Abhijaan Review: ছবিতে উঠে এল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অজানা গল্প, কেমন হল পরমব্রতর ‘অভিযান’?

05:01 PM Apr 15, 2022 |
Advertisement

This browser does not support the video element.

নির্মল ধর: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বাঙালির, বঙ্গ সংস্কৃতির এক আইকন। এমন বহুমুখী প্রতিভা এবং রঙিন ব্যক্তিত্ব বাংলায় বিরল। তাঁর পরিচয় আর নতুন করে দেওয়ার নয়। তাঁর নামটির উল্লেখই যথেষ্ট।
সেই অমর সৌমিত্রকে নিয়ে বায়োপিক করছে এই প্রজন্মের তরুণ পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। খবরটা জেনেই আশা জেগেছিল নিশ্চয়ই অন্যরকম কোনও ছবি দেখা যাবে। হ্যাঁ, সেই আশা পূর্ণ করেছেন পরমব্রত এবং এটাও বলতে হবে সৌমিত্র নিজে পরমের ক্যামেরার সামনে নিজেকে প্রায় অকপটে মেলেও ধরেছেন। এতদিনকার অগুনতি সাক্ষাৎকারে যেসব কথা বলেননি, তা বললেন এই ছবিতে। তাঁর নাটকের প্রতি তীব্র প্রেম, সিনেমাকে পেশা হিসেবে নিয়ে “স্টারডমে” পৌঁছেও নিজেকে নিজের শর্তে সাধারণ মানুষের মতো যাপিত জীবন কাহিনির বিস্তৃত বিবরন ছবিতে ছড়ানো! পরমের ক্যামেরার সামনে সৌমিত্র কত সাবলীল, কত আন্তরিক, কত স্পষ্ট, অথচ কত নিস্পৃহ সেটা বোঝা যায়। তিনি যে “নায়ক” হয়েও “তারকা” হয়ে উঠতে চাননি, কেন চাননি, সেটাও সুন্দর যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই বামপন্থার প্রতি তিনি দুর্বল, রাজনীতি তিনি ভালই বোঝেন, কিন্তু রাজনীতি করাটা তাঁর কাজ নয়, কেন নয় সেটাও বলেছেন তিনি। সিনেমার গ্ল্যামার তাঁর চিন্তাকে কোনওদিনই গ্রাস করতে পারেনি। সৌমিত্রর নিজের মুখে এই কথাগুলো শুনতে আম দর্শকের ভাল লাগতে বাধ্য। ছবির প্রধান গুণের কাঠামো। নাতি রণদীপ এর মোটরবাইক দুর্ঘটনা দিয়ে ছবির শুরু। সেখানে দেখতে পাই একজন আবেগপ্রবণ, সংবেদনশীল এক দাদুকে হাসপাতালে কেমন উৎকণ্ঠা নিয়ে উপস্থিত। একটু আগেই এই নাতি তাঁকে বলেছে “তোমার বায়োপিক হলে ছোট্টবেলাটা তো আমিই করব। আর কেউ নয়।” বাস্তব ঘটনা। সেখান থেকে কাট টু ইন্টারভিউ।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ক্রিকেটের প্রতি পবিত্র ভালবাসাই ‘কৌন প্রবীণ তাম্বে’র নায়ক, তাম্বের লড়াই মন জয় করল দর্শকের?]

এরপর, সৌমিত্র যা যা বলেছেন, তার নাটকীয় রূপ দেওয়া হয়েছে। খুব ভাল লাগে শিশির ভাদুরীর (দেবশঙ্কর) সঙ্গে প্রথম আলাপ, ‘প্রফুল্ল” নাটকে একসঙ্গে অভিনয়। শুধু এটাই নয়, এসেছেন সত্যজিৎ রায় (কিউ),উত্তমকুমার (প্রসেনজিৎ), অনুপকুমার (পদ্মনাভ), রবি ঘোষ(রুদ্রনীল), সুচিত্রা সেন (পাওলি), মাধবী (সোহিনী), জহর রায় (বিশ্বনাথ), ছবি বিশ্বাস (দুলাল লাহিড়ী), ওয়াহিদা(তুহিনা) এবং মুখ্য চরিত্রে যীশু সেনগুপ্ত তো রয়েইছেন! শুধু সৌমিত্রর জীবন বৃত্তান্ত নয়, ছবি জুড়ে রয়েছে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ছেঁড়া ছেঁড়া ইতিহাসও। চলচ্চিত্র সংরক্ষণ সমিতির আন্দোলন, সেই কারণে উত্তমকুমারের সঙ্গে তাঁর সাময়িক মন কষাকষি। এমনকী, বাদ যায়নি একাধিক সুন্দরী নায়িকাদের সঙ্গে সৌমিত্রর বন্ধুত্বের কথাও। খুব সুন্দর এবং শোভন ভঙ্গিতে তিনি শর্মিলা এবং সুচিত্রার সঙ্গে সখ্যতার কথাও শুনিয়েছেন। সাধারণ দর্শকের কাছে এগুলো একধরনের নতুন অভিজ্ঞতা তো বটেই। ফলে ছবির জনপ্রিয়তার গ্রাফ উর্দ্ধমুখী হতে বাধ্য। যদিও পরিচালক পরম খুব সাবধানী ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন। শুরু থেকেই তাঁর ভঙ্গিটি ছিল ছাত্রের মতো। সত্যজিতের একাধিক ছবির (অরণ্যের দিনরাত্রি, চারুলতা, অপুর সংসার, জলসাঘর,অভিযান), তপন সিংহের “ঝিন্দের বন্দী” ছবিতে উত্তম ও সৌমিত্রর ডুয়েল লড়াইয়ের দৃশ্যের অভিনয় এবং “সাতপাকে বাঁধা” ছবির সেই পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলার দৃশ্যের উপস্থাপনা পুরনো সময়টাকে মনে করিয়ে দেয়। ছবি শেষ হয় ফরাসি সরকারে দেওয়া ‘Legion of Honour’ সম্মান প্রাপ্তির অনুষ্ঠান দেখিয়ে।

Advertising
Advertising


সৌমিত্রর চরিত্রে যিশু সত্যিই আন্তরিকতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। মানানসই হয়ে ওঠার চাইতে বড় কথা হল সৌমিত্রর অন্তরের স্পিরিটটাকে তুলে ধরেছিলেন যিশু।  উত্তমকুমারের চরিত্রে প্রসেনজিৎ একেবারেই বেমানান, যদিও তিনিই এখনকার বাংলা সিনেমার ফাদার ফিগার। কিন্তু উত্তমকুমারের একান্ত নিজস্ব “অরা” কোথায়! আর অভিনয়! হ্যাঁ, সেখানে তাঁকে পাস নম্বর দিতেই হবে। প্রসেনজিৎ চেষ্টায় কোনও ফাঁক রাখেননি। পরম(সঞ্জয়) এবং অনির্বাণ (নীল) চরিত্র দুটির সম্পর্ক না দেখলেও কোনও ক্ষতি হত না ছবির। সঞ্জয় একাই যথেষ্ট! অনির্বাণ নিজের জায়গায় ভাল। তবে রণদীপের অসুস্থতায় ডাক্তার সঞ্জয়ের জড়িয়ে পড়াটা বাড়তি আবেদন তৈরি করে ছবির চলনে। স্ত্রী দীপা, ছেলে সৌগত এবং মেয়ে মিতিলের (সোহিনী সেনগুপ্ত) উপস্থিতিও একটা সুন্দর স্বাভাবিক পারিবারিক পরিমণ্ডল তৈরি করে দেয়। সত্যজিতের চরিত্রে কিউ তাঁর কণ্ঠস্বরে অনেকটাই সামলে দিয়েছেন। প্রকৃত অর্থে এই ছবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো রঙিন, ব্যপ্তিময় জীবনের এক উদযাপন বলতে যায়। এটা এক ধরনের ট্রিবিউট সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি আজকের প্রজন্মের। এখানেই “অভিযান” অন্য ছবি থেকে এগিয়ে থাকে।

[আরও পড়ুন: সত্যজিতের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র সঙ্গে ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’র মিল কতটা? পড়ুন রিভিউ]

This browser does not support the video element.

Advertisement
Next