shono
Advertisement
Rappa Roy

জমাটি অ্যাকশন থেকে কমেডির ছররা! কতটা জমল রাপ্পা রায়ের রুপোলি পর্দায় আবির্ভাব?

এই প্রথম বাংলা ছবিতে কোনও কমিক্স-নায়কের দেখা মিলল।
Published By: Biswadip DeyPosted: 06:36 PM Dec 09, 2025Updated: 06:45 PM Dec 09, 2025

বিশ্বদীপ দে: কমিক্স ও সিনেমা। দুই ভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে আসা-যাওয়া চলতেই থাকে। মার্ভেল কমিক্স কিংবা ডিটেকটিভ কমিক্সের চরিত্রদের নিয়ে তৈরি দুই বিখ্যাত সিনে-ব্রহ্মাণ্ডের কথা কে না জানে! উদাহরণ আরও রয়েছে। টিনটিন থেকে হেলবয়, কমিক্সের নায়কেরা বারে বারে উঁকি দিয়েছে অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে। কিন্তু বাংলার কোনও কমিক্স-নায়ক এখনও পর্যন্ত আবির্ভূতই হয়নি ছায়াছবির দুনিয়ায়। বাঁটুল দি গ্রেট বা অন্য কাউকেই রক্তমাংসের চেহারায় দেখা যায়নি। এবার সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাপ্পা রায় সিনে-পর্দায় আবির্ভূত হয়ে কার্যতই ইতিহাস গড়লেন। কিন্তু জনপ্রিয় কমিক্সের ততোধিক জনপ্রিয় নায়ক কি রুপোলি পর্দায় নিজের ম্যাজিক অক্ষুণ্ণ রাখতে পারল?

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরের শো ছিল প্রায় হাউসফুল। যা প্রমাণ করে দেয় রাপ্পা রায়ের জনপ্রিয়তা কতটা। ছবির টাইটেল ক্রেডিটেও তার ক্যারিশমা মালুম হয়। এদিকে গ্রাফিক্সে ড্যানিয়েল ক্রেগের প্রথম জেমস বন্ড 'ক্যাসিনো রয়্যাল'-এর ছায়া। তবুও মানতেই হয়, সেটা বেশ জমজমাট। ছবির টাইটেল সংও যোগ্য সঙ্গত দেয়। সব মিলিয়ে ছবির শুরু বেশ জমজমাট। কিন্তু এই গতিটা ছবিজুড়ে বজায় থাকেনি। কোথাও একটু বেড়েছে। পরক্ষণেই তাতে যেন খানিক ভাটার টান। 'রাপ্পা রায় অ্যান্ড দ্য ফুলস্টপ ডট কম' ছবিটির প্রধান দুর্বলতা বোধহয় এটাই।

রাপ্পা রায় এক নির্ভীক তরুণ। পেশায় সে ইলাস্ট্রেটর হলেও মনের মধ্যে সাংবাদিকের অনুসন্ধিৎসা। অথচ 'দৈনিক জয়ধ্বজা'র সম্পাদক তাকে নিয়ে তিতিবিরক্ত। খামোখা প্রশাসন, ক্ষমতার তোয়াক্কা না করে কার্টুন আঁকার প্রয়োজনটা কোথায় তিনি বুঝতে পারেন না। আর তাই অবহেলায় রাপ্পার আঁকা কার্টুন তিনি ফেলে দেন ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে। রাপ্পা এতে দমে গেলেও হাল ছাড়ে না। এর মধ্যে তার সঙ্গে আলাপ হয় সুন্দরী অভিনেত্রী ডলফিন গাঙ্গুলির। পরপর হিট ছবি দিয়ে ডলফিন এখন রীতিমতো খ্যাতনামা। কিন্তু সেই খ্যাতির তোয়াক্কা না করেই রাপ্পার প্রশ্নবাণ বিদ্ধ করে নায়িকাকে। দু'জনের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এদিকে পরিচালক হিসেবে প্রথম ছবি করার সুযোগ পেয়েছে রাপ্পার বন্ধু টোনি ঘোষাল। আর রয়েছেন রাপ্পার বাবা। ছেলে এবং ছেলের বন্ধুর সঙ্গে তাঁর অম্লমধুর সংলাপ শুনতে ভালোই লাগে।

কিন্তু এর মধ্যেই শহরে ঘনিয়েছে এক ক্রাইম সিন্ডিকেটের কালো ছায়া। তারাই দ্য ফুলস্টপ ডট কম। ফুলস্টপ অর্থাৎ কাউকে একেবারে মেরে ফেলা। আবার সেমিকোলন মানে হাত-পা ভেঙে দেওয়া। সব রকম কাজেই বরাত পায় তারা। তবে নেহাতই সাধারণ সুপারিতে কাজ করা খুনে গুন্ডার দল নয় ফুলস্টপ ডট কম। ক্ষমতার খেলাতেও তারা প্রভাবশালী হতে পারে। ক্ষমতালিপ্সু মানুষদের অর্থের বিনিময়ে উত্তরণের সিঁড়িতেও তুলতে পারে এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট। দলের কর্মীদের নামগুলো বড় অদ্ভুত। কেউ টিক, কেউ টক, কেউ আবার চিলি। কারও নাম মোমো! দলের মালিকের একটা লোকদেখানো রেস্তরাঁও আছে। ক্রমে সেই দলটির সঙ্গে শুরু হয় রাপ্পার সংঘাত। জড়িয়ে পড়ে ডলফিনও। এভাবেই এগোয় গল্প। ছবির আরও এক খল চরিত্র লাল্টু মণ্ডল। সে চায় ভোটে দাঁড়াতে। কিন্তু টিকিট পেতে লাগবে অনেক অর্থ। যা জোগাড়ের ধূসর দায়িত্বে ফুলস্টপ ডট কম। 

ছবিতে বেশ কিছু অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে। রয়েছে মজার পাঞ্চলাইন। বিশেষ করে রাপ্পার বাবার চরিত্রে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় চমৎকার। বোধহয় সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ দেখায় তাঁকেই। কমিক্সে রাপ্পার বাবা ও টোনির মধ্যে মজার সংলাপ থাকে। এখানেও রয়েছে। সেগুলি তো বটেই, রাপ্পার সঙ্গে তাঁর দৃশ্যগুলিও সুন্দর। রজতাভ দত্ত বরাবরের মতোই মসৃণ। ফুলস্টপ ডট কমের মাথা হিসেবে তিনিও প্রধান ভিলেন। কিন্তু তাঁকে এত কম দৃশ্যে দেখানো হল কেন তা বোধগম্য নয়। লাল্টু মণ্ডলের চরিত্রে রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লোলুপ মন্ত্রীর ভূমিকায় সুজন মুখোপাধ্যায় দু'জনই নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। ভালো লাগে সৌরভ দাসকেও। দেবাশিস মণ্ডলও যথাযথ। রাপ্পার বস চান্দ্রেয়ী ঘোষের চরিত্রটির খুব বেশি কিছু করার ছিল না। কিন্তু তিনি যতটা পেরেছেন করেছেন। বরং নায়িকা হিসেবে অলিভিয়া সরকারের কাছে আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ডলফিন চরিত্রটি ততদূর জমল কই। এর পিছনে চিত্রনাট্যেরও হাত রয়েছে। রাপ্পার সঙ্গে রোম্যান্সের দৃশ্য কিংবা প্রেমের গান দেখানোর আদৌ দরকার ছিল কিনা প্রশ্ন ওঠে। টোনিকে বেশ লাগে। দেবাশিস রায়ের শরীরী ভাষা, সংলাপ উচ্চারণ বেশ ভালো। 

এবার আসা যাক রাপ্পা প্রসঙ্গে। ছবির নিউক্লিয়াস সে। সুদর্শন অর্পণ ঘোষালকে রাপ্পা হিসেবে মানিয়েছে বেশ। কিন্তু অভিনয়ে তিনি সর্বত্র সমান ভালো হতে পারেননি। মায়ের মৃত্যুদৃশ্যে আবেগ সেভাবে দেখা যায় না। অ্যাকশন দৃশ্যেও কোথা কোথাও খানিকটা জড়তা রয়েছে। ছবির একেবারে শেষে সিকোয়েলের ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। পরের ছবিতে তিনি আরও পরিণত হবেন, আশা করাই যায়।

রাপ্পা রায়ের আত্মপ্রকাশ ২০০৬ সালে। অর্থাৎ প্রায় দুই দশক আগে। এরপর যত সময় গিয়েছে ততই বেড়েছে তার জনপ্রিয়তা। স্বাভাবিক ভাবেই রুপোলি পর্দায় রাপ্পাকে দেখার আগ্রহ রয়েছে ফ্যানদের। এই প্রত্যাশার কথা পরিচালক নিশ্চয়ই জানতেন। চিত্রনাট্যের বাঁধুনির দিকে তাই খানিক নজর দেওয়া দরকার ছিল। তবে সব মিলিয়ে ছবিটি একবার দেখতে ভালোই লাগে। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে জনপ্রিয় হতে গেলে আরও হোমওয়ার্ক করতে হবে। সম্পাদনায় হতে হবে নির্মম। এমনটাই মনে হতে থাকে ছবির শেষে হল থেকে বেরনোর সময়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বাংলার কোনও কমিক্স-নায়ক এখনও পর্যন্ত আবির্ভূতই হয়নি ছায়াছবির দুনিয়ায়।
  • সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাপ্পা রায় সিনে-পর্দায় আবির্ভূত হয়ে কার্যতই ইতিহাস গড়লেন। কিন্তু জনপ্রিয় কমিক্সের ততোধিক জনপ্রিয় নায়ক রুপোলি পর্দায় নিজের ম্যাজিক অক্ষুণ্ণ রাখতে পারেনি পুরোপুরি।
  • ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে জনপ্রিয় হতে গেলে আরও হোমওয়ার্ক করতে হবে। সম্পাদনায় হতে হবে নির্মম।
Advertisement