বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: একে বাজারে কাচা চা পাতা এবং তৈরি চায়ের দাম নেই। তার উপর সাম্প্রতিক বন্যায় ডুয়ার্সের ৪০টি বড় চা বাগান পুরোপুরি তছনছ হয়েছে। প্রায় ৯৫০ হেক্টর জমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যার জলে ধুয়ে গিয়েছে ৪০০ হেক্টর চা বাগানের জমি। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে কেমন করে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব? সেই চিন্তায় ঘাম ছুটেছে একাধিক চা বাগান কর্তৃপক্ষের।
সাম্প্রতিক হড়পা বানে আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার ৫০টিরও বেশি বড় চা বাগান বিধ্বস্ত হয়েছে। কোথাও বাগান পুরো ডুবে গিয়েছিল। এরপর কোথাও জল নেমে গেলেও পলিতে তলিয়েছে চা গাছ। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগানের সংখ্যা ৪০। প্রায় ৯৫০ হেক্টর জমির চা গাছ তছনছ হয়েছে। তার মধ্যে বন্যার জলে ধুয়ে ভেসেছে ৪০০ হেক্টর জমির চা বাগান। এখানেই শেষ নয়। একাধিক রাস্তা, কালভার্ট জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। বাগানে যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ টি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রাম অবতার শর্মা বলেন, "কেবল কালচিনির সুভাষিণী চা বাগানের ৯২ হেক্টর চা বাগান ডলোমাইটে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এখানে আর কিছু হবে না। মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে।"
চা বণিকসভাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষিণী ছাড়াও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চ্যাংমারি, বামনডাঙা টোন্ডু, দলসিংপাড়া চা বাগান। চা বাগান মালিক পুরণজিত বক্সী গুপ্ত বলেন, "ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগানগুলোর বেশিরভাগ ডলোমাইটের কাদায় তলিয়ে আছে। সেগুলো কতটা টিকে থাকবে বলা মুশকিল।" এদিকে যখন চা বাগান বন্যা বিধ্বস্ত তখন কাচা চা পাতা এবং তৈরি চায়েরও দাম মিলছে না। ১৬ টাকা থেকে ১৭ টাকা কেজি দামে কাচা চা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে চা চাষিরা। অথচ উৎপাদন খরচ ১৯ টাকা। চা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে সিটিসি এবং গুড়ো চায়ের সাপ্তাহিক নিলাম দাম ১৬৩.০৭ টাকা প্রতি কেজি চলছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন চা চাষি ও বটলিফ কারখানা কর্তৃপক্ষ। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, "ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চা শিল্প চলছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া সমস্যার সমাধান অসম্ভব।"
