অর্ণব আইচ: NRS হাসপাতালের সামনে থেকে তাড়া করে পামার বাজার। ধাওয়া করে এন্টালিতে গণপিটুনিতে (Lynching) কিশোর খুনের তদন্ত শুরু করে পুলিশ তৈরি করল ‘রুটম্যাপ’। সেই অনুযায়ী খুনের ঘটনাটির পুনর্গঠন করছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় অন্তত ১৫ জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এন্টালি থানা (Entally PS) ও লালবাজারের গোয়েন্দা আধিকারিকরা যৌথভাবে এই ঘটনার তদন্ত করছেন। শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে খুনিদের।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে পূর্ব কলকাতায় এন্টালি এলাকায় ঘটে এই ঘটনাটি। এন্টালির পামার বাজার এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় মহম্মদ সোনু নামে ১৬ বছর বয়সের ওই কিশোরকে। প্রায় তিনশো মিটার তাড়া করার পর চোর সন্দেহে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তার কান, মাথা, গলা, হাত সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত লাগে। গলার একপাশে আঘাত অত্যন্ত গভীর। শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও ক্রমাগত রক্তপাতের ফলেই মৃত্যু হয়েছে কিশোরের। এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে একটি সিসিটিভির ফুটেজ (CCTV Footage) পুলিশ উদ্ধার করেছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সিসিটিভিতে ওঠা অভিযুক্ত ‘খুনি’দের মুখ স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।
[আরও পড়ুন: জীবে প্রেম! পরম যত্নে কুকুরের ভাঙা পায়ে প্লাস্টার করলেন হাসপাতালের ডেপুটি সুপার]
পরিবার সূত্রে পুলিশ জানতে পারে যে, দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ট্যাংরার ডি সে দে রোডের ক্যাম্প বসতির ঘর থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বের হয় সোনু। ওই দুই বন্ধু পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে জানায়, রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ তারা ঘুরতে ঘুরতে এনআরএস হাসপাতালের কাছে আসে। এখানেই কয়েকটি বন্ধ দোকানের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল তরা। তখনই কয়েকজন যুবক তাদের প্রশ্ন করে, তারা এখানে ঘোরাঘুরি করছে কেন? বিষয়টি নিয়ে এনআরএস হাসপাতালের বাইরে সোনুদের সঙ্গে ওই যুবকদের বচসা বাধে। সেখানে তারা সোনুদের মারধর করে খুনের হুমকি দেয়। তারা তিন কিশোরকেই তাড়া করতে থাকে। শিয়ালদহ ফ্লাইওভারের পাশে একটি গলি দিয়ে তারা সারি বেঁধে থাকা ভাতের হোটেলের সামনে দিয়ে দৌড়ে ফ্লাইওভারের এক প্রান্তে বি আর সিং হাসপাতালের কাছে আসে। দূর থেকে মারমুখী যুবকদের দেখে শিয়ালদহ (Sealdah)স্টেশন চত্বরে ফলবাজারের দিকে দৌড়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে যায় সোনুর দুই বন্ধু।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় ফিরেই চিকিৎসার জন্য SSKM-এ গেলেন ত্রিপুরায় আক্রান্ত TMC সাংসদরা]
পুলিশের মতে, গাছের নার্সারির দোকানের সামনে দিয়ে সোজা দৌড়তে শুরু করে সে। শিয়ালদহ রেলব্রিজের উপর দিয়ে সোনু দৌড়তে থাকে। সোজা এন্টালির পামার বাজারের দিকে দৌড়য় ওই কিশোর। যেহেতু সোনু পামার বাজার পেরিয়ে ট্যাংরার ডি সি দে রোডের বাসিন্দা, সম্ভবত সেই কারণেই প্রাণে বাঁচতে সে পালানোর জন্য ওই রাস্তাই বেছে নেয়। মৃত্যুর আগে সোনু জানাতে পেরেছিল, ৬ তরুণ মিলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে। পামার বাজারের কাছে একটি মালবাহী গাড়ির পার্কিং লটেই তাকে ধরে ফেলে অভি়যুক্তরা। তাকে কোনও ধারালো অস্ত্র ও পড়ে থাকা ফ্লোট টাইলস দিয়ে আঘাত করা হয়। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতে সে রক্তাক্ত অবস্থায় ৩০ মিটার দৌড়য়।
পুলিশের ধারণা, যারা তাড়া করে সোনুকে খুন করেছে, তারা চুরি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। মূলত বন্ধ থাকা দোকান থেকেই তারা চুরি করে। খুনিরা মাদকাসক্ত, এমন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গভীর রাতে ওই কিশোরদের দেখে খুনিদের ধারণা হয়, ওই অঞ্চলে তারা চুরি করতে এসেছে। সেই কারণেই সোনুদের উপর হামলা চালানো হয়। সোনুর দুই বন্ধু, তাকে যে যুবকরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান, যে ব্যক্তিরা রাতে এনআরএস হাসপাতালের কাছ থেকে তাদের তাড়া করতে দেখেছিলেন, সেই প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে অভিযুক্ত যুবকদের চেহারার বিবরণ জানার চেষ্টা হচ্ছে। খুনিদের সন্ধানে এন্টালি ও ট্যাংরার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।