ধীমান রায়, কাটোয়া: কমছে জলস্তর। তাই চাষের কাজে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য বারবার প্রশাসনিকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এই সংকটের সময় অল্প সেচে তৈল বীজচাষের পদ্ধতি বাতলে দৃষ্টান্ত গড়লেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের কৃষক আমিরুল হক শেখ। এই কৃতিত্বের জন্য কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র আয়োজিত রাজ্য তৈলবীজ কিষাণ মেলায় ওই কৃষককে জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষক সম্মানে ভূষিত করা হয়। কৃষি দপ্তরের আশা আমিরুলের কাজে উৎসাহিত হবেন কৃষকরা।
মন্তেশ্বরের ভাগড়া-মূলগ্রাম পঞ্চায়েতের তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল হক শেখ বরাবরই চাষের কাজে বেশ আগ্রহী। কিন্তু এই কাজে তার সব থেকে বড় বাধা ছিল চাষের কাজে ব্যবহার করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জল। আর তার জমির কাছাকাছি নেই কোনও সাব-মার্সিবল ও মিনি পাম্প। জমির কাছে থাকা নালা, খালের জল ও কয়েকশো ফুট দূরে পাইপ লাগিয়ে আনা জলই তার ভরসা। তাই অল্প জলের উপর ভরসা রেখে আধুনিক চাষের পদ্ধতিকে অবলম্বন করে উনত্রিশ বছর বয়সি আমিরুল। সরষে, মুসুর, তিল, সূর্যমুখী চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি তরমুজ, শশার মতো বিভিন্ন ফলচাষেও তিনি সফল হয়েছেন। আর তাই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় নিমপিঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র আয়োজিত রাজ্য তৈলবীজ কিষাণ মেলায় তার হাতে জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষক সম্মানের দরুণ শংসাপত্র ও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: নাসিকের মতো বাংলাতেও স্বল্প মূল্যে পিঁয়াজ সংরক্ষণের উদ্যোগ, গড়া হবে ৪০ টি কেন্দ্র]
এ বিষয়ে মন্তেশ্বরের কৃষি অধিকর্তা কণক দাস জানান, “মন্তেশ্বর ব্লকে ধান চাষটাই বেশি হয়। আর এটি সেমি ক্রিটিক্যাল ব্লক। তাই চাষের কাজে অযথা জল অপচয় রোধ করতে ও কৃষকদের তৈলবীজ, ডালশস্য ও রবিশস্যে চাষের জন্য আমরা উৎসাহিত করি। আর এর মধ্য থেকেই তাজপুরের আমিরুল অল্প জল ব্যবহার করে, স্প্রিংলার পদ্ধতি, পয়রা ক্রপিং, বায়ো মালচিংয়ের মাধ্যমে চাষের কাজে যে অভিনবত্ব দেখিয়েছে তা অসাধারণ। কারণ, গতবারের তুলনায় এইবার সে যেমন প্রচুর পরিমাণে তৈলবীজ উৎপাদন করেছে, তেমনই অন্যান্য কৃষকদের বীজ সংগ্রহ-সহ এই চাষের কাজে উৎসাহিত করেছেন। এই কারণেই তাকে রাজ্য তৈলবীজ কিষাণ মেলায় এই জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষক সম্মান দেওয়া হয়।”
জানা গিয়েছে, অন্যান্য জেলার সেরা কৃষকদেরও পুরষ্কৃত করা হয়। আমিরুল হক শেখ এর আগে ২০১৮-১৯ মন্তেশ্বর ব্লকে কৃষক রত্ন পুরষ্কার পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমার চাষের কাজে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পর্যাপ্ত পরিমাণ জল। কারণ জমির কাছাকাছি প্রায় দু-কিলোমিটারের মধ্যে কোনও সাব-মার্সিবল পাম্পও নেই। তাই খালের জলেই আমাকে চাষ করতে হয়। কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে আধুনিক সরঞ্জাম পাওয়ার পর অল্প জল লাগে এইরকম তৈলবীজ, ডালশস্য ও ফল চাষ করি। আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছি।”
The post কম জলে তৈলবীজ চাষে সাফল্য, শ্রেষ্ঠ কৃষকের সম্মান পেয়ে গর্বিত মন্তেশ্বরের আমিরুল appeared first on Sangbad Pratidin.