shono
Advertisement

Breaking News

Occupation and Language

চিন্তার বৃত্তি, ভাষার সঙ্গে পেশার সংযোগ

বাংলা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সঘন আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া পথ কী!
Published By: Kishore GhoshPosted: 04:52 PM Aug 07, 2025Updated: 04:52 PM Aug 07, 2025

ভাষার সঙ্গে পেশা সরাসরি জড়িয়ে থাকতে পারে। নাও পারে। কিন্তু ভাষার সূত্রেই সংযোগ। তাতে আঘাত এলে– পেশায় প্রভাব পড়তে কতক্ষণ!

Advertisement

শাকিল আলির ২৫ পেরয়নি। রোজ সকাল ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরয়। মহানগরের সঙ্গে তার কমিউনিকেশন বলতে ট্রেন-রাস্তা। নিকটবর্তী রেলস্টেশন: ডায়মন্ডহারবার। বাড়ি থেকে তা প্রায় ঘণ্টাখানেকের পথ। প্রতিদিন ট্রেন ধরে যখন গড়িয়া স্টেশনে নামে– বেলা ১টা বেজে যায়। তারপর একটি স্থানীয় গ্যারাজে গিয়ে মোটরবাইকটি নিয়ে শুরু হয় উবেরের মতো অ্যাপ ক্যাবের ভাড়া খাটা।

যেমনই ভাড়া পাক, রাত পৌনে ১২টার মধ্যে শাকিলকে চলে আসতে হয় গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন গ্যারাজে। বাইক বাহনটিকে সেখানে গচ্ছিত রেখে, আবার ট্রেনে করে বাড়ি ফেরা। এই ট্রেন– শেষ ট্রেন। এটি ‘মিস’ করলে বাড়ি ফিরতে বিস্তর দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সেই ‘বিলাসিতা’ শাকিল দেখাতে পারে না। বাড়ি যেতে-যেতে রাত প্রায় ২টো বেজে যায়। শাকিলের আশঙ্কা: বাংলাদেশি সন্দেহে এই যে ধরপাকড় চলছে ও কোপ পড়ছে বাংলা ভাষার উপর, এর জেরে তার কি রুজিরোজগারে টান পড়তে পারে? হতে পারে যে-কাজ সে করে, তা লেখাপড়া সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলার ‘মাধ্যম’ যে বাংলা ভাষা! দিল্লি থেকে উড়ে আসা গেরুয়া দলের নেতারা এ-রাজ্যের সংখ্যালঘুদের দেখতে পারে না। প্রকাশ্যে উগরে দেয় বিষবাক্য-মাখা অসন্তোষ।

এবার কি তারা ভাষাকেও আক্রমণ করবে, শাকিলের মতো বাঙালি মুসলমান, যারা বাংলা ভিন্ন অন্য ভাষায় তেমন সড়োগড়ো নয়, তাদের কী হবে? শাকিলদের কথায় কখনও-কখনও ‘আরবি’ শব্দ চলে আসে, তাহলে কি স্বাভাবিকভাবে ঘটে চলা সেই ভাষা-সংমিশ্রণকে বন্ধ করে দিতে হবে? শাকিল কখনও বাংলাদেশ যায়নি, তবে পেশার সুবাদে অনেকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে, যাদের নিবাস বাংলাদেশে ছিল। শাকিল জানে না, তারা সীমান্ত পেরিয়েছে ‘বৈধ’ভাবে, না, অনুপ্রবেশকারীর মতো চোরাগোপ্তা পন্থায়! কিন্তু এটি বিলক্ষণ জানে যে, ‘বাংলা’ বললেই ‘বাংলাদেশি’ নয়। ‘বাংলা’ বলা মানুষ মানেই ‘অনুপ্রবেশকারী’ নয়। ট্রেনে করে রোজ ফেরার সময় সে বাংলায় কথা বলে। বাংলায় সংযোগ করে– এমন মানুষদেরই সহযাত্রী হয়। তাহলে প্রত্যেকে কি ‘বাংলাদেশি’ প্রতিপন্ন হল?

ভাষার সঙ্গে পেশা সরাসরি জড়িয়ে থাকতে পারে। নাও পারে। কিন্তু ভাষার সূত্রে সর্বব্যাপী যে-সংযোগ গড়ে ওঠে, সেই বাস্তুতন্ত্রের উপর আঘাত এলে– পেশায় প্রভাব পড়তে কতক্ষণ! শাকিলের মতো অনেকে– হিন্দু হোক বা মুসলমান– এই রাজ্যের মানুষ যারা, বাঙালি যারা– অ্যাপ ক্যাব চালিয়ে উপার্জন করে– দুশ্চিন্তার বৃত্তে লুটোপুটি খাচ্ছে এখন। বাংলা ভাষাটিই যদি রাজনৈতিক চক্রান্তে পিছনের সারিতে চলে যায়, তাহলে পেশার কী হবে? ভাঙাচোরা হিন্দি যাও-বা কেউ-কেউ বলতে পারে, ইংরেজিতে অনেকেরই সামান্যতম অধিকার নেই। অতএব এই সাজানো বাংলা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সঘন আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া পথ কী!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • যেমনই ভাড়া পাক, রাত পৌনে ১২টার মধ্যে শাকিলকে চলে আসতে হয় গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন গ্যারাজে।
  • ভাঙাচোরা হিন্দি যাও-বা কেউ-কেউ বলতে পারে, ইংরেজিতে অনেকেরই সামান্যতম অধিকার নেই।
Advertisement