shono
Advertisement

Breaking News

National bestfriend day

বিশ্বশান্তির আকর দেশে দেশে বন্ধুত্ব, তা কি ইউটোপিয়া? প্রশ্নের মুখে ৮ জুন!  

বেদনাময় বন্ধুত্ব দিবসের উদযাপন।
Published By: Monishankar ChoudhuryPosted: 12:43 PM Jun 08, 2025Updated: 12:43 PM Jun 08, 2025

প্রিয় বন্ধুর প্রতি ভালবাসা প্রকাশের একটি আনুষ্ঠানিক দিন হিসেবে '৮ জুন' বিশ্বমহলে নন্দিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই দিনটির জনপ্রিয়তা বহুগুণে বেড়েছে। সেই হিসেবে দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তির বন্ধুত্বের মতো দেশে দেশে বন্ধুত্বও বিশ্ব শান্তির জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বিশ্ব-রাজনীতির দিকে  দৃষ্টি ফেরালে এই ধারণার যাথার্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। লিখছেন বুদ্ধদেব হালদার

Advertisement

১৯৩৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৮ জুন তারিখটিকে 'ন্যাশনাল বেস্ট ফ্রেন্ডস ডে' হিসেবে ঘোষণা করে। বন্ধুদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্দেশ্যে এ ছিল তাঁদের এক অভিনব প্রয়াস। দিনটি উদযাপন করার নেপথ্যে যদিও কোনও ঐতিহাসিক সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে, পরবর্তীতে অনেক দেশই এই প্রথাটি গ্রহণ করে। ভারত, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য-সহ বিশ্বের আরও বহু দেশেই 'ন্যাশনাল বেস্ট ফ্রেন্ডস ডে' পালিত হয়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই দিনটির জনপ্রিয়তা এখন বহুগুণে বেড়েছে। প্রিয় বন্ধুর প্রতি ভালবাসা প্রকাশের একটি আনুষ্ঠানিক দিন হিসেবে বর্তমানে '৮ জুন' বিশ্বমহলে নন্দিত। সেই হিসেবে দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তির বন্ধুত্বের মতো দেশে দেশে বন্ধুত্বও বিশ্ব শান্তি ও সৌহর্দ্যের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক বিশ্ব-রাজনীতির দিকে তাকালে এই ধারণার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এককালের অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্ব কি সত্যিই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শত্রুতায় পর্যবসিত হয়? বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা এক নতুন সমীকরণের মুখোমুখি হই।

যে দেশগুলিকে এতদিন নিজের বন্ধু ও সহযোগী ভেবে এসেছে ভারত, আজ সেই দেশগুলির একাংশ ভারত বিরোধিতায় মত্ত। এমনকী আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতেও পিছপা নয় তারা। সাম্প্রতিক অতীতে কানাডার মতো দেশ যার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ, তারা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে বারংবার। ভারত ও কানাডার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তবে বর্তমানে এই সম্পর্কে চিড় ধরেছে। কানাডা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে, বিশেষত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদ সংক্রান্ত ঘটনায় ক্রমাগত হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে আসছে। সাম্প্রতিক অতীতে 'হাউস অফ কমন্সে' দাঁড়িয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। খালিস্তানি জঙ্গি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলেন তিনি। যদিও ভারত এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে। কানাডার কাছে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের দাবি জানালেও কানাডা সেই প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। ফলস্বরূপ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এক সময়ের বন্ধুত্বের বন্ধন পরিণত হয়েছে পারস্পরিক সন্দেহে! যদিও ১৪ মার্চ ২০২৫-এ ক্ষমতায় এসে কানাডার নয়া প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি নতুন উদ্যমে আবারও ভারতকে পাশে পেতে চেয়েছেন।

ঐতিহাসিকভাবে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল ছিল মালদ্বীপ। সাম্প্রতিককালে তাদের নতুন সরকারের অধীনে ভারত বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হল মালদ্বীপের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। মালদ্বীপের নতুন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজ্জু তাঁর নির্বাচনী প্রচারে 'ইন্ডিয়া আউট' স্লোগান ব্যবহার করেছিলেন। যা স্পষ্টতই ভারত বিরোধী মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। ক্ষমতায় আসার পর তিনি মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। চিনের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'-এর অংশ হিসেবে মালদ্বীপে চিনের বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন চিনের দিকে আরও বেশি ঝুঁকতে উৎসাহিত করেছে মালদ্বীপকে। এই পরিবর্তন ভারতের জন্য বিশেষ উদ্বেগের। কারণ, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক প্রভাব ভারতের কৌশলগত স্বার্থকে প্রভাবিত করতে পারে।

১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পিছনে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। ভারত সবসময় বাংলাদেশকে তার 'প্রতিবেশী প্রথম' নীতির অধীনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। কিন্তু ২০২৪-এর জুলাই আন্দোলনের পর সামগ্রিক চালচিত্র সম্পূর্ণ পালটে গিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনে থাকা বর্তমান বাংলাদেশ ভারত বিরোধিতার এক চূড়ান্ত নিদর্শন। ভারতের পক্ষ থেকে বন্ধুত্বের বার্তা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি অপরপ্রান্তে। এমনকী সীমান্ত-বিরোধ ও তিস্তা জলবন্টন চুক্তি নিয়েও অযাচিত উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন সময়। বাংলাদেশের এই পরিবর্তন পূর্বেকার বন্ধুত্বের ধারণাকে বর্তমানে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে এককালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এখন শত্রু রূপে প্রকট।

বিশ্ব-রাজনীতির এই পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট 'বন্ধুত্ব দিবসে'র গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। অবশ্য এই প্রশ্ন কেবল ভারতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। বিশ্বজুড়ে বহু দেশের ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তনশীল সম্পর্কের চিত্র প্রতীয়মান। দেশগুলি তাদের জাতীয় স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রয়োজনে সেই সম্পর্কের চরিত্র রাতারাতি পালটেও ফেলে। ব্যক্তিগত জীবনে যেমন সৎ ও নির্ভরযোগ্য বন্ধু খুঁজে পাওয়া কঠিন, ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রকৃত অংশীদার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে এর অর্থ এই নয় যে বন্ধুত্বের কোনও মূল্য আদৌ নেই। বরং এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রেখেও মানবিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন আরও বেশি জরুরি।

আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের বন্ধুত্বের মূলমন্ত্রকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও প্রতিফলিত করা উচিত। বিশ্বাস, বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সম্মানই যার মূল ভিত হিসেবে পরিগণিত হবে। যদি এই মূল্যবোধগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রে কার্যকর হয়, তাহলে হয়তো 'সেরা বন্ধু' হয়ে উঠতে না পারলেও 'বিশ্বস্ত সহযোগী' হিসেবে একে অপরের পাশে থাকার একটা সুযোগ থাকবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • প্রিয় বন্ধুর প্রতি ভালবাসা প্রকাশের একটি আনুষ্ঠানিক দিন হিসেবে বর্তমানে '৮ই জুন' বিশ্বমহলে নন্দিত।
  • বিশ্ব-রাজনীতির এই পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট 'ন্যাশনাল বেস্ট ফ্রেন্ডস ডে'-এর গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতেই পারে।
  • আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বন্ধুত্বের মূলমন্ত্রকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও প্রতিফলিত করা উচিত।
Advertisement