shono
Advertisement
Winter

কেন কৃপণ শীত?

শীতের প্রত্যাবর্তনের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল কলকাতার বাঙালি।
Published By: Kishore GhoshPosted: 09:42 PM Jan 13, 2025Updated: 09:42 PM Jan 13, 2025

শীত, বিশেষ করে কলকাতায়, ক্ষণস্থায়ী। শীত যদি সত্যি বুঝত আধুনিক বাঙালি-মন, আরও একটু স্থায়ী ও দাতা হত আমাদের শহরে।

Advertisement

কবে চলে গিয়েছে ২০২৪-এর ১৫ ডিসেম্বর। সেটাই তো ছিল এই শীতের শীতলতম দিন। কলকাতার তাপ কমতে কমতে ছুঁয়েছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর শীত আসতে চাইলেও কিছুতেই গলতে পারছিল না। তার আসার পথে কোথাও ছিল না একচিলতে ফঁাকফোকর। আবহবিদরা নানা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কেউ কেউ আশ্বাস দিলেন, হতাশ হবেন না, শীত আর-একবার অন্তত ক’দিনের জন্য ফিরে আসবেই। কিন্তু কোথায় শীত! একমাস প্রায় কেটে গেল সেই ১৫ ডিসেম্বর থেকে। শীতের ছুরি ক্রমাগত ভোঁতা হচ্ছে তো হচ্ছেই।

শীতের প্রত্যাবর্তনের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল কলকাতার বাঙালি। আবহপণ্ডিতরা বাংলা ভাষার অব্যর্থ পঁ‌্যাচকোষে বললেন, আরে সে তো মাঝপথ থেকে চুরি গিয়েছে! শীত চুরি? সে আবার কী? হয় না কি এমন? আবহ-এক্সপার্টরা বললেন, চোখের সামনে দেখলাম শীত বেমালুম হাপিস। কিন্তু শীত যে চুরি গিয়েছে, চোরটা কে? ধরা গিয়েছে তাকে? আলবাত। পালাবে কোথায়? জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর, শীত চুরি করেছে নানাবিধ ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝাট। পশ্চিমি ঝঞ্ঝাই ক্রমাগত বাধা দিয়েছে শীতকে।

কিন্তু আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন হল শীতের। বলা যায়, সেলিব্রেশন যোগ্য ‘সেকেন্ড কামিং’। ১১ জানুয়ারির ভোররাতে কলকাতার তাপমাত্রা নামল ১২.৩ ডিগ্রিতে। কী করে এমন কাণ্ড ঘটল! ক্রিকেটের ভাষায় উত্তর দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। প্রকৃতি অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। পশ্চিমি ঝঞ্ঝা দারুণ ফিল্ডিং সাজিয়েছিল। কোথা দিয়ে গলবে শীত? এতটুকু ফঁাক নেই। কিন্তু চতুর, সুদক্ষ ব্যাটার প্রকৃতি। ব্যাকফুটে গিয়ে নিখুঁত প্লেসমেন্ট। শীতের গোলা ঠিক গলে বেরিয়ে এসে বাঙালির হাড়ে আরও একবার কঁাপন ধরল। কলকাতার রাত-পার্টি আরও একবার সেঁকে নিল নিজেকে বারবিকিউ রাতের অঁাচে। মরশুমের শীতলতম কলকাতা আরও একবার উপভোগ করল ওয়াইন আর সেঁকা মাংসের গন্ধ হিম আকাশের তলায়।

তবে সন্দেহ নেই, শীতের শেষ এল বলে। শীত, বিশেষ করে কলকাতায়, বড্ড ক্ষণস্থায়ী। বলতে গেলে, আসে আর যায়। আর প্রতি বছর বলে, পথে হল দেরি। একটা সময় ছিল যখন বাঙালির কাছে শীত এমন উপভোগ্য হয়ে ওঠেনি। কারণ, অধিকাংশ বাঙালি তখন শীতে জবুথবু থাকত। আর দার্জিলিং ছিল শীতে উপেক্ষিতা। এখন বাঙালি শীতে দীক্ষিত। শীত পড়লে বাঙালি যায় তুষারপাতে মজতে। শীতের হি হি-র মধ্যে এই যুগের বাঙালি খুঁজে পেয়েছে তার আনন্দের হো হো। কিন্তু শীত বোঝেনি এই নতুন বাঙালির শীতপ্রিয়তা।

কলকাতার শীত এখনও কৃপণ। এখনও তার পথে হয় দেরি। শীত কবে বুঝবে এই নতুন বাঙালির শীতকাল? কবে বুঝবে, তার তীব্রতাই নতুন বাঙালির নব‌্য যাপনের উল্লাস উষ্ণতা? তার শীতের রাত পার্টি? তার শীতের বারান্দায় বারবিকিউ? তার শীতের কোহল-কল্লোল, গান, আড্ডা? শীতের ভ্রমণ কুয়াশা আর তুষারের দেশ? শীত যদি সত্যি বুঝত আধুনিক বাঙালির মন, তাহলে সে আরও একটু স্থায়ী ও দাতা হত আমাদের শহরে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কিন্তু আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন হল শীতের।
  • কলকাতার শীত এখনও কৃপণ। এখনও তার পথে হয় দেরি।
Advertisement