতি। সেই 'গোলাপ বালা' একদিন ফেরে হ্যারির অরণ্য তাঁবুতে। পুরনো বইয়ের পাতা খোলে-দেখতে পায় সেই মরে যাওয়া গোলাপ কুঁড়ি। ফিরে আসে প্রেমের স্মৃতি। প্রেমও?
