shono
Advertisement

The Kashmir Files Review: বিতর্ক পেরিয়ে কাশ্মীরি পণ্ডিদের দুঃখের কাহিনি তুলে ধরতে পারল ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’?

ছবির ভিত সরকারি সংগ্রহশালায় বন্দি করে রাখা 'কাশ্মীর ফাইলস' নামের বিস্ফোরক নথি।
Posted: 08:54 PM Mar 11, 2022Updated: 08:54 PM Mar 11, 2022

নির্মল ধর: বছর দুই আগে বিধু বিনোদ চোপড়া ‘শিকারা’ নামে একটি ছবি বানিয়েছিলেন। যেখানে শ্রীনগর থেকে কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিতদের বিতাড়নের ঘটনটি ঠাঁই পেয়েছিল। সেই সঙ্গে একটু মিষ্টি প্রেমের গল্পও রেখেছিলেন। হিন্দু পণ্ডিতরা বিতাড়িত হলেও, স্থানীয় অধিকাংশ মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষরা যে সেই ঘটনার নেপথ্যে নেই সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার বিবেক অগ্নিহোত্রী ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ (The Kashmir Files) নামে যে ছবিটি তৈরি করেছেন, সেখানে রয়েছে প্রায় তিন দশক আগের ঘটনার প্রকৃত সত্য।

Advertisement

ছবির ভিত সরকারি সংগ্রহশালায় বন্দি করে রাখা ‘কাশ্মীর ফাইলস’ নামের বিস্ফোরক নথি।
এই নথির উপর ভিত্তি করেই নানা চরিত্র ও ঘটনা তুলে এনে সিনেমার পর্দায় দেখিয়েছেন পরিচালক। ১৯৯০ সালের পয়লা জানুয়ারি সমগ্র কাশ্মীরে (Kashmir) যে পাঁচ হাজার হিন্দু পণ্ডিত ব্রাহ্মণদের গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল – সেই ‘আজাদি’কামী জেহাদিদের সহিংস স্লোগান ছিল ‘রালিব’, ‘গালিব’ ও ‘চালিব’ যার সোজা সাপটা অর্থ – “জেহাদি হও, না হয় মরো, নইলে কাশ্মীর ছাড়ো।” সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা মাত্র দু’হাজার, কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা ৫ থেকে ৬ হাজার।

ছবিতে দেখানোও হল অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে জেহাদিদের হিংস্র স্লোগান “কাশ্মীর শুধু কাশ্মীরি মুসলমানদের, এখানে থাকতে হলে আজাদিকে সমর্থন করো, নইলে কাশ্মীর হবে হিন্দু পুরুষহীন, শুধু হিন্দু মহিলারা থাকবেন। বাড়ি, ঘর জ্বালিয়ে, পুলিশ সেনাদের পোশাক পরে নাদিমার্গে ২৪ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে জবাই করেছে তথাকথিত জেহাদিরা। বিবেক অত্যন্ত সাহসের সঙ্গেই ঘটনাগুলোর হিংস্রতা ও ভয়াবহ মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন।
বিরতির ঠিক আগে গাছে গাছে পণ্ডিতদের মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখার মতো নৃশংস দৃশ্য দেখলে কষ্ট হয়, দুঃখ হয়, বিরক্ত লাগে, রাগ হয়।

[আরও পড়ুন: ‘বাহুবলী’র সাফল্যের সঙ্গে কি ‘রাধে শ্যাম’ পাল্লা দিতে পারবে? জবাব দিলেন প্রভাস]

কাহিনির কেন্দ্রবিন্দু প্রবীণ পণ্ডিত পুষ্করনাথ (অনুপম খের)। তাঁরই পরিবার, মেয়ে, ছেলে খুন হয়। একমাত্র ছোট নাতি কৃষ্ণ(দর্শন) বেঁচে থাকে। পুষ্করকে আশ্রয় নিতে হয় উদ্বাস্তু ক্যাম্পে। ৩২ বছর পর দাদুর চিতাভস্ম শ্রীনগরের পরিত্যক্ত বাড়িতে পৌঁছতে তার সঙ্গে আসে দাদুর চার বন্ধু, দু’জন পুলিশকর্তা(মিঠুন চক্রবর্তী ও পুণীত ইসার), একজন সাংবাদিক, আর একজন প্রতিবেশী। কৃষ্ণের সঙ্গে এঁদের কথোপকথনের মধ্য দিয়েই অতীত ও বর্তমান উঠে আসে।
বিবেকের চিত্রনাট্য শুধু স্বাধীন কাশ্মীর পাবার হিংস্র আন্দোলন দেখায়নি, দেখিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবতাবাদী গোষ্ঠী, নরম ও চরমপন্থীদের সুবিধাবাদী কাজকর্মও। সুবিধা ভোগ করার জন্য ‘আজাদি আন্দোলন’ জিইয়ে রাখার বিষয়টিও বাদ যায়নি।

একসময় কাশ্মীরে অধিকাংশ সরকারি উচ্চপদে কাজ করেছেন শিক্ষিত হিন্দু পণ্ডিতরা। মুসলমানদের রাগের অন্যতম কারণও তা দেখানো হয়েছে। একটাই অস্বস্তি, অতীতের ঘটনা যেভাবে দেখানো হয়, বর্তমানেও দৃশ্যের অন্তত লোকেশনের তেমন পরিবর্তন ক্যামেরায় উঠে আসে না। ভিজ্যুয়ালের জোর নাটকীয়তায়, ঘটনার তীব্রতায়।

শ্রীনগর থেকে সাংবাদিকের পাঠানো সব খবর প্রকাশ পায় না সরকারি নিয়মের বেড়াজালে। তা স্বীকারও করে নেওয়া হয়। যখন এক বন্ধু বলে ওঠেন, “মিথ্যা খবর প্রচারের চাইতে সত্য খবর লুকোনো আরও বড় অপরাধ।” এখন তো সংবাদপত্র ও টিভির পর্দায় সত্য খবর খুঁজে পাওয়া মুশকিল, মিথ্যার প্রচার শুধু। প্রচার মাধ্যমের এমন অবনতির দিকে সরাসরি আঙ্গুল তোলার জন্য ধন্যবাদ। তবে হ্যাঁ, প্রায় তিন ঘণ্টার এই ছবিকে আড়াই ঘণ্টা পরিধিতে আটকাতে পারলে পরিচালকের বক্তব্য আরও তীব্র ও তীক্ষ্ণ হতে পারত। ভূস্বর্গ কাশ্মীর যে এখন প্রায় ভূ-নরকে পরিণত। ৩৭০ ধারা বিলোপের পর সেখানে কি সত্যিই শান্তি ফিরেছে? সেটা জানতে পারলে ভাল লাগত।

প্রকৃতির অকৃপণ সৌন্দর্য যে কাশ্মীরকে মনোহারী করে, এখন সেখানকার অবস্থা কেমন বড় জানতে ইচ্ছে করে। বিবেক (Vivek Agnihotri) সেদিকে একটু আলোকপাত করতে পারতেন। আবার ক্ষমতাপ্রিয় উঠতি মানবাধিকার কর্মী রাধিকার(পল্লবী যোশী) বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে কৃষ্ণকে জুড়ে দেওয়ার কাজটি অস্পষ্ট রইল। তবে এই ছবি কাশ্মীরের বাস্তব তুলে আনার কাজে ঈর্ষণীয়ভাবে সফল। পুষ্করের চরিত্রে অভিনয় করে বিবেকের এই কাজটি অনেকটাই সহজ করে দিয়েছেন অনুপম খের (Anupam Kher)। তাঁর কিঞ্চিৎ রোগাটে বিধ্বস্ত চেহারার সঙ্গে প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছে দুর্দান্ত অভিনয়। এমনকী আমাদের প্রিয় মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) পুলিশ অফিসার ব্রহ্ম দত্তর চরিত্রে বেশ ব্যক্তিত্ব এবং আধিপত্য নিয়ে অভিনয় করেছেন।

জেহাদি বিটুর চরিত্রে চিন্ময় মান্ডলেকার, রাধিকার ভূমিকায় পল্লবী যোশী-সহ ছোট-বড় সব চরিত্রের শিল্পীরাই সুন্দর কাজ করেছেন। আসলে এই ছবি স্পষ্ট করেই বলে দেয়, বাণিজ্যিক ছকের বাইরে সিনেমার অন্য একটা সামাজিক ভূমিকা আছে, থাকে, থাকা উচিত। বিবেক বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়েই বানিয়েছেন এই সামাজিক দলিল, যেটি শুরুর আগে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ “ছবির চরিত্র ও ঘটনা সব কাল্পনিক, বাস্তবের সঙ্গে মিল থাকলে সেটা কাকতালীয়” এমন কার্ডটি দেখানো হয়নি।

  • ছবি – দ্য কাশ্মীর ফাইলস
  • অভিনয় – অনুপম খের, মিঠুন চক্রবর্তী, দর্শন কুমার, পল্লবী যোশী, চিন্ময় মাণ্ডলেকর, প্রকাশ বেলাওয়াড়ি, পুণীত ইসার
  • পরিচালনায় – বিবেক অগ্নিহোত্রী

[আরও পড়ুন: ২০ কোটি টাকার বিনিময়ে বিয়ে করতে চাইলেন অনুরাগী! কী প্রতিক্রিয়া কার্তিক আরিয়ানের?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement