shono
Advertisement
Karma Korma Review

যেমন ইন্টারেস্টিং রেসিপি, তেমন সুস্বাদু 'কর্মা কোর্মা', পড়ুন রিভিউ

কতটা জমল প্রতিম ডি গুপ্ত পরিচালিত প্রথম বাংলা সিরিজ?
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 01:53 PM Dec 12, 2025Updated: 05:15 PM Dec 12, 2025

শম্পালী মৌলিক: এই ওয়েব সিরিজের রেসিপিটা ইন্টারেস্টিং, ফলে কোর্মাটা অত্যন্ত স্বাদু খেতে। প্রতিম ডি গুপ্তর প্রথম বাংলা সিরিজ ‘কর্মা কোর্মা’ (Karma Korma Review) শুধুই প্রতিশোধের রেসিপি নয়। ভাবনায় অভিনব, এন্টারটেনিং এবং গতেবাঁধা থ্রিলারের চেয়ে আলাদা। কেন্দ্রে দুই নারী। গল্পটা যেমন চমকদার, প্রত্যেক অভিনেতার পারফরম্যান্সও তেমন বিশ্বাসযোগ্য। সাতটা এপিসোডের টান আছে, বসলে একবারে শেষ করতে হবে। প্রতিমের হিন্দি সিরিজের ‘টুথ পরি’ যখন দেখেছিলাম, বেশ ভালো লেগেছিল। মনেই হয়েছিল তিনি পরবর্তীকালে বাংলা সিরিজ বানালে মন্দ হবে না। রান্না এবং খাওয়াদাওয়ার প্রতি প্রতিমের ভালোবাসা স্পষ্ট কমবেশি তাঁর প্রত্যেকটা কাজে। এই সিরিজও তার ব্যতিক্রম নয়। আর অবশ্যই নারী-পুরুষের মনের দিকে আলো ফেলার সহজাত দক্ষতা তাঁর আছে।

Advertisement

‘হইচই’-এর পর্দায় দেখা যাচ্ছে ‘কর্মা কোর্মা’। গল্পটা শুরু হয় রান্নার কর্মশালায় দুই নারীর দেখা হওয়া থেকে। দু’জনের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সাহানা (ঋতাভরী চক্রবর্তী) কেতাদুরস্ত, সচ্ছল পরিবার থেকে আসা সোশালাইট। অন্যদিকে ঝিনুক (সোহিনী সরকার) সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়ির বউ, ডাবিং আর্টিস্ট হিসেবে রোজগার করে দিন চালায়। সাহানা অবস্থাপন্ন পরিবারের হওয়া সত্ত্বেও স্বামীর কাছে অবহেলিত। নিঃসন্তান, একাকীত্বে বন্দি বলা চলে। আর ঝিনুক নেশাসক্ত বরের অত্যাচার সহ্য করে নিত্যদিন। আর বুঝতে পারে ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্নটা ক্রমশ নিভে যাচ্ছে। দুই মহিলার অবস্থান মিলে যায়, দু’জনেই সাংসারিক শান্তি থেকে বঞ্চিত। একদিকে ঝিনুকের বর গোপাল (প্রতীক দত্ত) নিষ্কর্মা। আর সাহানার ডাক্তার বর অর্জুন (শতাফ ফিগার) সুপার বিজি। অতএব দুই নারীর কাছাকাছি আসতে সময় লাগে না। একজন বলে, ‘খাঁচা যত বড় তার থেকে পালানো তত কঠিন।’ অন্যজন মজার ছলে বলে ফেলে, ‘আমার বরকে তুমি মেরে দাও আর তোমার বরকে আমি!’ ব্যস, রান্নাঘরের চার দেওয়াল থেকে খেলা ঘুরে যায় স্ট্রেট গ্যালারিতে। পুলিশ-টুলিশ এসে পড়ে, কারণ গোপালের মৃতদেহ রাস্তায় পাওয়া যায়! তা হলে কি দুজনে মিলে খুনটা করল? মুচিপাড়া থানার পুলিশ (ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং দুর্বার শর্মা) তদন্তে নামে। অপরাধী কে? পর্বগুলোর চলন খুনের সন্ধানে হলেও, মাপ মতো কমেডি মিশ্রিত, ফলে কখনও একঘেয়ে লাগে না। দুই নারীর জীবন, অবস্থান, এবং অসহায়তার ছবিটা ঠিকঠাক ধরেছেন পরিচালক। কল্পদৃশ্যগুলোও খাপছাড়া লাগে না। হালকা মেজাজের কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশের চরিত্র নির্মাণ আকর্ষণীয়। ইললিগাল সারোগেসির মতো বিষয়ও উঠে এসেছে সিরিজে। অনেক কিছুই অবাস্তব, তবু ভালো লাগে দুই নারীর অন্তরের ভয়, অনিশ্চয়তা এবং সাহসের সুনামি দেখতে। অন্তিম পর্ব অবধি কে ভিক্টিম, আর কে খুনি? জানার কৌতূহল জিইয়ে রাখতে পেরেছেন পরিচালক।

ঋতাভরীর অভিনয় অনেকদিন পরে এত রিয়্যাল লাগল। ধূসর ‘সাহানা’য় এফর্টলেস তিনি। শুধু বৃষ্টির মধ্যে তার চোখে কালো চশমা কেন! সোহিনী সরকার এক্কেবারে রক্তমাংসের ‘ঝিনুক’ হয়ে উঠেছেন। পুলিশ ‘ভূপেন’-এর চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী তাঁর কৌতূহল, বিরক্তি, সারকাজম সব নিয়ে নতুন মানুষ হয়ে উঠেছেন। ভালো লাগল দুর্বার শর্মাকে। কল্পন মিত্রও ‘নীলে’র চরিত্রে একদম ঠিকঠাক। ভূপেনের মায়ের ভূমিকায় স্বরূপা ঘোষ, আর তাঁর চরিত্রে প্রাণ দিয়েছে স্বয়ং পরিচালকের কণ্ঠস্বর। ক্যামিও চরিত্রে সারপ্রাইজ অনিরুদ্ধ চাকলাদার। মনে থাকবে প্রতীকের সংলাপ- ‘আমি আপনাকে ভিউ করব। আর আপনি আমাকে ভিউ করবেন।’ পুরো সিরিজের সংলাপই বড্ড ভালো। আর একটা উল্লেখ না করলেই নয়। একদম শেষে ডাবিং স্টুডিওর ছেলেটিকে যখন ঝিনুকে জিজ্ঞেস করে– 'কফি খাওয়ার অফারটা কি লিমিটেড টাইমের ছিল?' দুরন্ত! প্রসেনজিৎ চৌধুরির সিনেমাটোগ্রাফি এবং আলোর গুণে সিরিজ দেখতে সুন্দর লাগে আগাগোড়া। প্রতিম বেশ যত্ন নিয়ে বানিয়েছেন এ সিরিজ, না দেখলে কিন্তু মিস!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ভাবনায় অভিনব, এন্টারটেনিং এবং গতেবাঁধা থ্রিলারের চেয়ে আলাদা। কেন্দ্রে দুই নারী।
  • ‘কর্মা কোর্মা’ ওয়েব সিরিজের রেসিপিটা ইন্টারেস্টিং, ফলে কোর্মাটা অত্যন্ত স্বাদু খেতে।
  • সাতটা এপিসোডের টান আছে, বসলে একবারে শেষ করতে হবে।
Advertisement