shono
Advertisement

শিল্পীর মুক্ত উদযাপনে শিল্পের গণমুক্তি, বার্তা বেহালা আর্ট ফেস্টের

মুক্ত ভাবনার সেই বার্তাই মূর্ত হয়ে উঠল বেহালা আর্ট ফেস্টের চতুর্থ পর্বে।
Posted: 11:49 AM Feb 03, 2023Updated: 03:03 PM Feb 03, 2023

সরোজ দরবার: ঘেরাটোপ। বন্দিত্ব। নিষেধাজ্ঞা ও অনুশাসন। অদৃশ্য সব সুতো যেন আমাদের অলক্ষেই আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। সেই বন্ধন কাটিয়ে আমরা তবু শেষমেশ মুক্তিরই প্রত্যাশী। শিল্পীর কল্পনাই আমাদের পৌঁছে দিতে পারে সেই কাঙ্ক্ষিত মুক্তির ঠিকানায়। মুক্তির আঙ্গিকে মুক্ত চিন্তা, মুক্ত ভাবনার সেই বার্তাই মূর্ত হয়ে উঠল বেহালা আর্ট ফেস্টের (Behala Art Fest) চতুর্থ পর্বে। ‘আনবাউন্ড’- এই বিষয়কে অবলম্বন করেই শহরে যেন শিল্পের মরশুম। যেখানে একদিকে অনশ্বর চাহনি নিয়ে জেগে আছেন স্পর্ধিত ঋত্বিক ঘটক (Ritwik Ghatak)। অন্যদিকে নীল আকাশের নিচে মানুষের বেদনার ভাষা নিয়ে শতবর্ষেও চিরজাগর মৃণাল সেনের সৃষ্টি। একদিকে কাঁটাতারে আটকে যাওয়া কত না দেশের পতাকা! অন্যদিকে লালনের গান ছুঁয়ে চেতনার গহন পথে আধ্যাত্মিক মুক্তির অনুসন্ধান।

Advertisement

পরিত্যক্ত মাটির ভাঁড়ে যেমন জন্ম-মৃত্যু-বন্ধনমুক্তির বার্তা নিহিত, তেমনই চুলের বিনুনিতেই যেন বাঁধা বন্ধন আর মুক্তির গান। শিল্পের উন্মুক্ত পরিসরে মুক্ত ধারণার এ যেন এক ছকভাঙা উদযাপন। মুক্তি শব্দেরই ম্যাজিক এমন যে, তা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে। বেহালার এই শিল্প-সম্মিলনে তাই মুক্তির ধারণাকে মূর্ত করে তোলা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সময়ের অন্তর্গত বাসনার সঙ্গে তা যেন একরকমের যোগসূত্র রচনা করছে। আবার নির্দিষ্ট জায়গার ঘেরাটোপ ছেড়ে এই যে শিল্পের প্রকাশ তা যেন শিল্প ও শিল্পীর মুক্তির দ্যোতক। সে কথা জানিয়েই বেহালা আর্ট ফেস্টের আহ্বায়ক শিল্পী সনাতন দিন্দা বললেন, ‘‘সাধারণত শিল্পকে আমরা একটা চৌহদ্দির মধ্যে আটকে ফেলি। একধরনের আভিজাত্যে বা এলিটিসিজমের ঘেরাটোপে বন্দি করে ফেলি। কিন্তু শিল্প তো শুধু তা নয়। শিল্প মানুষের সান্নিধ্য চায়। মানুষও শিল্পের স্পর্শ চায়। এই যে উন্মুক্ত পরিসরে শিল্পের বিকাশ, শিল্পিত আয়োজন, এ আসলে একরমের সার্বিক মুক্তির কথাই বলছে। ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে শিল্পকে মানুষের কাছে, মানুষের জন্য হয়ে ওঠার পরিসর দিচ্ছে। শিল্পেরও বিভিন্ন মাধ্যমে যে যোগাযোগ, সেই মুক্তির কথাও বলছে।”

[আরও পড়ুন: পাঠান বুঝিয়ে দিল দেশটাকে সহজে কবজা করা যাবে না: অনির্বাণ ভট্টাচার্য]

আক্ষরিক অর্থেই এ যেন শিল্প ও শিল্পীর গণমুক্তির এক আধুনিক পরিসর। বেহালা ১৪ নং ব্যাস স্ট্যান্ডের পাশে দুটো গলি জুড়ে অনেকগুলো ঘরের দেওয়াল যেভাবে ছবিতে সেজে উঠেছে ও খোলা পরিসর যেভাবে জায়গা হয়ে উঠেছে শৈল্পিক ইনস্টলেশনের, তা কোনও বাঁধাধরা অ্যাকাডেমির সিলেবাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিন্তু প্রকৃতির থেকে বড় অ্যাকাডেমি আর কী হতে পারে! শিল্পের এই খোলা পরিসর সোচ্চারে সে-কথাই বলতে থাকে দর্শককে। শেষ পর্যন্ত যদিও মুক্তির সীমানাও হয়তো মেলে না। কোথাও একটা সীমাবদ্ধতা মানুষকে মেনেই নিতে হয়। তবু এই যে বন্ধন মাঝেই মুক্তির সন্ধান, এবং তা-ও মুক্ত পরিসরে, এই মুক্তি সম্ভাবনা একমাত্র শিল্পই জাগিয়ে তুলতে পারে। হয়তো অতিমারী পর্ব আমাদের উপর যেভাবে বন্দিত্ব আরোপ করেছিল, তাতে এই মুক্তির ভাবনা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সে কথাই জানালেন আর্ট ফেস্টের অন্যতম মডারেটর দেবরাজ গোস্বামী।

[আরও পড়ুন: পাক চ্যানেলে দেখানো হল আথিয়া-রাহুলের বিয়ে, সলমনের পালা কবে? ঠাট্টা দুই সঞ্চালকের]

আর এক মডারেটর শমীন্দ্রনাথ মজুমদার যেমন তুলে ধরলেন ফিলিপিন্সের (Phillipines) শিল্পী মেলিসার শিল্পসৃষ্টির কথা। যেখানে একান্তেই কেউ নিজের মনের গোপনতম অনুভূতিটি লিখে ফেলতে পারবেন। সেই ব্যক্তির অনুভূতি আবার মিশে যাবে সমগ্রের অনুভবে। শমীন্দ্রনাথ নিজেও লাট্টু ও লেত্তির মাধ‌্যমে ইতিহাস ও সমকালের পুনরাবৃত্তি এবং সেই সূত্রেই বন্ধন ও মুক্তিকে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন প্রমিতি হোসেন, তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর দেশের রিকশা-চিত্রের ঐতিহ্যকে। শিল্পী অর্পণ সাধুখাঁর কাজ যেমন আবার শিল্পের আঙ্গিকেই আমাদের মুখোশহীন যে সত্তা তারই সার্থক পরিচায়ক। মোট ১৮ জন শিল্পী এভাবেই অনুবাদ করেছেন মুক্ত ভাবনাকে, মুক্ত পরিসরে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যার সাক্ষী হতে পারবেন শহরবাসী। শিল্প আর মানুষের এমন সম্মিলন প্রকৃত প্রস্তাবে এই বন্ধনদীর্ণ সমাজে একরকম সংলাপ-সম্ভাবনা। যে সংলাপ বলে বন্ধন হয়তো ভবিতব্য, তবু তা অনতিক্রম্য নয়। বর্তমানে যা শিল্পীর কল্পনা, আগামীতে তাই-ই হয়ে উঠতে পারে নতুন দিনের নতুন মানুষের মুক্তির আলো। এ শহরে শিল্পের অভিনবত্ব ও মৌলিকত্ব ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে বলে যদি বাঙালির আক্ষেপ থাকে, তবে তা দূর করে নতুন পথ আর ভাবনারই সন্ধান দেবে শহরের শিল্পের এই মুক্তমঞ্চ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement