রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়: কোয়েলকে আমার ভাল্লাগে। যাঃ বাবা! কেন? সেটাই তো আসল কথা। ভেবেচিন্তে, গহনে ছিপ ফেলে, গাঁথতে পেরেছি সত্যিটা। কোয়েল আবেগহীন, ন্যাকামিবর্জিত, স্ট্যান্ডঅফিস্। তার এই স্ট্যান্ডঅফিস্নেস চিৎকার করে না। কোয়েল আলতো আলাদা টালিগঞ্জের অন্যান্য নায়িকাদের থেকে। প্রশ্নাতীত পার্থক্যে প্রজ্জ্বল। কোয়েলের নামে কোহলের ‘কো’ আর সমারসেট মম্-এর ‘কেকস্ অ্যান্ড এল্’-এর ‘এল’, যা আমার জিভে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানীয়র একটি, ‘ale’ তো প্রাণ এবং উৎসবের প্রতীক। কোয়েল স্ক্রিনে এলে কেমন যেন ছড়িয়ে পড়ে উৎসব। অরিন্দম শীল সেটা জানেন।
‘মিতিন- একটি খুনির সন্ধানে’ (Mitin: Ekti Khunir Sandhaney Review) ছবির পরিচালক অরিন্দম কোয়েলকে নিয়ে তাঁর তৃতীয় ছবি তো শুরুই করলেন একটির পর একটি দৃশ্যে তার আবেদন, শৌর্য, সৌন্দর্য, শক্তি, সাহস এবং দুর্গতিনাশক দুর্গাদ্যুতি প্রকাশ করে। সেখানেই তো ছবি দাঁড়িয়ে গেল বাঙালির ভালোবাসায়, আবেগে, আনন্দে। ছবিটাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সুচিত্রা ভট্টাচার্যর ‘মিতিন’ কাহিনি ‘মেঘের পরে মেঘ’ অবলম্বনে যদিও তৈরি এই ছবি, পদ্মনাভ দাশগুপ্তের চিত্রনাট্য, সংলাপ, দৃশ্যভাবনা অসামান্য গতি এনেছে এই ছবিতে। এবং নিশ্বাস বন্ধ করে দেখতে বাধ্য হয়েছি। তাছাড়া, অরিন্দম কি সত্যিই চেনেন সব বাঙালি সুন্দরীকে? সুন্দরীদের পাড়ভাঙা ভিড় দৃশ্যের পর দৃশ্যে! এবং তরুণী-শরীরে পোশাকের হ্রস্বতা এবং পা এবং উরুর চিকন লাস্য : রহস্যের সঙ্গে এই মশলা-মিশ্রণ ডেডলি। লেখা চ্যাটার্জির থেকে তো চোখ ফেরানো যায় না। সাহেব চট্টোপাধ্যায়কে ঈর্ষা হয়। ছবিটা দেখুন। বুঝবেন, কেন বলছি।
আরও একটা কথা, সাহেবের অভিনয় অসামান্য। আলাদা করে প্রশংসা করছি রোশনি ভট্টাচার্য এবং গৌরব চক্রবর্তীকে। দারুণ। সেই সঙ্গে ছবিটাকে সত্যি উতরে দিতে উজাড় করে দিয়েছেন নিজেদের অরিজিৎ গুহ (সাহেবের বাবার ভূমিকায়), অনসূয়া মজুমদার (সাহেবের মা), এবং 'হাইলি সাসপিশাস' দুলাল লাহিড়ী (সাহেবের অফিসের কর্মী)। কিন্তু যেহেতু ডিটেকটিভ ছবি, যে-ছবির শেষ পর্যন্ত বোঝা যায় না, খুনটা করল কে? এবং কেন খুন? তাই গল্পটা একটুও বলছি না। অ্যাকশন শুরু ছবির প্রথম দৃশ্য থেকে। এবং উৎকণ্ঠার অবসান একেবারে শেষে। এই ডিটেকটিভ ছবিতে গানের ভূমিকা যতটা, ততটাই গোপন এবং অবৈধ যৌন সম্পর্কের সমাহার। পুরো পরিবারটার জিনের মধ্যেই যে স্বেচ্ছাচার আর সেক্সাচারের বংশানুক্রমিক বহতা। বুঝতে পারছেন তো, গল্পটা কিন্তু পাপের। শীতকালেও গরম!
একজনের অভিনয়ের কথা এখনও বলিনি। তিনি কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চিরদিনই দুর্ধর্ষ অভিনেত্রী। অরিন্দমকে বলতে ইচ্ছে করছে, রাইট চয়েস বেবি! তবে আর একটিও শব্দ নয় তাঁর বিষয়ে। ছবিটা দেখতে হবেই, জানতে গেলে। বরং শেষে বলি খুব জরুরি একটা কথা, এ-ছবির একটা মারাত্মক টান রূপম ইসলাম, শিল্পা রাও, অরুণিতা কাঞ্জিলালের গান। মাতিয়ে দিয়েছেন সেক্স অ্যাপিল মিশিয়ে। সারা ছবি জুড়ে চুঁইয়ে পড়ছে শরীরের ডাক আর উড়ছে গানের সুরে চুমুর চমক। কিন্তু শেষে বলি, সব কিছু ছাপিয়ে অনন্য কোয়েল। ছবির কেন্দ্রে সে-ই তো হিরণ্ময়ী দুর্বার দুর্গা! ছবিটা তার চালচিত্র।
