চারুবাক: আধুনিক প্রযুক্তি যেমন মানুষের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়েছে, তেমনি আবার অজানা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুযোগও দিয়েছে। আজ আর ময়দানের ঘাসের গালিচায় বসে দুই বন্ধু বা প্রেমিক-প্রেমিকা এক ঠোঙা থেকে চিনে বাদাম খায় না। কিন্তু ভারচুয়াল জগতে এক ধরনের শূন্যতা ভরা বায়বীয় এবং সাময়িক ‘বন্ধুত্ব’ তৈরি হয়। শিলাদিত্য মৌলিকের নতুন ছবি ‘চিনে বাদাম’ (Cheene Badam) সেরকমই এক বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা, ভেঙে যাওয়া, আবার জোড়া লাগার কথাই বলে।
ছবি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। মুক্তির পাঁচদিন আগে অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত (Yash Dasgupta) সিনেমা ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। ঘটনার পরই সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিনেত্রী-প্রযোজক এনা সাহা (Ena Saha) এবং পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক (Shiladitya Moulik)। কী কারণে যশ এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, তা বুঝতে পারছেন না বলেই জানান এনা। সাংবাদিক বৈঠকে কেঁদে ফেলেন তিনি। ছবির চতুর্থ গান নিয়ে কিছু আপত্তি ছিল যশের, সেই কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে ধারণা পরিচালক শিলাদিত্যর। ছবির মুক্তির দিন আবার ‘চিনে বাদাম’ ছবির পরিচালক-প্রযোজকদের বিরুদ্ধে আইনি পথে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান যশ।
[আরও পড়ুন: এই প্রথম বাংলা সিনেমায় একক অভিনয়, কেমন হল রাহুলের ‘মৃত্যুপথযাত্রী’?]
এত বিতর্ক যে ছবি নিয়ে, তা কেমন হল? ছবির বড় সমস্যা হল চিত্রনাট্যের আগোছালোভাব। শহুরে তরুণ-তরুণীরা হয়তো বা আধুনিক কম্পিউটার এবং ট্যাব প্রযুক্তির ‘চিনে বাদাম’ অ্যাপের যথার্থ উপলব্ধি করতে পারবে। কিন্তু সবাই পারবে কি? ছবিতে যশের চরিত্র ঋষভ বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসে তৃষার (এনার চরিত্র) সঙ্গে ‘চিনে বাদাম’ নামের এক বন্ধুত্ব পাতানোর অ্যাপ তৈরি করে। প্রতিযোগী এক ব্যবসায়ী আবার ষড়যন্ত্র করে তার ব্যবসা নষ্ট করে দিতে চায়। তবে ঋষভ-তৃষার অ্যাপ বেশ জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু সাফল্যের দৌড়ে আচমকা বন্ধুত্বে চিড় ধরে। অ্যাপও কোর্টের নির্দেশে বন্ধ করে দিতে হয়। তারপর? তারপর নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। কিন্তু অনেক ঘটনারই যুক্তি পাওয়া যায় না।
যুক্তি, তর্ক, স্থান, কাল ও পরিবেশ সবকিছুকে অর্থহীন করে দিয়ে শিলাদিত্য মৌলিক বিয়ের লগ্নের সঠিক মুহূর্তে ‘চিনে বাদাম’ অ্যাপের মাধ্যমে ঋষভকে ফিরিয়ে আনেন তৃষার সামনে। কীভাবে এটা সম্ভব হল তার যুক্তি শিলাদিত্য নিজেও দিতে পারবেন না। যশ এখনও অভিনেতা হয়ে উঠতে পারেননি। অনেক অনুশীলনের প্রয়োজন। তুলনায় প্রযোজক তথা নায়িকা এনা সাহা (Ena Saha) অনেকটাই স্বচ্ছন্দ। কিন্তু পুরো ছবিতে তিনি আর সুযোগ পেলেন কোথায়? ছোট্ট চরিত্রে নজর কাড়েন সৌম্যদীপ দাশগুপ্ত। এছাড়া গল্পে কোনও প্রাণ নেই, আবেগ নেই। যেন আধুনিক কম্পিউটার, অ্যানড্রয়েড ফোনের মতো প্রযুক্তির একটা হৃদয়হীন শরীর মাত্র। ‘চিনে বাদামে’র স্বাদ সেই প্রযুক্তির খোলস ভেঙেই পাওয়া গেল না।
ছবি – চিনে বাদাম
অভিনয় – যশ দাশগুপ্ত, এনা সাহা
পরিচালনায় – শিলাদিত্য মৌলিক
[আরও পড়ুন: শার্পশুটার দিয়ে সলমন খানকে প্রাণে মারার চেষ্টা! প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য]
This browser does not support the video element.